সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
বিএনপি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে লড়াই করে যাচ্ছে সে লড়াই এখনও শেষ হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। এ ছাড়াও তিনি নিজ দলের নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ব্যক্তিস্বার্থে দলকে বিভক্ত করবেন না। একই সঙ্গে তিনি কর্মীদের প্রতি বলেছেন, কোনো ভাইয়ের রাজনীতিতে অভ্যস্ত না হয়ে দলের নীতি আদর্শের প্রতি আনুগত্য বজায় রেখে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যেতে হবে।
২৫ নভেম্বর সোমবার সন্ধ্যায় গিয়াসের বাসভবন মুক্তিযোদ্ধা নিবাসে ফতুল্লা থানা বিএনপির নেতাকর্মীরা জেলা বিএনপির সভাপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তাদের প্রতি নানা দিকনির্দেশনা দিতে গিয়ে এসব কথা বলেছেন গিয়াসউদ্দীন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে রাজনৈতিক পরিপক্ব ও একজন বিচক্ষণ ব্যক্তি উল্লেখ করে মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, “বিগত ১৬ বছর স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরকে দলীয়করণ করে ধ্বংস করে দিয়েছে যা এখন সর্বমহল থেকে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। আমাদের নেতা তারেক রহমান ৫ আগস্টের অনেক আগেই রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের জন্য ৩১ দফা উত্থাপন করেছিলেন। তিনি একজন বিচক্ষণ ও রাজনৈতিক পরিপক্ব নেতা হিসেবে এই বিষয়গুলি আগেই অনুধাবন করেছিলেন।”
রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারে তারেক রহমান কর্তৃক উত্থাপিত ৩১ দফা বাস্তবায়নে নেতাকর্মীদেরকে একযোগে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান করেন গিয়াসউদ্দিন।
তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের মূল্যায়ন করার আহ্বান জানিয়ে সাবেক এই এমপি বলেন, “স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি যতগুলো কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল তা পালনে নেতাদের থেকে বেশি অগ্রগামি ছিলেন সাধারণ কর্মীরা। দলের বৃহত্তম স্বার্থে এসব কর্মীরা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এই কর্মীদের সঠিক মূল্যায়ন করতে হবে। তাদের সুখে দুঃখে সবাইকে পাশে থাকতে হবে।”
ব্যক্তি স্বার্থে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না করে দলের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন আরও বলেন, “অনেক নেতাই আছেন নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থে কর্মীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেন। এই বিভেদ সৃষ্টি না করে জনাব তারেক রহমান যে দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন তা বাস্তবায়নে সবাইকে কাজ করে যেতে হবে।”
কোনো ভাইয়ের রাজনীতিতে অভ্যস্ত না হয়ে দলের নীতি আদর্শের প্রতি আনুগত্য বজায় রেখে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যেতে নেতাকর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে সাবেক এই এমপি আরও বলেন, “আজকে যদি আপনারা অমুক ভাই তমুক ভাইয়ের রাজনীতিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন তাহলে এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন আপনি নিজেই। কেননা, এই ভাই কাল না-ও থাকতে পারে। মরে যেতে পারে। পদচ্যুত হতে পারে। দল থেকে বহিষ্কারও হতে পারেন। আবার তিনি নিজেও দল ছেড়ে, রাজনীতি ছেড়ে দিতে পারেন। তখন আপনার জন্য রাজনীতি করাটা কষ্টকর হবে। ফলে কোনো ভাইয়ের রাজনীতিতে অভ্যস্ত না হয়ে দলের প্রতি আনুগত্য বজায় রেখে দলের স্বার্থে, দলের একজন কর্মী হয়ে কাজ করে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে আমাদের কোনো ভাই নেই। আমরা এক ও অভিন্ন একই দলের কর্মী।”
তিনি বলেন, “রাষ্ট্র সংস্কারের যে দাবি উত্থাপিত হচ্ছে তা সংস্কার করতে হলে একটি নির্বাচিত সরকার আবশ্যক। নির্বাচিত সরকার ছাড়া এসব সংস্কার সম্পূর্ণ করা সম্ভব নয়। ফলে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি। আমরা এই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন এবং আস্থা রাখি। বিশ্বাস করি এই সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।”
মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন আরও বলেন,“স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার রাষ্ট্রীয় সকল কাঠামো শুধু ধ্বংস করেনি মহান মুক্তিযুদ্ধে চেতনাকেও ভুলুণ্ঠিত করেছে। অনেক ত্যাগ, লড়াই সংগ্রামের পর ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন ঘটে। এখন আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধে চেতনা ও জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের লক্ষ্য-আদর্শ বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া। আর এই লক্ষ্য-আদর্শ বাস্তবায়ন একমাত্র বিএনপির দ্বারাই সম্ভব।”
তিনি বলেন, “একজন মানুষ ১৮ বছর বয়সে ভোটার হয়। ভোট দেওয়ার অনুভূতি সুখকর। অথচ আজকে যে ছেলে-মেয়ের বয়স ৩০ কিংবা ৩৫ সে এখনও পর্যন্ত নিজের প্রথম ভোটটি দিতে পারেনি। এ যে কতটা কষ্টের, কতটা লজ্জার তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিএনপি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে লড়াই করে যাচ্ছে সে লড়াই এখনও শেষ হয়নি। যতদিন পর্যন্ত প্রতিটি মানুষ তার ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে না পারবে, ততদিন পর্যন্ত বিএনপি লড়াই সংগ্রাম করে যাবে।”
সৌজন্য সাক্ষাৎকালে উপস্থিত ছিলেন, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার মনিরুল ইসলাম, ফতুল্লা থানা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সুলতান উদ্দিন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল বারী ভূঁইয়া, ফতু্ল্লা থানা বিএনপির সহ সাধারণ সম্পাদক জামিল খান স্বাধীন, সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান আলী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বিপ্লব, ফতুল্লা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাসান মাহমুদ পলাশ, সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন, কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বিল্লাল হোসেন, এনায়েতনগর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হক আলমগীর প্রমুখ।