সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মহানগর বিএনপির তৎকালীন যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান মুকুল। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর ১নং খেয়া ঘাট দখলে নেমেছেন বিএনপির সাবেক এই নেতা। এ নিয়ে কঠোর সমালোচনা শুরু হয়েছে। নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা বলছেন, একাধিকবার মুকুল বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন এবং মহানগর বিএনপির শীর্ষ পদেও ছিলেন।
বিগত প্রায় ১৭ বছর আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে প্রকাশ্যে সখ্যতা রেখে বিএনপির রাজনীতি করে আসলেও শেষ রক্ষা হয়নি তার। তাকে বহিষ্কার করা হয়। বন্দর উপজেলা পরিষদের গত নির্বাচনেও তিনি চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করে পরাজিত হোন। সেই মুকুল হটাত করে নিজেকে বিএনপি নেতা দাবি করে খেয়া ঘাট দখলে মেতে ওঠেছেন। যা নিয়ে নিন্দার ঝড় ওঠেছে।
ঘাটের আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে যে, গত জুলাই মাসে এই হাটের ইজারা পান মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনু। এর আগে দীর্ঘদিন যাবত এই ঘাটের পরিচালনায় ছিলেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও মহানগর বিএনপি নেতা দিদার খন্দকার। এর আগে এই ঘাটের ইজারা ছিল সাবেক এমপি একেএম সেলিম ওসমানের নামে। ফ্রি সার্ভিসের মাধ্যমে সেলিম ওসমান এই ঘাট পরিচালনা করে আসছিলেন।
ওই সময় থেকে দিদার খন্দকার ঘাটটি পরিচালনা করে আসছিলেন। কিন্তু ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সাজনু এই ঘাট পরিচালনা করতে আসছেন না। সম্প্রতি আতাউর রহমান মুুকুল দাবি করেছেন সাজনুর কাছ থেকে ঘাটের ইজারার পাওয়ার নিয়েছেন তিনি। কিন্তু তার আগেই দিদার খন্দকার বন্দর নগরবাসীর স্বার্থে ঘাটটি পরিচালনা করে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে কাজ করছেন।
এদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর সেন্ট্রাল খেয়া ঘাটে যাত্রী পারাপাড় ব্যবস্থা চালু হওয়ার কারনে সদর ও বন্দরবাসীর মাঝে কিছুটা সন্তোষ ফিরে এসেছে। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক মানুষ বন্দর ও সদর হয়ে সকাল থেকে গভীর রাত অবধি পুরোদমে নদী পাড় হোন।
একই সঙ্গে বন্দরের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী সদরে আসা যাওয়া করেন এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনায় আছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব খোলা না থাকলেও বিভিন্ন কোচিংগুলোতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছেন।
এসব কারনে অবশেষে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জ সেন্ট্রাল খেয়া ঘাটে ২টি ফ্রি ট্রলার সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এতে যাত্রীরা স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলছেন। ১৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এই সার্ভিসটি চালু করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে ১নং খেয়াঘাটে ফ্রি ট্রলার চালু করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুন্নী সরদারের নেতৃত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন ১নং খেয়াঘাটের পরিচালক দিদার খন্দকার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সানাউল কবির অনিয়, মাহমুদ হাসান রানা, মাসফিকুর রহমান জুনায়েদ, সোহান, তানহা আক্তার, নওরিন সরকার, আবির খাঁন, সালমা আক্তার তানিশা, মাহফুজুল ইসলাম ভূইয়া, সাজ্জাদ হোসেন, তনিমা শারমিন, খায়রুল ইসলাম প্রমুখ।
জানা গেছে, ছাত্ররা কয়েকদিন যাবৎ ঘাট কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে বন্দর ১নং খেয়াঘাটে ফ্রি ট্রলার চালুর ব্যবস্থা করে। ছাত্ররা উচ্ছাসের সাথে যাত্রীদের সঙ্গে শ্লোগানের মধ্য দিয়ে চারপাশে এই বার্তা জানান দেন। একইভাবে ছাত্ররা আরো জানায় সমাজের বৈষম্য দূরকরনে তারা ক্ষুদ্র পরিমান শক্তি নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে থাকবে।
পরবর্তীতে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সেন্ট্রাল খেয়া ঘাটের পাশে ফ্রি ট্রলারের পল্টুন দিয়ে যাত্রী পারাপার হচ্ছে। তবে ট্রলারে যাত্রী সংখ্যা অনেক কম। কারণ ফ্রি ট্রলার সার্ভিসের কথা অনেক যাত্রী জানেনা। ফ্রি সার্ভিসের কথা জানতে পেরে যাত্রীরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
ফ্রি ট্রলার সেবা পেয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন যাত্রী ওসমান মিয়া। তিনি বলেন, সব সময় এ ধরনের ফ্রি ট্রলার সেবা থাকুক আমরা সেটা চাই। এতে করে যাত্রীদের খুব সুবিধে হয়েছে। যাত্রী কলেজ শিক্ষার্থী তিশা মনি বলেন, এই সিস্টেম খুব ভালো হয়েছে। ফ্রি তে নদী পারাপার হতে পারছি, এটা খুব ভালো লাগছে।
এ বিষয়ে সেন্ট্রাল খেয়া ঘাটের দায়িত্বরত কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল ফ্রি ট্রলারের। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে দুটি ফ্রি ট্রলার সার্ভিস চালু করা হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে ১০টা এবং বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এই সার্ভিসের কার্যক্রম চলবে। এতে বন্দরবাসী খুব খুশি হয়েছে।
উল্লেখ্য, এই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক যাত্রী যাতায়াত করে। যাত্রী সেবার জন্য ৭টি ট্রলার সার্ভিস চালু রয়েছে। এর মধ্যে দুটি ফ্রি ট্রলার সার্ভিস ও ৫টি ভাড়ায় চালিত ট্রলার সার্ভিস রয়েছে। আর ট্রলার ঘাটে ভাড়া হিসেবে যাত্রীদের ২ টাকা গুণতে হয়। তবে ২০২০ সালের জুন মাসে এই ঘাটের ফ্রি ট্রলার সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়া হয়। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন বছর পর এই সেবা ফের চালু করা হয়েছে।