ডেস্ক রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে নিকলী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোকাররম সর্দারকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথবাহিনী।তার সাথে ডিএমপির সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের বেশ সখ্যতা ছিল।
২৭ অক্টোবর রোববার দিবাগত রাতে ফতুল্লা থানাধীন কুতুবপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের আলীগঞ্জের সর্দার ভিলা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সোমবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরিফুল ইসলাম বলেন, যৌথবাহিনীর অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছেন। গত ২ অক্টোবর সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে করা চাঁদাবাজি ও মারধরের মামলায় তিনি এজাহারভুক্ত আসামি। সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তিনি এক সময় নিকলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।
গ্রেপ্তার মোকাররম ডিএমপির সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের ‘ক্যাশিয়ার’ ছিলেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নই। গ্রেপ্তার মোকাররম জানিয়েছে, তার বাড়ির আর হারুন স্যারের বাড়ি একই এলাকায় (কিশোরগঞ্জ জেলায়)। হারুন স্যার যখন এই জেলার এসপি হয়ে এসছিলেন তখন সেই পরিচয়ের সুবাদে তার বাড়িতে দাওয়াত সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণে যেতেন। এছাড়া তিনি বাউল গান পছন্দ করতেন। বাউল গানের কোন আয়োজনে নিমন্ত্রণ করা হলে তিনি যেতেন।
এর আগে, গত ২ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে শাহ আলম নামে এক ব্যবসায়ী বাদী হয়ে মামলার আবেদন করলে আদালতের নির্দেশে ফতুল্লা থানায় চাঁদা দাবি ও মারধরের ঘটনায় সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে।মামলার আসামিরা হলেন- কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগ নেতা কাউসার আহমেদ পলাশ (৫৩), মো. মোকাররম (৫২), শাহাদৎ হোসেন সেন্টু (৪৭), মো. হারুন অর রশিদসহ (৪৮) সহ ১১ জন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ব্যবসায়িক কাজে যাওয়ার সময় পিস্তল ঠেকিয়ে বাদীর সঙ্গে থাকা নগদ ২০ লাখ টাকাসহ জরুরি কাগজপত্র ছিনিয়ে নেন অভিযুক্তরা। এ সময় তারা তাকে অপহরণ করে আলীগঞ্জে মোকাররমের অফিসে নিয়ে যান। এ সময় তাকে মারধর করে ১০টি অলিখিত চেকের পাতা ও স্ট্যাম্পে সই নিয়ে নেওয়া হয়। এছাড়া আসামিরা অজ্ঞাত আরও অনেকের সহায়তায় প্রায় সাত কোটি পাঁচ লাখ টাকার সম্পত্তি আত্মসাৎ করে নেন বলে বাদী জানান।
গ্রেপ্তার মোকাররম সর্দার কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী থানার দামপাড়ার মরহুম নুরুল ইসলামের ছেলে। তিনি নিকলী উপজেলা পরিষদের অপসারিত চেয়ারম্যান।
তিনি ডিএমপির সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে পরিচিত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, মোকাররম সর্দারের বাবা নূরুল ইসলাম জীবিকার তাগিদে ৯০ দশকের দিকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার আলীগঞ্জ এলাকায় আসেন। সেখানে তিনি বড় ছেলে মোকাররমকে সাথে নিয়ে দিনমজুরের কাজ করতেন। একসময় শ্রমিক লীগ নেত কাউছার আহম্মেদ পলাশের হাত ধরে লোড-আনলোড শ্রমিক হিসেবে নাম লেখান মোকাররম। এরপর লোড-আনলোডের শ্রমিকদের সর্দার হন তিনি। ওয়ান-ইলেভেনের সময় কয়েকটি কোম্পানি জাহাজের মালামাল রেখে চলে যায়। ফতুল্লার প্রভাবশালী শ্রমিক লীগ নেতা কাউছার আহম্মেদ পলাশের সহযোগিতায় চাঁদাবাজিসহ জাহাজের মালামাল লুট করে প্রচুর অর্থ-বিত্তের মালিক হন মোকাররম। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে হারুন অর রশীদ নারায়ণগঞ্জের এসপি হয়ে এলে মোকাররম সর্দার তার আশীর্বাদ লাভ করেন। সেখানে মোকাররম সর্দারের মাধ্যমে হারুন পাথর ও কয়লার ব্যবসার পাশাপাশি জাহাজের পণ্য চোরাইয়ের সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ নেন। এসব থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হন হারুন। এছাড়া অবৈধ বিভিন্ন সিন্ডিকেটের কাছ থেকে হারুনের হয়ে বিপুল অঙ্কের চাঁদা আদায় করতেন মোকাররম সর্দার। এসব অর্থের একটা বড় অংশ রাখা হতো মোকাররম সর্দারের কাছে। হারুনের এসব টাকা বিভিন্ন ব্যবসায় খাটাতেন মোকাররম। নিজ জেলার কিশোরগঞ্জ সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় মোকাররম সর্দারের মাধ্যমে নামে-বেনামে অন্তত সাতটি ইটভাটা রয়েছে হারুনের। এর বাইরে জেলার বিভিন্ন ইটভাটায় কয়লা সরবরাহের অন্তত শত কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে। সম্প্রতি মোকাররম সর্দারের মাধ্যমে হারুনের ওপর একটি সিনেমা বানানোর প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়েছিল। সিনেমাটির নাম দেয়া হয়েছিল ‘হাওরের মানিক’। সেখানে পুলিশ অফিসার হারুনকে হাওরের মানিক হিসেবে চিত্রায়িত করার কথা ছিল। গত ২১ মে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোকাররম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ডিবি হারুন কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশকে ব্যবহার করে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে তাকে বিজয়ী করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।