সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
র্যাব-১১, সিপিএসসি, নারায়ণগঞ্জ এর অভিযানে ৫ আগষ্ট চাষাড়ায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে নাশকতার উস্কানিদাতা ও প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে তাদের উপর হামলাকারী হকার নেতা ও দুর্ধর্ষ চাঁদাবাজ আসাদুল ইসলাম ওরফে আসাদকে গ্রেপ্তার করেছে। ২৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকেলে এ তথ্য জানান র্যাব-১১ এর মিডিয়া অফিসার, এএসপি সনদ বড়ুয়া।
তিনি জানান, গত ১৮ জুলাই হতে ৫ আগষ্ট পর্যন্ত চলমান বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে গ্রেপ্তারকৃত হকার নেতা আসাদুল ইসলাম আসাদ (নারায়ণগঞ্জ মহানগরের হকার সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর হকার লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক) নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া এলাকায় তার সহযোগী হকাদেরকে নিয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলনরত ছাত্র জনতার উপর হামলা করার উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র, পিস্তল, রামদা, চাপাতি, হকিস্টিক, চাইনিজ কুড়ালসহ ঝাপিয়ে পড়ে। ছাত্র ও জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বিফল করার জন্য আসামীগণ একত্রিত হয়ে তাহাদের হাতে থাকা অস্ত্র-শস্ত্র দিয়ে ছাত্র জনতার ন্যায় দাবি থেকে বিতাড়িত করার জন্য আক্রমন করে।
পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামীর উস্কানি ও তার মদদে তার সহযোগী হকাররা বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, যানবাহন, বাস স্টেশনসহ বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে অগ্নি সংযোগ ও ভাংচুর করে জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। আসামীগণের এই রূপ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ফলে সাধারন জনগণ গুরুতর আহত হওয়াসহ প্রানহানীর শিকার হয়।
র্যাব আরও জানায়, সে নিজেকে নারায়ণগঞ্জ মহানগরের হকার সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর হকার লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেলেও কয়েক বছর আগেও সে সড়কের ফুটপাতে হকারি করতো। এক সময় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সাথে সখ্যতা তৈরি করে সে হকারদের নেতা হয়ে যায়। ২০১৮ সালে সিটি করর্পোরেশন ও প্রশাসনের ফুটপাত হকারমুক্ত করার যৌথ উদ্যোগের বিরোধীতা করে আন্দোলন করা নেতাদের অগ্রভাগে ছিল সে। একই বছরের ১৬ জানুয়ারি হকার মুক্ত সড়ক ইস্যুকে কেন্দ্র করে হকারদের নিয়ে হামলা করে জনগণ, সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য’সহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত করে।
এরপর ২০২১ সালের ৯ মার্চ ফুটপাতে বসার দাবিতে বিক্ষোভ করে হকাররা। ওই সময় হকারদের নেতৃত্ব দেয় আসাদ। ওইদিন বিকেলে সড়কে আগুন দিয়ে যানবাহনে ভাঙচুর চালায় হকাররা। বাধা দিলে পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ বাধে। ওই ঘটনায় পুলিশের উপর হামলা, অস্ত্র লুটের চেষ্টা, যানবাহন ভাঙচুর ও সড়কে আগুন দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগে গ্রেফতার হয় আসাদ। একই বছরের ১৪ অক্টোবর ফুটপাতে দোকান বসানোকে কেন্দ্র করে তর্কের জেরে খুন হন ১৮ বছর বয়সী তরুণ জোবায়ের হোসেন। ওই তরুণও ফুটপাতে হকারি করতো। তাকে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়। ওই হত্যা মামলারও আসামি এই আসাদ। পরে নিহত জুবায়েরের পরিবারকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। নিহত জুবায়েরের মা মুক্তা বেগম এই ঘটনায় থানায় আরও একটি অভিযোগ দায়ের করেন। জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, নিজেকে হকার নেতা বলে পরিচয় দেওয়া আসাদুল ইসলাম ওরফে আসাদ নারায়ণগঞ্জ এর চাষাড়া এলাকায় মূলত চাঁদাবাজি করে বেড়ায়। ঐ এলাকার সড়কের ফুটপাতে বসতে হলে আসাদকে দৈনিক চাঁদা দিতে হয়। এই চাঁদার একটি অংশ সখ্যতা বজায় রাখা রাজনৈতিক নেতাদের কাছে পৌঁছে দিত আসাদ।
এহেন নৃশংস মূলক অপরাধ সংঘটনের সাথে জড়িত আসামীগণ’কে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে র্যাব-১১, সিপিএসসি কোম্পানি, নারায়ণগঞ্জ গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে এই নাশকতা মামলার পলাকত আসামী নারায়ণগঞ্জ মহানগরের হকার সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর হকার লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল ইসলাম ওরফে আসাদ (৪৫), পিতা-মৃত সামসুদ্দিন, স্থায়ী সাং-বুরুমদী, পোঃ-ধন্দীর বাজার, থানা-সোনারগাঁও, জেলা-নারায়ণগঞ্জ, এ/পি-সাং-খানপুর ব্রঞ্চ রোড (ওয়ার্ড নং-১২), থানা-নারায়ণগঞ্জ সদর, জেলা-নারায়ণগঞ্জ’কে সনাক্ত ও তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে ২৩/১০/২০২৪ইং তারিখ রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ থানাধীন গাউছিয়া এলাকা হতে আসামী’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেপ্তারকৃত আসামী’কে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রমের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।