শিক্ষকদের হাতে বেতের পিটুনি খেলেন যুবদল নেতা!

সান নারায়ণগঞ্জ টুন্টিফোর ডটকম:

প্রাক্তন শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকদের হাতে বেতের পিটুনি নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাগর প্রধান। তবে শিক্ষকবৃন্দ পিটুনি না দিতে চাইলেও সাগর প্রধান স্বেচ্ছায় নিজ হাতে পিটুনি গ্রহণ করেছেন। সেই পিটুনিতে তিনি যেনো অমৃত সুখ অনুভব করেছেন যা, তার হাসিতেই ফুটে ওই সময়।

নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন ৮নং ওয়ার্ডের তাঁতখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ৮ জন গুণী শিক্ষককে বিদায়ী সংবর্ধনা দিয়েছে অত্র বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী ও সচেতন যুব সমাজ। বর্ণাঢ্য আয়োজনে প্রাক্তন এই ৮জন শিক্ষককে বিদায়ী সংবর্ধনা দেয়া হয়।

১৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেলে অত্র বিদ্যালয়ের মাঠে ব্যাপক আয়োজনের মাধ্যমে সংবর্ধনা, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। সংবর্ধিত শিক্ষকরা হলেন-জয়নাল আবেদীন, আব্দুল আজিজ দেওয়ান, মোহর আলী, আব্দুস সোবহান, জালাল উদ্দীন, গীতা রানী দাস, রইস উদ্দীন আহমেদ ও শাহানারা আক্তার।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ৮ জন শিক্ষককে লাল গালিচার মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয় এবং মঞ্চস্থলে শিক্ষকদের ফুল ছিটানো পানি দিয়ে তাদের পা ধুয়ে তোয়ালে দিয়ে মুছে দেয় প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের ফুলের মালা ও ক্রেস্ট দিয়ে শিক্ষকদের বরণ করা হয়। এর আগে মঞ্চের সামনে সকল শিক্ষকদের হাতে বেত ‍তুলে দিয়ে শিক্ষকদের সামনে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা হাত পেতে দাঁড়িয়ে স্বেচ্ছায় বেতের পিটুনি গ্রহণ করেন। এ সময় ভিন্ন রকম আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।পরে আলোচনা সভা শেষে বিদ্যালয়ের প্রয়াত শিক্ষকদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া পালন করা হয়।

আলোচনা সভার প্রধান অতিথি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন বলেছেন, ১৯৭১ সালে সামনে থেকে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। ২০২৪ সালেও ৫৩ বছর পর কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ করে দেশ দ্বিতীয়বারের মত স্বাধীন করেছি।

সিদ্ধিরগঞ্জের এলাকার বিষয়ে গিয়াসউদ্দীন বলেন, এই এলাকায় সন্ত্রাসীদের গডফাদারের লোকজন ছিলো। এখন তারা পালিয়েছেন। কেন পালিয়েছে? কারন অপকর্ম করেছে। স,মাজের কিছু লোকজন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে চোর বাটপারদের সম্মানিত করতো। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে কালেকশনের নামে অর্থশালী লোকদের প্রধান অতিথি করে দাওয়াত করতো, এতে টাকা কালেকশন ভালো হতো, হোক সে চোর বাটপার কিংবা দুর্নীতিবাজ। এসব কারনে অপরাধীরা আরো বেশি লুটেরা হয়ে ওঠতো সম্মানিত হওয়ার জন্য। তরুণ সমাজও যখন দেখতো অর্থ সম্পদের মালিকদেরই সম্মানিত করা হচ্ছে, সে যত বড় খারাপই হোক, ঠিক তখনি তরুণ সমাজও অর্থের পেছনে খারাপ পথে পা বাড়িয়েছে। সুতরাং এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সঃ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, শিক্ষক, আলেমওলামা, ইমামদের সম্মানিত করতে হবে, যদি তিনি সৎ হোন।

এ বিষয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিভিন্ন সচেতন শ্রেণীর মানুষেরাই স্বৈরাচারী সরকারকে আরো বেশি স্বৈরাচারী হতে উস্কে দিতো, তা কেবল ব্যক্তিস্বার্থে, হোক সাংবাদিক, আইনজীবী, ডাক্তার, পুলিশ, বিচারবিভাগ কিংবা অন্যরা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাগর প্রধানের ব্যাপক প্রসংশা করে বলেন, এই ধরণের অনুষ্ঠান আমি কখনো দেখিনি। সাগর প্রধান রাজনীতিক হিসেবেই নয়, করোনাকালে মানুষ যখন কেউ কারো পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে আসেনি, একজন আরেকজনকে দেখতেও আসতোনা, ঠিক সেই সময় সাগর প্রধান ও তার অনুসারীদের নিয়ে টিম গঠন করে করোনায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল, এদিকে ফেনীতে হাজার হাজার মানুষ যখন বন্যাদূর্গত তখন সেইসব মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে সেখানে ছুটে গেছে, আজকে প্রাক্তন শিক্ষকদের লাল গালিচায় স্বাগত জানানো, শিক্ষকদের পা ধুয়ে দেয়া, ফুলের মালায় বরণ, সাল পড়িয়ে দেয়া, ক্রেস্ট দিয়ে সংবর্ধনা এবং যে শিক্ষকদের হাতে বেতের মার খেয়ে মানুষ হয়েছে সেই শিক্ষকদের হাতে বেতের মার খেয়ে অনুভুতি নেয়া, এসব শুধু ভালো মন মানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের দ্বারাই সম্ভব যা, সাগর প্রধান করে দেখিয়েছেন।

প্রধান আলোচক এসএম ওয়ালিউর রহমান আপেল বলেন, এই অনুষ্ঠান আরো অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু কেন হলোনা সেটা আপনারা জানেন। সাগর প্রধান শিক্ষকদের সম্মান করে জাতি গঠনে যাদের ভূমিকা সেইসব মানুষদের সম্মানিত করেছেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও কেন্দ্রীয় যুবদলের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য এসএম ওয়ালিউর রহমান আপেল। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন অত্র বিদ্যালয়ের সাবেক কৃতি শিক্ষার্থী, সচেতন যুব সমাজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাগর প্রধান।

প্রাক্তন ছাত্র আশফাক মোল্লার সঞ্চালনায় এতে আরো উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল চট্টগ্রামের বিচারক সাইদুর রহমান গাজী, সরকারের অতিরিক্ত সচিব মাসুদুর রহমান মোল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মাজেদুল ইসলাম, বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন স্বাধীন, ডিএইচ বাবুল, মহানগর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর আয়েশা আক্তার দিনা, মহানগর যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ অপু, সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, যুবদল নেতা আরমান হোসেন, তরিকুল ইসলাম, বন্দর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রাজু আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব, ধামগড় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাহিদ খন্দকার, জেলা জিয়া শিশু কিশোর সংগঠনের সাবেক সভাপতি কাজী সাজেদুল ইসলাম সাজু প্রমূখ।