কেন বিএনপি নেতা টিপুকে এই হত্যাচেষ্টা?

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

কাউকেই ছাড় দিচ্ছিলেন না অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু। হোক সে শীর্ষ সন্ত্রাসী, হোক সে চাঁদাবাজ, দখলবাজ, কিংবা শীর্ষ ভূমিদূস্য, হোক সে মাফিয়া, হোক নিজ দলের কোনো চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী দখলবাজ। কাউকেই ছাড় দিচ্ছিলেন না নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু। নিজ দলের নেতাকর্মীদেরও তিনি বারবার কঠোর হুশিয়ারী দিয়েছেন, যেনো তারা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে না জড়ান। জাতীয়পার্টিঘেষা ও আওয়ামীঘেষাদেরও ছাড় দেননি তিনি। হোক সেটা সভা সমাবেশ ফেসবুকে গণমাধ্যমে কিংবা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে। সর্বত্র তিনি অপরাধীদের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠের মাধ্যমে কঠোর ভুমিকা রাখেন। ছিচকে মাদক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে শীর্ষ সন্ত্রাস মাফিয়া কিংবা ভুমিদস্যূদের রুখে দিতে জোরালো ভুমিকা রাখতে শুরু করেন টিপু।

আর এতেই সর্ব অপরাধীমহলে টিপু সবার জন্য হয়ে ওঠেন বিরাট বাধা। এসব কারনে অপরাধীদের চক্ষ্যুসূলে পরিনত হোন বিএনপির এই স্পষ্টভাষী নেতা। যে কারনে নিজ দলের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, এসব কারনেই টিপুকে হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছে। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই কয়েকদফা সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। তার উপর এমন হামলার ঘটনায় হতবাক হয়েছেন বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীরা মনে করেন টিপুকে বিএনপি থেকে সরাতে পারলে মহানগরীর নেতৃত্ব আবারো মুকুল আশাদের নিযন্ত্রণে চলে যাবে। সাখাওয়াত হোসেন খান একা কোণঠাসা হয়ে পড়বেন এবং এতে লাভবান হবে আওয়ামীলীগ জাতীয় পার্টির সঙ্গে আতাত করে যারা রাজনীতি করেছেন সেইসব ব্যক্তিরা।

স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর নারায়ণগঞ্জে শেখ হাসিনা ও শামীম ওসমান সহ শীর্ষ রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। টিপুও বিভিন্ন কর্মসূচিতে কিংবা গণমাধ্যমে শেখ হাসিনা, শামীম ওসমান সহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনে হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় বক্তব্য রাখতে থাকেন। একই সঙ্গে যারা নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারর, আওয়ামীলীগ কিংবা জাতীয়পার্টির মঞ্চে ওঠে রাজনীতি করেছিলেন এবং বিএনপির উপর অত্যাচার চালিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় বক্তব্য রাখেন। মুলত বহিষ্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুল, হান্নান সরকার, সুলতান আহমেদ ভুঁইয়া, আবুল কাউসার আশা সহ যারা বিগত সময়ে শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের মঞ্চে বসে রাজনীতি করেছেন, সরকারের সুবিধা নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ভাষায় কথা বলেন টিপু।

একই সঙ্গে হাট ঘাট ঝুট সন্ত্রাসী দখলবাজি চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধেও কথা বলেন টিপু। এ থেকে ছাড় দেননি তিনি জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানকেও। মিডিয়াতে তিনি বলেছিলেন শুনেছি জাকির খান জেলে বসে চাঁদাবাজি করছেন। বিসিকের ঝুট সন্তাসীদের বিরুদ্ধেও কথা বলন টিপু। আমলাপাড়ায় চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও মাদকবিরোধী সমাবেশে বক্তব্য দেন টিপু। এ ছাড়াও সর্বখানে টিপু চাঁদাবাজ দখলবাজ ঝুট সন্ত্রাসী মাদক ব্যবসায়ী, সরকারি দলের সঙ্গে আতাতকারী, সুবিবাভোগীদের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় প্রতিবাদ করে আসছেন। এরি মাঝে আমলাপাড়ার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা উল্টো টিপুর পদত্যাগ দাবিতে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিলও করেছিল। ৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেলে একই পন্থায় বন্দর ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে চাঁদাবাজ, দখলবাজ মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আয়োজিত সমাবেশে যোগদানে যাওয়ার পথে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হোন এই টিপু। তাকে কয়েক দফায় সন্ত্রাসীরা অস্ত্রে সজ্জে সজ্জিত হয়ে তার উপর হামলা চালায় এবং একটি বাড়িতে আশ্রয় নিলেও সেখানেও তাকে অবরুদ্ধ করে হামলা চালানো হয়।

ঘটনা সূত্রে, অভিযোগ আছে গত সাড়ে ১৫টি বছর স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টির মঞ্চে ওঠে রাজনীতি করেছেন আতাউর রহমান মুকুল। প্রকাশ্যে ধানের শীষের বিরোধীতা করে লাঙ্গলের পক্ষে কাজ করেছেন। শেষতক তাকে দল থেকে বহিস্কারও করেছিল। তারই ভাতিজা আবুল কাউসার আশা নাসিকের ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে আওয়ামীলীগের নেত্রী সেলিনা হায়াত আইভীর পা ছুয়ে সালাম করে ফুল দিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান। এ ছাড়াও তৎকালীন এমপি সেলিম ওসমানের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে একাধিকবার মঞ্চে ওঠেছেন আশা। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই সেই আশার কাছে আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টিঘেষা কথিত বিএনপির নামধারীই হয়ে ওঠবেন বিশ্বস্ত কর্মী। সন্ত্রাসী খান মাসুদ ও দুলাল প্রধানের এক সময়কার দুর্ধর্ষ হাতিয়ার শাহিন আহমেদ সৌরভই এখন আবুল কাউসার আশার কাছে বিএনপির সাচ্চা বিশ্বস্ত কর্মী।

৭ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ নগরীতে শোডাউন করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে টিপুর উপর হামলাকারী সৌরভের পক্ষে আশার সাফাই গাওয়ার বিষয়ে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা উপরোক্ত কথাগুলো বলেন এবং আশার ভুমিকা নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন। কারন একদিন আগে যারা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপুর উপর হামলা করেছিল সেইসব হামলাকারীদের দেখা গেলো আশার শোডাউনে।

বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক, নাসিকের সাবেক কাউন্সিলর সাইফুদ্দীন মাহামুদ দুলাল প্রধান ও বন্দর উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খান মাসুদের বাহিনীর অন্যতম হাতিয়ার হয়ে ওঠেছিলেন শাহিন আহমেদ সৌরভ। দুলাল প্রধান ও খান মাসুদের সঙ্গে বন্দরের বিভিন্ন সেক্টর নিয়ন্ত্রণে সৌরভ ও নুর হোসেন ভুমিকা রাখেন। এক সময় বিএনপির কর্মী হিসেবে পরিচিত থাকলেও গেল প্রায় ১০বছর যাবত সৌরভ আওয়ামীলীগের হয়ে বন্দরে ত্রাস সৃষ্টি করে আসছিল। ছাত্র জনতা আন্দোলনের সময়ও সৌরভ খান মাসুদ ও দুলাল প্রধানের হয়ে কাজ করেছেন এবং আন্দোলন দমানোর জন্যসন্ত্রাসী করেছেন। সেই কারনেই শাহিন আহমেদ সৌরভ ছাত্র হত্যা মামলার আসামীও হয়েছেন।

৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেলে বন্দর ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজিত সন্ত্রাসী চাঁদাবাজী দখলবাজি রোধে এ সমাবেশে যোগদান করতে যাওয়ার পথে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুর উপর হত্যার উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী হামলা চালায় ওই খান মাসদ ও দুলাল প্রধানের সহযোগী শাহিন আহমেদ সৌরভ, রাজিব, নুর হোসেনের নেতৃত্বে। টিপুর উপর এই সন্ত্রাসী হামলায় সৌরভ, রাজিব, নূর হোসেন ছাড়াও আরো ছিল সৈয়ম, শিশু, রবিন, ডিপ্টি, রহমান, বাপ্পী, রিফাত, রাজু, শাহাদাত হোসেন, হেবফিজুল্লাহ, রাকিব, সানি, জুয়েল,বশির আহমেদ আকাশ, জুয়েল, মামুন, মোস্তাক, টুটুল, তন্ময় সহ অর্ধ সন্ত্রাসী। টিপুকে মারাত্মকভাবে মারধর করে গুরুত্বর জখম করে। মাটিতে লুটিয়ে পড়লেও তাকে বেদরকভাবে কয়েক দফা বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। টিপুর সাথে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরাও পিটিয়ে জখম করা হয়।

অথচ একদিন পর ৭ সেপ্টেম্বর শনিবার সকাল ১১টায় নাররায়ণগঞ্জ নগরীতে ওইসব সন্ত্রাসীদের নিয়ে শোডাউন করেছেন মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশা। শোডাউন শেষে তিনি সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শাহিন আহমেদ সৌরভকে বিএনপির নির্যাতিত কর্মী দাবি করেন এবং উল্টো টিপুকে শাসিয়ে বক্তব্য রাখেন। শোডাউনের ব্যানারেও টিপুর ছবিকে বিকৃতভাবে ছাপানো হয়।

ভিন্নদিকে ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, বন্দর ইউনিয়নের বহু অপকর্মের হোতা নূর হোসেনও খান মাসুদ ও দুলাল প্রধানের ঘনিষ্ট সহচর হিসেবে ত্রাস সৃষ্টি করে আসছিলেন। এলাকার নিরীহ মানুষদের জমি দখল করে জোরপূর্বক বালু ভরাট, ড্রেজার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, মানবপাচার, মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়া, কিশোর গ্যাং লালন পালন করা সহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত নূর হোসেন। একই সঙ্গে বিগত সময়ে খান মাসুদ ও দুলাল প্রধানের হয়ে বিএনপি জামাতের নেতাকর্মীদের ‍উপর নির্যাতন চালায়। আন্দোলন সংগ্রাম আসলেই বিএনপি নেতাকর্মীদের নামের তালিকা নূর হোসেন থানায় জমা দিতো এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে হানা দিতো, পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দিতো।

সেই নূর হোসেনই কাউন্সিলর আশার কাধে ভর করে বিএনপির রাজনীতিতে ঢুকে যাচ্ছিল। নূর হোসেন বিএনপির ব্যানারে বন্দরে কর্মসূচি পালন করতে গেলে হামলা মামলা জেলজুলুমে নির্যাতিত নেতাকর্মীরা বাধা দেন এবং নূর হোসেনের কর্মসূচি বাতিল করে দেন। এর জন্য বন্দর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সম্রাট হাসান সুজনের উপর নানা বিষয়ে মিথ্যাচার করে দোষ চাপাতে থাকেন নূর হোসেন। খান মাসুদ ও দুলাল প্রধানের সহযোগী হওয়ায় মুলত নূর হোসেনকে বিএনপিতে মেনে নিতে পারছিল না সুজন। যে কারনে সুজনকে দমাতেই বিরাট সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সৃষ্টি করেছেন নূর হোসেন। সেই আশা ও মুকুলদের উপর ভর করে নূর হোসেন, শাহিন আহমেদ সৌরভ, রাজিবরা দলের ত্যাগী নির্যাতিত নেতা টিপুর ‍উপর সন্ত্রাসী হামলা চালায়।