অশ্রুসিক্ত চোখে বুকফাটা আর্তনাদ: সেই মান্নানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর নেতাকর্মীদের নিয়ে গণতন্ত্র মুক্তির দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান। সেই ১/১১ এর ফখরুদ্দিন মঈনউদ্দীনের আমলেও বিএনপির ঝাণ্ডা ধরেছিলেন তিনি। জেল জুলুম হামলা মামলা নির্যাতনের পরেও রাজপথের আন্দোলনে বহাল ছিলেন বিএনপির এই ত্যাগী নেতা। ২০১৪ সালে সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও চেয়ারে বসতে পারেননি এক বছরও। পুলিশের সাজানো মামলার আসামী চার্জসিটে অভিযুক্ত হয়ে বরখাস্ত থেকেছেন প্রায় ৪ বছরেরও বেশি সময়। তবুও সরকারি দল আওয়ামীলীগ কিংবা জাতীয় পার্টির এমপির সঙ্গে আতাত করে চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসে থাকার চেষ্টাও করেননি।

নেতাকর্মীরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জ জেলার আরো দুটি উপজেলা পরিষদের বিএনপির দুই চেয়ারম্যান সরকারি দলের সঙ্গে মিশে চেয়ারম্যানশীপ উপভোগ করলেও মান্নানের কাছে চেয়ারম্যানির চেয়ারের চেয়েও বড় ছিল দল ও দেশ। গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে সেই চেয়ারকে তুচ্ছ ভেবে দলের নেতাকর্মীদের আগলে রেখে রাজপথে থেকেছেন তিনি। রাজপথে সক্রিয় থাকায় নিজে ও নিজের সন্তানদেরও জেল খাটতে হয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে মান্নানের স্কুল পড়ুয়া ছোট ছেলেকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। অথচ সাকিব রাজনীতিতে ছিলো না। আওয়ামীলীগ সরকারের কঠোর অবস্থানে বিএনপির বিগত সময়ের তথাকথিত শীর্ষ নেতা পরিচয়দারী নিজেদের গুটিয়ে নিলেও মান্নান ছিলেন অগ্রভাগে রাজপথে।

গত ৫ আগস্টের পর সেই আজহারুল ইসলাম মান্নানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বেধেছে হটাত বিএনপি হওয়া নেতা হিসেবে সোনারগাঁয়ের মাটিতে নতুন করে উদয় হওয়া ব্যক্তিরা। সামনের নির্বাচনে মান্নানকে ঠেকিয়ে মনোনয়ন ছিনিয়ে নেয়ার দিবা স্বপ্ন দেখছেন তারা। গত ৫ আগস্ট দুপুরের পর থেকে বিএনপি নেতা সাজা ব্যক্তিরা এখন মান্নানের বিরুদ্ধে ওঠে পড়ে লেগেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক সহ স্থানীয় মিডিয়াতে মান্নানের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে অপপ্রচার ও মিথ্যাচার। নেতাকর্মীদের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ানোর এহেন চেষ্টা করছেন পক্ষটি

এদিকে নেতাকর্মীরা আরো বলছেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমল থেকে শুরু করে কোনো আন্দোলনেই রাজপথে সক্রিয় ছিলেন না সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম। উল্টো বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান যখন জেলে ছিলেন, তখন তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন এই রেজাউল করিম। মিডিয়াতে দলের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। দল ভাঙ্গার ষড়যন্ত্রকারী সংস্কারপন্থীদের সঙ্গে যোগ দেন রেজাউল করিম। এখন তার মতই তার অনুসারীদের নিয়ে রাজনীতিতে উকিঝুকি দিচ্ছেন তিনি। যদিও রহস্যজনক কারনে ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রেজাউল করিমকেই দল মনোনয়ন দেয় নির্বাচিত হওয়ার আশায়। কিন্তু দিগুণ ভোটে আওয়ামীলীগের প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের কাছে পরাজিত হোন রেজাউল করিম। এরপর রেজাউল করিমের ছায়াও রাজনীতিতে দেখা যায়নি।

২০১৪ সালের নির্বাচনের মাস কয়েক পূর্বে আবারো রাজনীতিতে উকি দেন তিনি নির্বাচনে মনোনয়নের আশায়। নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় আবারো ইঁদুরের মত গর্তে ডুকে যান রেজাউল করিম। ওই নির্বাচনের পূর্বের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও সোনারগাঁও উপজেলা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন ছিল। নির্বাচনের পূর্বে তৎকালীন সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহআলম মুকুল মিলিত হয়ে জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীনকে নিয়ে সোনারগাঁয়ের মাঠে নামেন। সোনারগাঁয়ে বেশকটি মহড়া ও শোডাউন দিয়ে গিয়াস জানানি দেন তিনি সোনারগাঁয়ের নির্বাচনে আসছেন। কিন্তু আসন এলাকা ভাগ হয়ে গেলে গিয়াস সোনারগাঁও থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেন। সেই সময় একইভাবে রেজাউল করিমও নিজেকে মনোনয়ন প্রত্যাশি দাবি করেন। নির্বাচনে বিএনপি না আসায় নির্বাচনের পর রেজাউল গিয়াস নামক তাদের দুজনের কাউকেই সোনারগাঁয়ে খুজে পাওয়া যায়নি। তাদের সঙ্গে নীরব রাজনীতিতে নিজেকে নিরাপদে রাখেন খন্দকার আবু জাফর।

এমন কঠিন পরিস্থিতিতে সোনারগাঁয়ে বিএনপির হাল ধরার মত নেতা কেউ ছিল না, একমাত্র মান্নান ছাড়া। নেতাকর্মীরা হামলা মামলা জেল জুলুম নির্যাতনের শিকার হলেও তাদের কোনো খোঁজ খবরও রাখেননি কেউ। নেতাকর্মীদের জামিনের ব্যবস্থা করা, জেলখানায় খবর নেয়া, জেলখানার খরচ ব্যয় বহন, এমনকি জেলবন্ধি বা আহত নিহত নেতাকর্মীদের পরিবারের খোঁজখবরও রেখেছেন মান্নান। এভাবে সোনারগাঁয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের একমাত্র ভরসা হয়ে ওঠেন মান্নান। শুধু নেতাকর্মীদের পাশেই থেকেছেন তা নয়, নগরীর ডিআইটি বানিজ্যিক এলাকায় জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয়টি সিটি করপোরেশন থেকে নেয়ার পেছনে মান্নানের বিপুল পরিমান অর্থের অনুদান রয়েছে। যে ভবনটি ভেঙ্গে সেখানে নতুন ভবন করেছে সিটি করপোরেশন।

এদিকে এসবের মাঝে মান্নান ও তার সন্তানদের জেল খাটতে হয়েছে গ্রেপ্তার হয়ে। আন্দোলন সফল করতে বছরের পর বছর ছিলেন আত্মগোপনে। তার স্কুল পড়ুয়া ছোট সন্তান সাকিবকেও গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ। এ ছাড়াও মান্নান ও তার আরেক পুত্র জেলা ছাত্রদলের সাবেক সেক্রেটারি ও জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক খায়রুল ইসলাম সজীবও জেল খেটেছেন। পৃথকভাবে ছাড়াও পিতা-পুত্র একসাথে জেল খেটেছেন। মান্নান ও সজীব পিতা পুত্র মিলে ৬০টির বেশি রাজনৈতিক মামলায় আসামী হয়েছেন।

২০২৩ সালের মে মাসের ১৫ তারিখেও মান্নান কারাগারে যান। তিনি সহ ১৬ নেতাকর্মীকে হাতে হাতকড়া পড়িয়ে কারাগারে নেয়ার সময় সেদিন তার অশ্রুসিক্ত চোখে যেনো বুকফাটা আর্তনাদ ভেসে ওঠেছিল। পরে দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন। ২০১৬ সালের ৩১ অক্টোবরেও জেলে গিয়ে জেল খেটেছেন দীর্ঘদিন। এ ছাড়াও আরো বেশকবার গ্রেপ্তার হোন এবং কারাগারে যান। ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ নগরীর ২নং রেলগেটের সামনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে গেলে পুলিশের বেদম লাঠিপেটার শিকার হোন মান্নান।

মোট কথা গত সাড়ে ১৫ বছরে মান্নান কয়েক দফায় প্রায় ৬ মাসেরও বেশি সময় কারাগারে ছিলেন। এখন ৫ আগস্টের পর মাঠে এসেছেন বেশকজন ব্যক্তি যারা নিজেদের বিএনপি নেতা দাবি করেন। কিন্তু তারা বিগত সাড়ে ১৫ বছর শরীরে হাওয়া লাগিয়ে বেরিয়েছেন। তাদের জেল খাটতেও হয়নি। কালেভদ্রে দু’একটি মামলা থানায় হলেও পুলিশ তাদেরকে কোনো দিন গ্রেপ্তার করেনি। ম্যানেজে মামলার চার্জসিট থেকেই বাদ পড়েছেন তারা। আরামে আয়েশে তারা যখন বাড়িতে ঘুরে বেরিয়েছেন তখন মান্নান ও তার নেতাকর্মীরা আন্দোলন কর্মসূচি সফল করতে গ্রেপ্তার এড়াতে রাতবিরাতে বনবাদারে ঘুমিয়েছেন। কিন্তু এখন আওয়ামীঘেষারা সবচে বড় নেতা বনে গেছেন। তারা এখন অসুস্থ রেজাউল করিমের কাধে ভর করে ত্যাগী নির্যাতিত মান্নানকে ঠেকানোর দিবা স্বপ্ন দেখছেন। যে রেজাউল করিম দীর্ঘদিন শয্যাশয়ী, এখন সোজা হয়ে দাঁড়াতেও আরেকজনের সহযোগীতা লাগে সেই রেজাউল করিমকে সামনে রেখে অপরাজনীতির মাধ্যমে অপকৌশলে কুটকৌশলে মান্নানকে ঠেকানোর চেষ্টা করছেন একটি চক্র। এতেও যখন কাজ হবে না, তখন মান্নানের বিরুদ্ধে মোটা অংকের অর্থ বিনিয়োগ করে অপ্রপচারে লিপ্ত হয়েছে ওই চক্রটি। এই মান্নান গত সাড়ে ১৫ বছর নেতাকর্মীদের আগলে রেখে অভিভাবকের ভুমিকা পালন করেছেন।

এদিকে নেতাকর্মীরা জানান, মান্নানের রাজনীতিতে অন্যতম শক্তি হিসেবে কাজ করেন উপজেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক সেলিম হোসেন দিপু। তাকে সবাই পিএস সেলিম নামেই চিনেন। যেখানে মান্নানের পাশাপাশি সোনারগাঁয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের পাশে থেকে তাদের সুবিধা অসুবিধা দেখভাল করতেন খায়রুল ইসলাম সজীবও। মান্নানের হাতকে দূর্বল করতে কুটকৌশলি কুচক্রিরা সজীব ও সেলিমের পিছু লেগেছে। দিন রাত ১৮ ঘন্টা দল ও নেতাকর্মীদের পাশে থেকে কাজ করেছেন মান্নানের নির্দেশনায় সেলিম হোসেন দিপু।

মান্নানের নির্দেশনাতেই নেতাকর্মীদের জামিনের ব্যবস্থা করা, কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ খবর রাখা, জামিনের কাগজপত্র কোর্ট থেকে কারাগারে নেয়া, নেতাকর্মীদের পক্ষে আইনজীবীর সাথে নিয়মিত সাক্ষাৎ ও যোগাযোগ রক্ষা করা সহ নেতাকর্মীদের পক্ষে আইনি সহায়তা পেতে বছরের বেশির ভাগ সময় কোর্টে পড়ে থাকতেন সেলিম হোসেন দিপু। এ ছাড়াও প্রতিটা কর্মসূচিতে কখনো সোনরগাঁও থেকে নারায়ণগঞ্জ, আবার নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় দৌড়ে কর্মসূচিগুলো সফল করতে কাজ করেছেন সেলিম। এভাবে দলের জন্য কাজ করতে গিয়ে ২২টি মামলার আসামী হয়েছেন তিনি। আত্মীয়-স্বজন পরিবার পরিজনের প্রায় সকলেই হামলা মামলা জেল জুলুমের শিকার হয়েছেন বিভিন্ন সময়।  সেলিমের পুত্র ছাত্রদল নেতা সামিকে নিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলের সময় বনজঙ্গলে রাত্রিযাপন করেছেন।তবুও মান্নানের অন্যতম বিশ্বস্ত হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছেন সেলিম। যে কারনে মান্নানকে দুর্বল করতে সেলিমকে তার কাছ থেকে সরাতে দীর্ঘদিন যাবত বেশক’টি পক্ষ চেষ্টা করে আসছিলেন। কিন্তু সেলিমকে মান্নান সরাননি। এবার মান্নান, সজীব ও সেলিমের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়েছে কুটকৌশলি পক্ষটি।

তবে স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, সাড়ে ১৫ বছর মান্নান এককভাবে সোনারগাঁও উপজেলা ও পৌর বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিভাবক হিসেবে আগলে রেখেছেন। সামনের নির্বাচনে কোনো ডেড হর্সকে বিএনপি সুযোগ দিবেনা। যারা আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে আতাত করে ব্যবসা বানিজ্য করেছে, সুযোগ সুবিধা নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন তাদেরকে সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা কোনো সুযোগ দিবেনা, সুযোগসন্ধানীদের ঠাঁই হবেনা।