সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
রাষ্ট্র ও দেশের পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসলে রাজনীতির মাঠে আসতে যাচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলম। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর শাহআলমের সঙ্গে তার অনুগামী নেতাকর্মীরা যোগাযোগ করে যাচ্ছেন। তিনি তার নেতাকর্মীদের সাফ নির্দেশনা দিয়েছেন তারা যেনো কোনা রকম চাঁদাবাজি দখলবাজিতে না জড়ায়। তিনি অচিরেই রাজনীতির মাঠে সরব হবেন।
নেতাকর্মীদের নিশ্চিত করেছেন, অচিরেই তিনি বৃহত্তর পরিসরে রাজনীতির মাঠে নামতে যাচ্ছেন। তার পূর্বের বিশ্বস্ত নেতাকর্মীদের তিনি নানা দিকনির্দেশনা দিতে শুরু করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে যে, যেসব নেতাকর্মীরা জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীনের বিরোধী বলয়ে রাজনীতি করছেন সেইসব নেতার্মীরাও থাকবেন শাহআলমের পাশেই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেই তিনি রাজনীতির মাঠে আসবেন প্রকাশ্যে। যদিও তিনি এতদিন তার অনুগামী নেতাকর্মীদের দিয়েই ফতুল্লা থানা বিএনপির রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রন করেছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল সব সময়।
নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, শিল্পপতি শাহআলমের অন্যতম বিশ্বস্ত অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস এখনও শাহআলমের বলয়েই আছেন বহাল। ২০০৯ সালে ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি হোন শিল্পপতি শাহআলম। ওই কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আজাদ বিশ্বাস। পরবর্তী কমিটিতে আজাদ বিশ্বাসকে আহ্বায়ক ও নজরুল ইসলাম পান্না মোল্লাকে সদস্য সচিব পদে রাখা হয়। তারা দুজনই শাহআলমের বিশ্বস্ত কর্মী। শাহআলম যখন জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন দুই মেয়াদের কমিটিতে, তখন ওই কমিটিতে সংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন আজাদ বিশ্বাস। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন শাহআলম। ওই সময় থেকে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদে বহাল রয়েছেন। পূর্বের মতই কেন্দ্রীয় বিএনপির সঙ্গে সখ্যতা রেখে আসছেন শাহআলম।
বর্তমানে গিয়াসউদ্দীনের কট্টর বিরোধী ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু, সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিকদার। তাদের মধ্যে টিটু ও রুহুল আমিন সিকদার এক সময় শাহআলমের পাশেই রাজনীতি করেছেন। রিয়াদ চৌধুরীকেও হয়তো সামনে শাহআলমের পাশে দেখা যেতে পারে। জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনির রাজনীতির হাতেখড়ি শাহআলমের হাত ধরে। শাহআলম রাজনীতিতে মাঠে নামলে রনি সবার আগে থাকবে সেটাও বলা যায়। থানা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাাসন রোজেল, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান খোকা, থানা বিএনপির সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ সহ অনেক নেতারাই ছিলেন শাহআলমের ঘনিষ্টজন। এরাও থাকতে পারেন শাহআলমের পাশে। যদিও শহিদুল্লাহ গিয়াসপন্থী হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তিনিও বর্তমানে গিয়াসবিরোধী।
এ ছাড়াও জেলা যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক একরামুল কবির মামুন, থানা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাদিম হাসান মিঠু, বক্তাবলী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাইকোর্টের সহকারী এটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট আল আমিন সিদ্দিকী, বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম মাতবর, থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি মাসুদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খানের মত নেতারাও থাকতে পারেন শাহআলমের বলয়। থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জাকির হোসেন রবিন, জেলা ছাত্রদল নেতা সাগর সিদ্দিকী, মেহেদী হাসান দোলনের মত বহু নেতাদের দেখা যেতে পারে শাহআলমের বলয়ের রাজনীতিতে। এদের পেছনে থাকতে পারেন ফতুল্লার কিং ম্যাকার খ্যাত শিল্পপতি মোহাম্মদ আলী যিনি পেছন থেকে সহযোগিতা করতে পারেন শাহআলমকেই। মোটকথা গিয়াসবিরোধীরা ও শাহআলম পন্থীরা একজোট হয়ে শাহআলমের পক্ষে রাজনীতিতে নামতে যাচ্ছেন নির্বাচনকে সামনে রেখে। থানা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক শাহআলমের পিএস হিসেবে পরিচিত বোরহান উদ্দীন তো আছেনই শাহআলমে বলয়ে।
এখানে উল্লেখ্যযে, ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা) আসনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন শিল্পপতি শাহআলম। নানা জটিলতার পর নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষে শাহআলমকে সামান্য কিছু ভোটে পরাজিত দেখানো হয়। ওই নির্বাচনে পর থেকে শাহআলম দাবি করে আসছিলেন তাকে ভোটের গণনায় ফেল দেখানো হলে ও তিনি জনগণের ভোটে জয়ী হয়েছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে গঠিত আসনে যুক্তফ্রন্টের মনোনয়ন পান জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী। ২০২৪ সালেও বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।