সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি ও জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির। একই সঙ্গে তিনি নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক পদেও রয়েছেন। ছাত্র রাজনীতি থেকে ওঠে আসা সরকার হুমায়ুন কবির এবার বিস্ফোরক একটি ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা করেছেন। তার এমন ঘোষণায় নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে ভিন্নমাত্রা যোগ হয়েছে। পরিচ্ছন্ন এই রাজনীতিক পাকাপোক্তভাবেই মেয়র নির্বাচনের দিকে ধাবিত হচ্ছেন। তিনি সেই লক্ষ্যেই কাজ করে চলেছেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতপাড়ার রাজনীতির পাশাপাশি মহানগর বিএনপির রাজনীতিতেও প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন।
নেতাকর্মীদের সূত্রে জানাগেছে, অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির বিগত সাড়ে ১৫ বছর কোর্টপাড়ার রাজনীতির ঝাণ্ডা ধরেছিলেন। আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সামনে যখন কেউ নির্বাচনের সাহস দেখাতে পারতোনা, ঠিক সেই সময়ও সভাপতি পদে নির্বাচন করেছেন তিনি। নির্বাচন করতে গিয়ে বেশকবার শারীরিকভাবে আঘাত পেয়েছেন। তবুও নির্বাচনে সরব ছিলেন। কোর্টপাড়ায় আন্দোলন সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছেন ফোরামের সভাপতি পদে বসে। কোর্টপাড়ার পাশাপাশি কোর্টের বাহিরের রাজপথেও আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ভুমিকা রেখেছেন সরকার হুমায়ুন কবির। ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে গিয়ে ২নং রেলগেট এলাকায় পুলিশের লাঠিচার্জের শিকার হোন। সেদিন যুবদল নেতা শাওন প্রধান পুলিশের গুলিতে নিহত হোন।
সরকার হুমায়ুন কবির জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি, জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক পদে বর্তমানে বহাল রয়েছেন। এ ছাড়াও তিনি জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, নারায়ণগঞ্জ শহর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সদস্য, নারায়ণগঞ্জ মহানগর জাসাসের সাবেক সভাপতি। চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কোর্টে তিনি আইনজীবীবান্ধন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করছেন। সকলে আইনজীবীদের প্রয়োজনে তিনি নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছেন।
অন্যদিকে স্থানীয়দের সূত্রে, ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ প্রথম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ছিলেন সাবেক বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। ওই নির্বাচনে ভোটের ৭ ঘন্টা পূর্বে বিএনপির সিদ্ধান্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তৈমূর আলম। নির্বাচনে শামীম ওসমানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্ধিতা করে জয়ী হোন সেলিনা হায়াত আইভী। ২০১৬ সালে দলীয় প্রতীকের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভীর সঙ্গে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে পরাজিত হোন বর্তমান মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। ২০২২ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। ব্যক্তিগতভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কারনে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হোন তৈমূর আলম খন্দকার।
এদিকে ফতুল্লার পুরো এলাকাকে সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করতে চাচ্ছেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন। তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে চিঠিও দিয়েছেন। এ কারনে অনেকেই ধারণা করছেন, সিটি কর্পোরেশনের এলাকা বাড়ানোর চেষ্টার মুল লক্ষ্য তিনিও সামনের সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হতে চাচ্ছেন। যদিও তিনি সরাসরি এখনো ঘোষণা করেনি। ২০১৬ সালের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক মামুন মাহামুদ এবং মহানগর বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক (পরবর্তীতে বহিষ্কৃত) এটিএম কামাল। এটিএম কামাল ২০২২ সালের নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন প্রত্যাশি ছিলেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলমের পক্ষে কাজ করার দায়ে তিনিও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হোন।
করোনাকালে ব্যাপক ভুমিকা রাখায় আলোচিত সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর, মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আলোচনায় থাকেন। যদিও তিনি মেয়র পদে নির্বাচন নিয়ে সামনে বাড়েননি। নির্বাচনের কোনো ঘোষণাও দেননি। পরে ২০২২ সালেও সিটি নির্বাচনে ৪র্থবারের মত কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করে জয়ী হোন। সিটি কর্পোরেশনের বৃহত্তর অংশ এলাকা জুড়ে নারায়ণগঞ্জ-৫(সদর-বন্দর) আসনের সাবেক তিনবারের এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালামও কখনো মেয়র পদে নির্বাচনে আগ্রহ দেখাননি। ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে এই আসন থেকে প্রাথমিকভাবে দলের মনোনয়ন পান খোরশেদ। পরে নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা সাবেক এমপি এসএম আকরামকে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন দেয়া হয়।