পুলিশি চোখে সাখাওয়াত ছিল দাগী আসামী: সেই নির্মমতার অবসান! (বিভিন্ন সময়ে নির্যাতনের ছবি)

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

২০১৪ সালের ২৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের এক আইনজীবীসহ সাতজনকে অপহরণ করে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার জন্য দোষীদের শাস্তির দাবিতে হাইকোর্টে রিট করা, আন্দোলন করা ও বাদীপক্ষের আইনজীবী হিসেবে লড়াই করে দেশব্যাপী আলোচনায় আসেন সাখাওয়াত হোসেন খান। তার কঠোর ভুমিকায় দোষীদের শাস্তিও দেয় আদালত। যার ফলশ্রুতিতে তিনি ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক পেয়ে নিজ দলের প্রভাবশালী অনেক নেতার বিরোধিতার পরেও নৌকার বিপক্ষে লড়ে মেয়র পদে প্রথমবার নির্বাচন করে ৯৬ হাজার ভোট পান সাখাওয়াত।

কিন্তু ঘটনাচক্রে এর আগে ২০১৩ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি পদে দলের মনোনয়ন চেয়েও পাননি সাখাওয়াত হোসেন খান।  মাসদাইরে আইনজীবী ফোরামের সভা থেকে মনোনয়ন না পেয়ে অশ্রুসিক্ত চোখে বের হয়ে আসেন। পরে ওই নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভূঁইয়া ও আওয়ামীলীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপুকে পরাজিত করে নির্বাচিত হয়ে আইনজীবী সমিতিতে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। একইভাবে ২০০৯ সালে নারায়ণগঞ্জ শহর বিএনপির কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে চাইলেও তাকে সেই সুযোগ দেয়া হয়নি। হয়ে যান বিএনপির বিদ্রোহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক, তার সঙ্গে সেই বিদ্রোহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন আবু আল ইউসুফ খান টিপু।  যদিও আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের মাধ্যমে সাখাওয়াতের রাজনীতির চাকা ঘুরে যায়।

এদিকে ৫ আগস্ট ২০২৪ এর আগে সরকার বিরোধী আন্দোলনগুলোতে পুলিশের প্রথম টার্গেটে পরিনত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। যে কোনো অন্দোলন সংগ্রাম কর্মসূচিগুলোতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়ায় পুলিশ সবার আগে সাখাওয়াতকে হেনস্থা করতেন, গ্রেপ্তার করতেন। পুলিশি লাঠিচার্জে একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছেন তিনি। রাজপথে নাজেহাল হয়েছেন, রাজপথ থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন।

এরি মাঝে দলের ভেতর ও বাহিরের নানা ষড়যন্ত্র বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে রাজপথে সক্রিয় ভুমিকা রেখেছেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন সাত খুন মামলায় আলোচিত আইনজীবী ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাস খানিক আগে থেকেই আত্মগোপনে চলে যান। সেখান থেকে তিনি প্রতিটি কর্মসূচি পালন করেছেন। ব্যাপক আন্দোলন করে বিএনপির নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতার প্রমাণ দেন তিনি। এর আগে গত ২০২৩ সালের ২৯ জুলাই সিদ্ধিরগঞ্জে অবস্থান কমর্সূচি পালন করতে গিয়ে পুলিশের বেদম মারধরের শিকার হোন সাখাওয়াত হোসেন খান।

পুলিশের এলোপাতারি লাঠিচার্জে সাখাওয়াত মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাকে টেনে হেছড়ে পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। এতে তিনি মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হোন। ওইদিন নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাগর প্রধান ও নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এইচ এম আনোয়ার প্রধানসহ সাতজনকে আটক করা হয়।

এর আগে ২০২২ সালের ৩১শে আগস্ট বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর ১৫নং ওয়ার্ডের মন্ডলপাড়া এলাকায় ওয়ার্ড বিএনপির কর্মসূচি পালন করতে গেলে পুলিশের দ্বারা নাজেহালের শিকার হন সাখাওয়াত হোসেন খান। ওই সময়ে তিনি বক্তব্য রাখাকালীন সময়ে সদর থানা পুলিশের ওসি অশোভন আচরণ করে তার হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নেন এবং সাখাওয়াত হোসেন খানকে ধাক্কা দেন।

২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘন্টা ব্যাপী নারায়ণগঞ্জ মহানগরের ২নং রেল গেট এলাকায় কয়েক দফা পুলিশের সঙ্গে ইট পাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশ সাংবাদিক ও বিএনপির নেতাকর্মী সহ প্রায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। বিএনপির যুবদল কর্মী শাওন হাসপাতালে নেয়ার পর মৃত্যুবরণ করেন। এদিন সাখাওয়াত হোসেন খানকে পুলিশ লাঠিপেটা করেন এবং নেতাকর্মীদের কাছ থেকে তাকে টেনে হেছড়ে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে পুলিশ।

২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। কমিটিতে অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব হোন অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু। কমিটির নেতৃত্ব পাওয়ার পর দলের প্রতিটা কর্মসুচি রাজপথে পালন করেছেন সাখাওয়াত। শত বাধা বিপত্তি হামলা মামলা নির্যাতনেও দমে যাননি তিনি। এর আগে ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী বিএনপির সাবেক এমপি আবুল কালামকে সভাপতি ও এটিএম কামালকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়।

ওই কমিটিতে সাখাওয়াতকে রাখা না হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাকে সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে রাখা হয়। সভাপতি ও সেক্রেটারির নানা কর্মসূচি পালনে ব্যর্থতার কারনে একাই মহানগর বিএনপির কর্মসূচি পালন করে দলকে সচল রাখেন সাখাওয়াত। যে কারনে সাখাওয়াতকে দল থেকে বহিস্কারেরও প্রস্তুাব করা হয়েছিল। কিন্তু তবুও সাখাওয়াত দলের কমর্সসূচিগুলো নিজের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীদের নিয়ে পালন করতে থাকেন। যার ফলশ্রুতিতে সাখাওয়াতকে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক পদে দায়িত্ব দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। দায়িত্ব পেয়ে মহানগরীর প্রতিটা থানা উপজেলা ইউনিয়নগুলোর কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করতে সক্ষম হয়।

আইনজীবী সমিতির নির্বাচনগুলোতে বিএনপি প্যানেলের পক্ষে জোরালো ভূমিকা রাখতেন সাখাওয়াত হোসেন খান। গত ২০১৯ সালের ২৫ জানুয়ারি আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সাখাওয়াত হোসেন খানের একমাত্র স্কুল পড়ুয়া ছেলেকে চাষাড়া কোচিং সেন্টারের সামনে থেকে আটক করে নিয়ে যায় জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ওইদিন বিএনপির আইনজীবীরা অভিযোগ করেছিলেন ভোট গণনার সময় যাতে সাখাওয়াত না থাকতে পারে সেজন্য এই ঘটনা সরকারি দল ঘটিয়েছেন।

এর আগে একমাত্র ছেলে নিখোঁজের সংবাদে অসহায় শিশুর মত কোর্টপাড়ায় হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে কখনো এসপির কাছে, কখনো ডিসির কাছে এদিক সেদিক ছোটাছুটি করেন সাখাওয়াত। তার ছেলেকে ডিবি আটকের বিষয়টি স্বীকার করে তার ছেলেকে ওইদিন রাতেই ছেড়ে দেয় পুলিশ। তবে তার ছেলেকে পুলিশ বিয়ার দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিল।