সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির রাজনীতিতে গিয়াসবিরোধী শক্তিশালী বলয়

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির রাজনীতিও দুইভাগে বিভক্ত। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদব্দীন এবং অপর পক্ষের নেতৃত্বে আছেন জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহামুদ। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর সিদ্ধিরগঞ্জের সকল সেক্টরগুলো বিএনপির একটি অংশের লোকজনের নিয়ন্ত্রণে গেলেও সিদ্ধিরগঞ্জের পুরোপুরি রাজনীতি গিয়াসের নিয়ন্ত্রণে নাই। যেখানে মামুন মাহামুদের অনুগামী নেতাকর্মীরা দখলবাজি চাঁদাবাজি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে না থাকলেও রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন।

স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪(সিদ্ধিরগঞ্জ-ফতুল্লা) আসনে গিয়াসউদ্দীনের মনোনয়ন পাওয়াটা সহজ হচ্ছেনা। দুটি থানা এলাকাতে বেশকজন বিএনপি নেতা রয়েছেন জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের মত যোগ্যতাসম্পন্ন। যদিও সম্প্রতি গিয়াসউদ্দীন একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘জেলখানায় বসে সাত খুন মামলার প্রধান আসামী নূর হোসেন টাকা খরচ করছেন বিএনপির এক নেতার পেছনে। নূর হোসেনের টাকায় তিনি বিএনপির ধানের শীষ মনোনয়ন পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। সেই স্বপ্ন ভুলে যান।’ তবে গিয়াসউদ্দীন তার বক্তব্যে কারো নাম উল্লেখ করেননি।

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির এই কমিটির পূর্বে ঢাকায় অধ্যাপক মামুন মাহামুদের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালায় দূর্বৃত্তরা। সেদিন মামুন মাহামুদের পেটে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম করা হয়েছিল। এর আগে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সম্মেলনে হামলা চালিয়ে ভানচাল করেছিল বিএনপির একটি পক্ষ। তার কয়েকদিন পরেই জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করে দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি।

বলা যায় কমিটির নেতৃত্ব পাওয়ার পর বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হোন গিয়াসউদ্দীন। এর আগে তার হদিসও পাওয়া যায়নি বিএনপির রাজনীতিতে। তিনি জেলা বিএনপির দায়িত্ব পাওয়ার পর তার আমলের নিষ্ক্রিয় নেতাদের সক্রিয় করেছেন এবং রাজপথের নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে নিস্ক্রিয় নেতাদের হাতে থানা সহ বিভিন্ন ইউনিটের কমিটিগুলোতে দায়িত্বে বসিয়েছেন।

২০১৪ সালের নির্বাচনের পূর্বে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির আহ্বায়ক ছিলেন শিল্পপতি সফর আলী ভুঁইয়া ও সদস্য সচিব ছিলেন মামুন মাহামুদ। এর আগের কমিটিতে থানা বিএনপির সভাপতি ছিলেন আব্দুল হাই রাজু ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এমএ হালিম জুয়েল। এটা ছিল জোট সরকার আমলের কমিটি। রাজু এক সময় গিয়াসউদ্দীনের বলয়ে থাকলেও বর্তমানে তিনি গিয়াসের সাথে নেই। এর আগের কমিটিতে সভাপতি ছিলেন প্রয়াত নেতা কামাল হোসেন। গিয়াস নেতৃত্ব পাওয়ার পর মাজেদুল ইসলামকে সভাপতি ও কাউন্সিলর ইকবাল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক পদে বসান গিয়াস। রাজু এর আগের কমিটিতেও আহ্বায়ক ছিলেন।

২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে ছিলেন গিয়াসউদ্দীন। নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পান সফর আলী ভুঁইয়া। কিন্তু নির্বাচনের মাত্র ২১ দিন পূর্বে বিএনপিতে যোগদান করেন গিয়াস। পরে সফর আলীর মনোনয়ন বাতিল করে গিয়াসউদ্দীনকে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনিত করে বিএনপি। শামীম ওসমানকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হোন তিনি। সামনের নির্বাচনের পূর্বে মামুন মাহামুদ হতে পারে বিরাট ফ্যাক্টর। এ ছাড়াও নির্বাচন নাগাদ সময়ে সফর আলী ভুঁইয়াকেও রাজনীতির মাঠে দেখা যেতে পারে। তবে তিনি হয়তো মামুন মাহামুদের পক্ষ নিতে পারেন।

২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার সময় গিয়াস ছিলেন কারাগারে। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি বিএনপির রাজপথের রাজনীতিতে সক্রিয় হোননি। সর্বশেষ গত নির্বাচনের পূর্বে জেলা কমিটিতে তাকে নেতৃত্ব দেয়া হয়। এরি মাঝে বিগত সময়গুলোতে সিদ্ধিরগঞ্জের নেতাকর্মীদের আগলে রেখেছিলেন মামুন মাহামুদ। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন মনিরুল ইসলাম রবি। তিনি জেলা বিএনপিরও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হান। ২০২১ সালে তৈমূর আলমকে বহিষ্কার করা হলে রবিকে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয়। তিনিও গিয়াসবিরোধী।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব শাহআলম হীরাও আছেন মামুন মাাহমুদ বলয়ে। জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য রিয়াজুল ইসলাম মামুন মাহামুদের বলয়ে।থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন রাজনীতি করছেন মামুন বলয়ে। মহানগর ছাত্রদলের সদ্য সাবেক সভাপতি রাকিবুর রহমান সাগরকে মামুন বলয়ে দেখা না গেলেও তিনি গিয়াসবিরোধী। থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক টিএইচ তোফা মামুন বলয়ে থাকলেও সম্প্রতি গিয়াসের বলয়ে ভীড়েছেন বলে জানাগেল। থানা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন নীরব থাকলেও গিয়াসের বলয়ে নাই। মহানগর যুবদলের সাবেক সাহিত্য ও প্রকাশনা বিষয়ক সহসম্পাদক ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এরশাদ আলী সরাসরি মামুন মাহামুদের বলয়ে রাজনীতি করছেন।