সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনে গত ১৯ জুলাই সোনারগাঁও উপজেলার কাঁচপুর এলাকায় ইব্রাহীম মিয়া নামের এক যুবক মারা যান। ওই ঘটনায় নিহতের বাবা আবু হানিফ মিয়া বাদী হয়ে সোনারগাঁয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২৮নং আসামী করা হয়েছে ডেমরা বিশ্ববিদ্যারয় কলেজের অধ্যক্ষ ড. নূরে আলমকে। নুরে আলম নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহআলম মুকুলের ভাই। মুকুলের আরেক ভাই জাহাঙ্গীর আলম সরাসরি আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
তবে মামলা দায়েরের পর ড. নূরে আলম সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছেন তিনি আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। তিনি বিএনপির পরিবারের সন্তান। তিনি বিএনপির রাজনীতি করেন। তাকে মামলায় জড়ানোর বিষয়ে আজহারুল ইসলাম মান্নানকে দোষারোপ করে বক্তব্য দেন।
তবে এমনটা দাবির পূর্বেই বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান সনমান্দি ইউনিয়নের একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, মুকুলের ৪ ভাই আওয়ামীলীগের রাজনীতি করে।
এমন পরিস্থিতিতে ড. নূরে আলম যে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে জড়িত এমনটা প্রমাণ দেখিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক খাইরুল ইসলাম সজীব।
২৬ আগস্ট সোমবার উপজেলা পরিষদের অডিটরিয়ামে বিএনপির এক প্রস্তুতিমুলক সভায় খাইরুল ইসলাম সজীব বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, এক ব্যক্তি গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছেন তিনি নাকি বিএনপির রাজনীতি করেন, তিনি নাকি আওয়ামীলীগের রাজনীতি করেন না। সজীব এমনটা বলে, তার হাতের মোবাইলে একটি ছবি উপস্থিত নেতাকর্মীদেরকে দেখান। ছবিতে দেখা যায় নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে গিত নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের নির্বাচনী ক্যাম্পে বসে আছেন নির্বাচনী প্রচারণাকালে। এ ছাড়াও নূরে আলমের সঙ্গে আওয়ামীলীগের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মকান্ডের ছবিও সোনারগাঁয়ের বিএনপির নেতাকর্মীরা ফেসবুকে প্রচার করছেন।
অন্যদিকে ওই অনুষষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নান নেতাকর্মীদের সতর্ক করে এবং সাবেক এমপি রেজাউল করিমকে ইঙ্গিত করে বলেন, এতদিন শুনলাম তিনি ঘাট থেকে ওঠতে পারে না, রাজনীতিই করবেন না, এখন আবার উকি দিচ্ছেন। তিনি রাজনীতি করুক আপত্তি নাই। কিন্তু আওয়ামীলীগের দালাল, জাতীয় পার্টির দালাল নিয়া যদি তিনি মাঠে নামেন তাহলে রেহাই নাই।
২৬ আগস্ট সোমবার বিকেলে সোনারগাঁও উপজেলা অডিটরিয়ামে উপজেলা বিএনপির এক প্রস্তুতিমুলক সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এসব কথা বলেন মান্নান।
বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন উপলক্ষে এই প্রস্তুতিমুলক সভাটির আয়োজন করা হয়। আগামী ১ সেপ্টেম্বর পৌরসভার আমিনপুর মাঠে বিশাল সমাবেশ হবে বলেও জানানো হয়।
সভায় হটাত উদয় হওয়া ব্যক্তিদের প্রসঙ্গে অন্যান্য বক্তারা বলেছেন, বিগত ১৭ বছর আজহারুল ইসলাম মান্নানের নেতৃত্বে দল সুসংগঠিত রয়েছে। বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা মামলা দিয়ে হয়রানী করেছেন। দীর্ঘ সময় গ্রেপ্তার আতঙ্কে বাড়ি ছাড়া ছিলেন। অনেক নেতাকর্মীরা সপ্তাহে ৫দিন হাজিরা দিতে গিয়ে আদালতের বারান্দায় ছিল। কাজ কর্ম ছিল না। অনেকের পরিবার অসহায় অবস্থায় দিনপাত করেছেন। সোনারগাঁও থানার মিথ্যা রাজিৈনতিক মামলায় কয়েক হাজার বিএনপির নেতাকর্মী জেল হাজতে ছিলেন। ওই সময়ে আজহারুল ইসলাম মান্নান প্রতিটি নেতাকর্মীর মামলার খরচসহ পরিবারের ভষণ পোষণ করেছেন। আওয়ামীলীগের সঙ্গে যারা আঁতাত করে চলেছেন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে ছেড়ে যাওয়ার পর তারাই আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য প্রকাশ্যে এসেছেন। তারা নাকি বিএনপির রাজনীতি করছেন। কোথায় ছিলেন তারা?
সোনারগাঁও পৌর বিএনপির সভাপতি মো.শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন, সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম টিটু, রফিকুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক নিজামউদ্দিন, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোতালেব হোসেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক খায়রুল ইসলাম সজিব, কাঁচপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সেলিম হক রুমী, সাধারণ সম্পাদক মোমেন খাঁন, মোগরাপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান, পিরোজপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মনিরুজ্জামান, বারদী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুর রহমান মুন্সি, নারায়ণগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক রুমা আক্তার, সাদিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান সরকার, পিরোজপুর ইউনিয়ন বিএনপি সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন মেম্বার, নোয়াগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক, বৈদ্যের বাজার ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন মেম্বার, সোনারগাঁও উপজেলা কৃষক দলের আহবায়ক ফজলুল হক ফজল প্রমুখ।
এসময় সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ও আহত ছাত্রদের জন্য দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।