সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
আদালতের নির্দেশও তোয়াক্কা করছে না সোনারগাঁও থানা পুলিশের ওসি কামরুজ্জামান। এফআইআর হিসেবে মামলা রুজ করতে আদালত নির্দেশ দিলেও কোর্টের আদেশের কপি সোনারগাঁও থানায় ওইদিনই পৌছায় এবং এর ৫দিন পেরিয়ে গেলেও এই রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত মামলা রুজু করেনি সোনারগাঁও থানা পুলিশ। আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টাতো দূরের কথা উল্টো ভুক্তভোগীরাও আসামীদের দ্বারা হুমকি ধমকির শিকার হচ্ছেন। বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানা পুলিশ। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের সার্বিক পর্যবেক্ষন না থাকায় সোনারগাঁও থানা পুলিশ যা ইচ্ছে তাই করছে। অথচ আইন শৃঙ্খলা অবনতি দিনকে দিন বেড়েই যাচ্ছে সোনারগাঁয়ে।
জানাগেছে, প্রবাস ফেরত শফিকুল ইসলাম নামের এক নিরীহ ব্যক্তি সন্ত্রাসী হামলায় আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়লেও মামলা নেয়নি সোনারগাঁও থানা পুলিশের ওসি কামরুজ্জামান। ওসি নিজেকে গোপালগঞ্জের পরিচয় দিয়ে সোনারগাঁও থানায় দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই তিনি কাউকেই তোয়াক্কা করছেন না। পরে এফআইআর হিসেবে মামলা রুজু করতে সোনারগাঁও থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের একটি আদালত।
ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, গত ২৬ জুন উপজেলার বারদী ইউনিয়নের চান্দেরপাড়া এলাকায় হত্যার উদ্দেশ্যে শফিকুল ইসলামের উপর হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এ সময় তার কাছ থেকে স্বর্ণ ও অর্থ লুটে যায়। হামলায় আহতাবস্থায় উদ্ধার করে এলাকাবাসী সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হলে আহতের অবস্থা আরো গুরুত্বর হলে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় আহতের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা সোনারগাঁও থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন। সেই অভিযোগের প্রাথমিক তদন্তে যান সম্প্রতি সমালোচিত এসআই ইমরান। তদন্ত করেও মামলা নেয়নি সোনারগাঁও থানা পুলিশ। আহত শফিকুল ইসলামের শ্যালক নারায়ণগঞ্জ জেলা জজ কোর্টের একজন বিজ্ঞ আইনজীবী ঘটনার ৫ দিন সোনারগাঁও থানা পুলিশের পেছনে ঘুরলেও নানা আশ্বাস দিয়ে হয়রানি করতে থাকেন এসআই ইমরান ও ওসি কামরুজ্জামান। উল্টো একজন আইনজীবীকে হয়রানির শিকার হতে হয় সোনারগাঁও থানায়।
অবশেষে গত ১ জুলাই সোমবার নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৫নং আমলী আদালতে মামলা দায়ের করে এফআইআর প্রার্থনা করেন আহত শফিকুল ইসলামের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা। আদালত নথিপত্র পর্যালোচনা করে সন্তুষ্ট হয়ে সোনারগাঁও থানা পুলিশকে এফআইআর রুজু করার নির্দেশ প্রদান করেন। আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ মোহসীন মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রবিউল আমিন রনি সহ বিপুল সংখ্যক আইনজীবী শুনানিতে ছিলেন।
এদিকে সোনারগাঁও থানা পুলিশ এতটাই বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সনমান্দি ইউনিয়নের ইমানেরকান্দি এলাকার একটি নির্বাচনী মারামারির ঘটনায় একজন আইনজীবীকে মিথ্যাভাবে সর্বশেষ আসামী করে দেয় সোনারগাঁও থানা পুলিশের ওসি। হিংসাত্মক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ওসি কামরুজ্জামান আইনজীবীদের পরিবারের আত্মীয়স্বজনদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।
স্থানীয়রা বলছেন, এর আগের সোনারগাঁও থানার সাবেক ওসি মোরশেদ আলম ও এসআই সাধন বসাকের চেয়েও বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে বর্তমান পুলিশ। ওসি মোরশেদ ও এসআই সাধন বসাক বরখাস্ত হয়ে জেল খাটার পরে সোনারগাঁয়ের মানুষ স্বস্থিতে ছিলেন। কাক্ষিত সেবা কিছুদিন পেয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান ওসি আসার পর আবারো ওসি মোরশেদের আমলের মত হয়ে গেছে সোনারগাঁও পুলিশ। এখন যেনো আবারো সেই ওসি মোরশেদ আলম ও এসআই সাধন বসাকের আমলে ফিরে গেলো সোনারগাঁও থানা পুলিশ।
সেই ওসি মোরশেদ ও বসাসের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরকারী ও স্বাক্ষীদের হয়রানিও করেছিলেন এসআই ইমরান, যেখানে বর্তমান ওসি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। যা দেশের জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতেও প্রকাশিত হয়েছিল। গুরুত্বপূর্ণ মামলার সাক্ষীদের স্বাক্ষী হাজিরের তারিখের একদিন আগে থানায় নিয়ে সারারাত আটক রেখে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিলো। সোনারগাঁওয়ে একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অবৈধভাবে জমি দখল করতে গিয়ে যুবলীগ নেতাকে বাড়ি থেকে উঠিয়ে থানায় নিয়ে সারারাত নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আইনজীবি খন্দকার মাজেদুল ইসলাম সম্রাট গত ২ জুন রবিবার তথ্যটি জানিয়েছিলেন।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার চিলারবাগ এলাকার মকবুল হোসেনের ছেলে আনিসুর রহমান আলমগীর বাদী হয়ে জেলা ও দায়রা জজ নারায়গঞ্জ এ সোনারগাঁও থানার তৎকালীণ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোর্শেদ আলম ও সেকেন্ড অফিসার সাধন বসাকের বিরুদ্ধে একটি প্রতিষ্ঠানকে জোর করে অন্যের জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টায় ওসি মোর্শেদ ও সাধন বসাককে আসামী করে আদালতে একটি মামলা করেন। সেই মামলায় ৩ জুন আদালতে স্বাক্ষীদের হাজির সাক্ষ দেওয়ার তারিখ নির্ধারণ।
পুলিশী হয়রানী ও হুমকি থেকে বাচঁতে গত ১৯ মে বাদী আদালতে উপস্থিত হয়ে বাদী ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধান ও আসামী হয়েও সাবেক ওসি মোরশেদ আলম আদালতের প্রথম বেঞ্চে বসে থাকার বিষয় আদালতকে অবহিত করেন। আদালত সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য সোনারগাঁও থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। আদালতের সে নির্দেশকে পুঁজি করে সোনারগাঁও থানা পুলিশ স্বাক্ষী হাজিরের তারিখের একদিন আগে ২ জুন রবিবার বিকাল ৫টার দিকে সোনারগাঁও থানার এসআই ইমরান বাদী আনিসুর রহমান আলমগীর, স্বাক্ষী সৈয়দ বশিউর রহমান শামীম ও স্বাক্ষী জাহিদুল ইসলাম স্বপন’কে থানায় ডেকে নিয়ে সারারাত আটকে রেখে মানসিক নির্যাতন করে।
এর মাসিক খানিক আগেও এটিএন বাংঃলা নিউজের সাংবাদিক আলী আজগর ইমন সোনারগাঁও থানার ঘুষ দুর্নীতি নিয়ে সচিত্র সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন। যা নিয়ে ঘোটা জেলায় তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এসআই হাসিব সিকদার এক প্রতিবন্ধীর কাছেও জিডি করতে অর্থ ঘুষ দাবি করেছিলেন। ফাতেমা আক্তার নামের এক নারী তার বাক প্রতিবন্ধী স্বামীর বাসা থেকে দুইটা মোবাইল চুরি হলে জিডি করতে আসলে এসআই হাসিব সিকদার ঘুষ দাবি করেন এবং ফাতেমা আক্তারের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেন। এ নিয়ে এটিএন বাংলা নিউজের সাংবাদিক আলী আজগর ইমন সচিত্র সংবাদ প্রকাশ করেন।
এই থানায় শুধু এসআই ইমরানই নয়, এখানে এসআই হাসিব সিকদার, এসআই রাজু সহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠেছেন। ঘুষ ছাড়া জিডিও হয় না। মামলা করতে গেলেও ভিকটিমের পরিবার পুলিশকে দিতে হয় মোটা অংকের টাকা। মামলা হলেও আবার আসামী ধরানোর জন্য আসামীর বাড়িতে পুলিশ পাঠাতেও টাকা দিতে হয়। মোট কথা টাকা ছাড়া সোনারগাঁও থানা পুলিশের কেউই এক পা সামনে এগুয় না। অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারাও একই আচরণ করছেন নিরীহ ও সেবাপ্রার্থী মানুষের সাথে। শুধু তাই নয় সোনারগাঁও উপজেলা আওয়াীলীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বর্তমান ওসির কাজের সমন্বয় নেই। স্থানীয় আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদেরও গোনায় ধরছেন না বর্তমান ওসি।