নারায়ণগঞ্জে দুটি সন্ত্রাসী পরিবার, তারা আমাকে হত্যা করতে চেয়েছে: টিপু

সান নারায়ণগঞ্জ িটুয়েন্টিফোর ডটকম:

পলাতক সাবেক এমপি শামীম ওসমান ও বিএনপির সাবেক এমপি আবুল কালামের পরিবারকে ইঙ্গিত করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের দুটি সন্ত্রাসী পরিবার রয়েছে। নারায়ণগঞ্জকে লালন পালন করে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় এবং ব্যবসায়ীদেরকে জিম্মি করতে চায়, নারায়ণগঞ্জের ভিতরে দ্বিধা বিভক্তি তৈরি করতে চায়। তারা সেদিন হত্যার উদ্দেশ্যে আমাকে আক্রমণ করেছে। আমি আহত হয়ে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতাল থেকেও আপনাদের ভালবাসা ও শ্রদ্ধাবোধের টানে দায়িত্ববোধ থেকে আজকের এই অনুষ্ঠানের ছুটে এসেছি। ডাক্তার আমাকে নিষেধ করেছে তারপরও আমি ভেবেছি রাষ্ট্রের যেমন দায়িত্ব আছে তেমনি দলের প্রতি আমার দায়িত্ব থেকে কিন্তু সম্প্রাদায়ের ভাইদের পাশে দাঁড়ানো আমার নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে।

শারদীয় দুর্গোৎসব ২০২৪ সুন্দর ও সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে মতবিনিময় সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা গুলো বলেন। ১৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটায় নগরীর গলাচিপা শ্রী শ্রী রামকানাই জিউর মন্দির প্রাঙ্গণে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

তিনি আরো বলেন, আমি শুধু একটি কথাই বলতে চাই ১৯৭১ সালের পরে কারা হিন্দু সম্প্রদায় জায়গা সম্পত্তি দখল করেছে। আর কারা হিন্দু সম্প্রদায়কে দাবিয়ে রাখতে চেয়েছিল তা আপনারা একটু বিবেক দিয়ে চিন্তা করবেন। একটি কথা বলতে চাই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তার ১৯ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বলে গিয়েছিলেন ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবার স্বার্থ সংগ্রহ করতে হবে। আর আমরা বলতে চাই ধর্ম যার যার উৎসব ও রাষ্ট্র সবার। অতএব আপনারা নির্বিচারে দূর্গা উৎসব পালন করবেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও ইসলামে মূল্যবোধের শক্তিগুলো আপনাদের পাশে আছে এবং থাকবে। আমরা আমাদের রক্তের বিনিময় হল বাংলাদেশে কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগবে সেটা আমরা হতে দেবো না। গত পাঁচই আগস্ট নিহত ছাত্র-জনতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বলতে চাই আমরা যেমন আপনাদের উৎসবে পাহারা দিব ঠিক তেমনি আপনারও আমাদের উৎসবগুলোতে পাহারা। কারণ ৫ই আগস্ট এরপরে একটি গোষ্ঠী হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন মন্দিরে হামলা হবে বলে উস্কানি দিয়েছিল। কিন্তু বিএনপিসহ ইসলামিক দলগুলো আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আপনাদের মন্দির ও বাড়ি গুলো পাহারা দিয়েছি কোনরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

তিনি বলেন, এখন আবার ওই গোষ্ঠী মুসলমানদের ভিতরে দাঙ্গা লাগানোর জন্য মুসলমানদের বিভিন্ন মাজার ও দরবার শরীফে হামলা করছে। এগুলো কিন্তু পাহারার দায়িত্ব আপনাদেরও রয়েছে। আমরা যেমন আপনাদের পাশে আছি এবং থাকবো ঠিক একইভাবে আপনারও আমাদের পাশে থাকবেন। আমরা আপনাদের সাথে থেকেই প্রতিটি উৎসব সুন্দরভাবে পালন করতে চায় এবং সব ধরনের সহযোগিতা করতে চাই। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান মুসলমানদের ঐক্যের দেশ। বাংলাদেশ কোন ব্যক্তি ও গোষ্ঠী দেশ নয়। এদেশ বিশ কোটি মানুষের দেশ। একটি গোষ্ঠী চায় বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক নষ্ট হোক। আমরা ভারতের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করতে চাই না আমরা ভারতের সাথে বন্ধুত্বস্বরূপ সম্পর্ক রাখতে চাই। কিন্তু সেটা হলো সমবন্টন হারে। আমরা বন্ধুত্ব সম্পর্ক রাখতে চাই কোন প্রভু হিসাবে না।

তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জে কোন হিন্দু সম্প্রদায়ের উপরে আমরা ফুলের টোকাও রাগতে দিবো না। হিন্দু ভাইদের বাড়ি ও মন্দির আমরা দারোয়ানের মতন পাহারা দিব। আমরা চাই দুর্গা উৎসব থেকে শুরু করে যেকোনো উৎসব আপনারা নির্বিচারে পালন করবেন। আপনারা কোন গোষ্ঠী কথায় কান দিবেন না। আমরা চাই হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান সবাই মিলেমিশে একসাথে বসবাস করতে। এদেশ যেমন হিন্দুদের এদেশ তেমনি বৌদ্ধদের এদেশ তেমনি মুসলমানদের। নারায়ণগঞ্জ একটি অসম্প্রদায়িক জেলা। আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে চাই।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা শংকর কুমার দে’র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শিখণ সরকার শিপনের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু।

আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা প্রবীর কুমার সাহা, হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের সম্মানিত সাবেক ট্রাস্টি ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা পরিতোষ কান্তি সাহা, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ূন কবির, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এইচএম আনোয়ার প্রধান, মহানগর ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ, নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির সভাপতি মাসুদ রানা, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রদীপ কুমার দাস, মহানগরের সভাপতি লিটন চন্দ্র পাল, নারায়ণগঞ্জ মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিষ্ণুপদক সাহা, সাধারণ সম্পাদক সুশীল দাস, সহ-সভাপতি হিমাদ্রি সাহা হিমু, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ- সভাপতি তিলোত্তমা দাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল বিশ্বাস,সোনারগাঁ উপজেলার সভাপতি লোকনাথ দত্ত, সিদ্ধিরগঞ্জের সভাপতি শিশির ঘোষ অমর, সাধারণ সম্পাদক খোকন বর্মন, ফতুল্লা থানার সভাপতি প্রদীপ মন্ডল, রূপগঞ্জ উপজেলার সভাপতি গনেশ পাল, আড়াইহাজারে সভাপতি হারাধন চন্দ্র দেসহ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ।