নির্বাচন নাগাদ হবে ডজন প্রার্থী: গিয়াসের সামনে কঠিন পথ!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহামুদ ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী। রিয়াদ চৌধুরীর এমন ঘোষণাকে নিজের মনোনয়ন পাওয়ার চেয়ে বিএনপির সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীনকে ঠেকানোর মুল মিশন মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তবে এ আসনে গিয়াসউদ্দীনের মনোনয়ন পাওয়াটা ওতটা সহজ হবে না। নির্বাচন নাগাদ এখানে মনোনয়ন প্রত্যাশির সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ডজন খানিক। যেখানে গিয়াসউদ্দীনকে ঠেকানোর মুল প্রতিদ্বন্ধি হেভিওয়েট প্রার্থীর তালিকায় থাকবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলম ও অধ্যাপক মামুন মাহামুদ। এদের সঙ্গে থাকবে জোটভুক্ত দলের চাপ।

নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, ফতুল্লা থানা বিএনপির বৃহত্তর অংশের সঙ্গে গিয়াসউদ্দীনের বৈরীতা শুরু হয়ে গেছে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকেই। এখানে শাহআলম অনুগামী নেতাকর্মীরা ধীরে ধীরে মাঠে নামতেও যাচ্ছেন। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে মাঠে নামবেন শাহআলম। সঙ্গে দলে ফেরার চেষ্টায় আছেন থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টুও। থানা বিএনপির বর্তমান সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটুও গিয়াসের বলয়ের বাহিরে। এই টিটুকে বিএনপির রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে সেন্টুর ভুমিকা রয়েছে বেশ। থানা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক জাহিদ হাসান রোজেল ও সাবেক সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম পান্না মোল্লাও শাহআলম বলয়ে বহাল রয়েছেন। শাহআলমের পক্ষে আছেন থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাসও।

ফতুল্লা থানায় একমাত্র গিয়াসের পক্ষে আছেন কোর্ট কেন্দ্রীক রাজনীতি করে আসা থানা বিএনপির বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভুঁইয়া ও জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি। যদিও এই রনিও শিল্পপতি শাহআলমের হাতেই প্রতিষ্ঠিত। যে কোনো সময় রনিও ভিড়তে পারেন শাহআলমের দিকে। এদের উপর আবার রয়েছে ফতুল্লার রাজনীতিতে কিং মেকার খ্যাত সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী। মোটকথা ফতুল্লা থানা বিএনপির রাজনীতিতে সিংহভাগ শক্তি গিয়াসের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে। অনেকে মনে করছেন সামনের নির্বাচনে গিয়াসকে ঠেকাতে গিয়াসবিরোধী নেতারা একজোট হয়ে নির্বাচনী মাঠে নামতে পারেন। সেন্টু বিএনপিতে ফিরলেও গিয়াস বলয়ে যাবেন না সেটার প্রতিফলন কদিন আগে গিয়াসের বক্তব্যেই স্পষ্ট হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পূর্বে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে নিজেকে প্রচারও করেছিলেন সেন্টু। ৪ দলীয় জোট সরকার আমলেও সেন্টু ও রিয়াদ চৌধুরী গিয়াসের বিরুদ্ধে ছিলেন।

অন্যদিকে যদিও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির রাজনীতির সিংহভাগ একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রকের ভুমিকায় গিয়াসউদ্দীন। এখানেও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহামুদ একটি বলয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যদিও তার বলয় থেকে ইতিমধ্যে গিয়াস বলয়ে ভিড়েছেন থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল হাই রাজু, থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক টিএইচ তোফা ও মহানগর যুবদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামসহ আরও বেশকজন নেতা। থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি জুয়েল রানা এক সময় গিয়াসের সঙ্গে রাজনীতি করলেও তারা এখন মামুন মাহামুদের সঙ্গে রাজনীতি করছেন। থানা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব শাহআলম হীরা, থানা বিএনপি নেতা অকিল উদ্দীন ভুঁইয়া, গাজী মনির হোসেন, সামসুউদ্দীন, জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য রিয়াজুল ইসলাম, বিএনপি নেতা লিয়াকত আলী লেকু, মহানগর যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আক্তারুজ্জামান আক্তার, থানা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এরশাদ আলী সহ আরো বেশকজন শীর্ষ নেতারা আছেন মামুন মাহামুদের বলয়ে।

সূত্রে, ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের মাত্র ২১ দিন পূর্বে আওয়ামীলীগের কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি পদের থেকে পদত্যাগ করে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মনোনয়ন পান গিয়াসউদ্দীন। ওই নির্বাচনে প্রথমে দলের মনোনয়ন পান সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শিল্পপতি সফর আলী ভুঁইয়া। কিন্তু সফর আলীর মনোনয়ন বাতিল করে গিয়াসউদ্দীনকে মনোনিত করে বিএনপি। নির্বাচনে শামীম ওসমানকে হারিয়ে এমপিও নির্বাচিত হোন গিয়াস। ওই নির্বাচনে গিয়াসের পক্ষে মুল কারিশমায় ছিলেন শিল্পপতি মোহাম্মদ আলী। বিজয়ী হয়ে মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে গিয়াস দূরত্ব বাড়ান। তবে সামনের নির্বাচনে মোহাম্মদ আলী যে শাহআলমের পক্ষে থাকবেন সেটা বলা যায়। যদিও তিনি প্রকাশ্যে কোনো রাজনীতি করেন না।

এদিকে গত ২০১৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে জোটভুক্ত জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীকে মনোনিত করে বিএনপি। নির্বাচনের পর জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও থানা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন শাহআলম। তবে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদে বহাল আছেন। ২০০৮ সাল থেধকে ২০১৪ সালের নির্বাচনের পূর্ব র্পন্ত সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকাকে সোনারগাঁও উপজেলার সঙ্গে যুক্ত রেখে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন গঠিত হয়। যে কারনে ২০১৪ সালের নির্বাচনের পূর্বে গিয়াসউদ্দীন সোনারগাঁয়েও রাজনৈতিক কর্মকান্ড করেছিলেন। তবে সামনের নির্বাচনেও সিদ্ধিরগঞ্জকে আবারো সোনারগাঁয়ের সঙ্গে যুক্ত করে আসন বিন্যাস করা হতে পারে বলে অনেকে ধারণা করছেন। সেক্ষেত্রে গিয়াসের জন্য জটিলতা কেটে গিয়ে চাপ সৃষ্টি করবে সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানের উপর।