বিএনপির শীর্ষ নেতাদের চোখে কাঠের চশমা: ত্যাগী কর্মীদের অবজ্ঞা!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

এখনো ক্ষমতায় আসেনি বিএনপি। তবুও ক্ষমতার দম্ভ পেয়ে বসেছে বিএনপির শীর্ষ অনেক নেতার মাঝে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর নিজেদের ভোল পাল্টে ফেলেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ বেশকজন নেতা, যারা জেলার ৫টি সংসদীয় আসনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে আগ্রহী। কিন্তু এখনো এমপি-মন্ত্রী না হতেই বিগত সাড়ে ১৫ বছরের ত্যাগী কর্মীদের প্রতি অবজ্ঞা করছেন সেইসব নেতারা। রাজপথের কর্মীদের সঙ্গে এমন আচরণ- যেনো তারা এসব ত্যাগী কর্মীদের চিনেনই না। এরি মাঝে আওয়ামীলীগের মতই বিএনপিতেও ঢুকেছে কাউয়া ও হাইব্রিড। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের দূরে সরিয়ে চামচা তেলবাজদের নিয়ে ঘুরছেন শীর্ষ নেতারা। জেলার ৫টি সংসদীয় আসনের শীর্ষ নেতাদের একই দশা। শীর্ষ নেতাদের অনেকেই আবার আওয়ামীঘেষাদের নিজেদের বগলতলায় জায়গা করে দিচ্ছেন। শীর্ষ নেতাদের এহেন আচরণে এসব বিষয় নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে যাচ্ছেন রাজপথের ত্যাগী নির্যাতিত কর্মীরা।

নেতাকর্মীরা বলছেন, গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর দুপুর থেকেই আওয়ামীঘেষারা বিএনপি সাজতে শুরু করেছে এবং বিএনপির পরিচয়দারী যেসব ব্যক্তিরা বিগত সাড়ে ১৫ বছর নিস্ক্রিয় ছিলেন, তারাও সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। এখন তারা ৫ আগস্টের পর থেকে জেলা ও মহানগরীর শীর্ষ নেতাদের পেছনে পেছনে ঘুরতে থাকেন। এসব কাউয়া হাইব্রিডদের শুরু হয় তেলবাজি ও চামচামি। তেলবাজি ও চামচামির সীমা এতটায় নিচে নেমেছে যে, কোনো কোনো শীর্ষ নেতাদের বডিগার্ড সেজেছে কেউ, কেউ কেউ নেতার জুতা টেনে দিচ্ছেন, কেউ কেউ সকাল সন্ধা রাত পর্যন্ত নেতার পেছনে পেছনে ঘুরে সকলকে বুঝানোর চেষ্টা করছেন তিনি নেতার ঘনিষ্টজন। কিন্তু এ ধরনের তেলবাজি ও চামচামি করতে নারাজ ত্যাগী কর্মীরা।

এমন পরিস্থিতিতে চামচা ও তেলবাজদের চামচামি তেলবাজিতে মহা সুখে দিশেহারা শীর্ষ নেতারাও। তারা ত্যাগী কর্মীদের দূরে সরিয়ে চারপাশে কাউয়া হাইব্রিড চামচা তেলবাজদের নিয়ে ঘিরে রেখেছেন নিজেকে। এতে অহংকার ধাম্ভিকতা চরম মীমায় পৌছে গেছে তাদেরও। চারপাশে এসব তেলবাজ চামচাদের ভীড়ে দলের কর্মসূচিগুলোতে এখন ব্যানার ধরার সুযোগতো দুরের কথা, ব্যানারের সামনে দাঁড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেনা রাজপথের ত্যাগী কর্মীরা। ত্যাগীরা সাড়ে ১৫ বছর আয় রোজগার ব্যবসা বানিজ্য বাদ দিয়ে হামলা মামলায় জমিজমা, বউয়ের স্বর্ণগহেনা বিক্রি করে ফকির মিসকিন হওয়ার দশা, তাদের চাকচিক্ক জামা কাপড়ও নাই। কিন্তু হাইব্রিড কাউয়ারা পকেট গরমওয়ালা চাকচিক্ক, আয়রণ করা শার্ট-প্যান্ট, পাঞ্জাবী পরিধান করে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের চারদিক ঘিরে থাকছে। শীর্ষ নেতারাও এসব পকেটগরম চাকচিক্কওয়ালাদের নিয়ে মহা সুখে, ভাবখানা যেনো এমপি মন্ত্রী হয়ে গেছেন। ত্যাগী কর্মীদের সঙ্গে অনেকেই হাত মিলাতেওও নাকি দ্বিধাবোধ করেন, ত্যাগী কর্মীদের দেখলে না চেনার ভান ধরেন। যে কারনে অনেকেই বলছেন শীর্ষ নেতারা এখন চোখে কাঠের চশমা লাগিয়েছেন।

ত্যাগী বেশকজন কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, আমরা কোনো নেতার জুতা টানতে পারবো না, নেতা ওয়াশরুমে গেলে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবো না। আমরা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি, হামলা মামলা জেল জুলুমের শিকার হয়েছি। আমরা তো কারো বাড়ির কর্মচারী চাকর ও বডিগার্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করবো না। আমরা দলের কর্মী। দলের কর্মসূচি পালন করবো। অতীতে রাজপথে জীবন বাজি রেখে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। কিন্তু এখন আমাদের শীর্ষ নেতারা আমাদের অবজ্ঞা করছেন। দেখলেও যেনো চিনছেন না। হাত মিলাতেও যেনো কার্পণ্য। ডাক খোঁজ নেয়া তো দুরের কথা।

এসব বিষয় নিয়ে জেলা বিএনপির রাজনীতিতে রাজপথে সক্রিয় থাকা বেশকজন ত্যাগী কর্মী বলছেন, বিএনপির শীর্ষ নেতারা প্রায় সকলেই নিজেদের চোখে কাঠের চশমা লাগিয়েছেন। যে কারনে আমাদের তারা দেখছেন না। মহানগর বিএনপির এক কর্মীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাই এখন যেনো হাসরের ময়দানে আছি, হাসরের ময়দানে যেমন কেউ কাউকে চিনেনা, ঠিক বিএনপির শীর্ষ নেতারা যেনো কেউ কাউকে চিনছেন না। দলের কর্মসূচিগুলোতে নতুন নতুন মুখ দেখতে পাচ্ছি। নেতাদের সাথে সাক্ষাত করতে গেলেও মনে হচ্ছে এটা কোন জগতে আছি? এখানে তো বিএনপির কেউ নেই, শুধু নেতা ছাড়া। মনে হচ্ছে রাজপথের ত্যাগী নেতাকর্মীরা অন্য জগতে হারিয়ে গেছেন। এসব কারনে রাজপথের ত্যাগী কর্মীরা মান অভিমান করে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গ ত্যাগ করে যাচ্ছেন। এই সুযোগটি আরো বেশি কাজে লাগাচ্ছেন হাইব্রিড কাউয়া নব্য বিএনপিওয়ালারা এবং আরো বেশি সুযোগ নিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের চারপাশে পাকাপোক্তভাবে গেঁথে বসছেন।