ডেস্ক রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর ৫নং খেয়াঘাট সংলগ্ন এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীর দখল করে মহানগর বিএনপির সদস্য ও মহানগর যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মনোয়ার হোসেন শোখনের নির্মাণাধীন কার্যালয়টি গুড়িয়ে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ।
১০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দিনগত রাতে ওই কার্যালয় গুড়িয়ে দেয়ার পরদিন বুধবার বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের কর্মকর্তাদেরকে হুমকী ধমকী দেয়ার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতা মনোয়ার হোসেন শোখনের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, মহামান্য হাইকোর্টের রীট পিটিশন নং ৩৫০৩/২০০৯ এর নির্দেশনা অনুযায়ী, নদী বলতে সিএস ম্যাপে উল্লেখিত যে স্থান নদী প্রদর্শণ করা হয়েছে, সেটা নদী হিসেবেই ধরা হবে। নদীর জমির শ্রেণির পরিবর্তন বা পরিবর্ধন যোগ্য নয়। কোনভাবেই বন্দোবস্ত, শ্রেণির পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করা যাবে না। ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’ ঘোষণা করে রায় ঘোষণা করেন।
গত এক যুগে নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা তীরবর্তী অন্তত ৫ সহস্রাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর থেকে শীতলক্ষ্যাসহ সারাদেশেই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রয়েছে। আর এই সুযোগে শীতলক্ষ্যা তীরবর্তী দখলদাররা আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
আরও জানা গেছে, ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পরে শোখনের নেতৃত্বে নগরীর ৫নং খেয়াঘাট সংলগ্ন জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের অর্ন্তভুক্ত বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কার্যালয়টি দখল করে নেয়া হয়। ইতোপূর্বে সেই কার্যালয়টি টিনশেড কার্যালয় থাকলেও বিএনপি নেতা মনোয়ার হোসেন শোখন ৫নং খেয়াঘাট সংলগ্ন এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীর দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেন। খবর পেয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে সেই পাকা স্থাপনাটি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়।
এদিকে বিএনপি নেতা মনোয়ার হোসেন শোখনের সেই কার্যালয়টি ভেঙ্গে দেয়ার পর থেকে বিএনপি নেতা শোখন বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের কর্মকর্তাদের দেখে নেয়ার হুমকী দেয়াসহ তাদেরকে ফ্যাসিস্টের দোসর আখ্যায়িত করে নানা ধরনের অপপ্রচার চালাতে থাকে। এছাড়া গুড়িয়ে দেয়া কার্যালয়টি বিএনপির কার্যালয় বলেও অপপ্রচার চালাতে থাকে শোখন।
এ বিষয়ে মনোয়ার হোসেন শোখনের দাবি, এটি বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কার্যালয়। এটি দীর্ঘদিন ধরেই এখানে ছিল। নৌ উপদেষ্টার আগমন উপলক্ষ্যে নদী বন্দরের কর্মকর্তা আমাদেরকে এই কার্যালয়টি সরিয়ে নিতে বললে আমরা সরিয়ে নেই। পরে নদী বন্দরের কর্মকর্তা আমাদেরকে মৌখিকভাবে এখানে কার্যালয় করার অনুমতি দিলেও তিনি আজমেরী ওসমানের দোসর শিপলু বাবুর কথা শুনে আমাদের অফিসটি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে। এটি কোন বাণিজ্যিক কার্যালয় না। এটি শ্রমিক সংগঠনের অফিস। বিএনপি’র ভ্যান চালক ইউনিয়নেরও কার্যালয় এখানে। যারা এই কার্যালয় ভাংচুর করেছে তারা আওয়ামীলীগের দোসর বলে তিনি দাবি করেন।
এ বিষয়ে ঠিকাদার শিবলী মাহমুদ বাবু বলেন, আমি ৩নং মাছঘাটের ইজারাদার। নদী তীরবর্তী এলাকায় কোন স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টি তদারকি করে বিআইডব্লিউটিএ। এখানে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মনোয়ার হোসেন শোখন নামে শ্রমিক দল নেতা পরিচয়দানকারী সেখানে ইতোপূর্বে একটি টিনশেড ঘর ছিল। আমরা তাকে সেটি সরিয়ে নিতে বলি। সেটি সে সরিয়েও নেয়। কিন্তু হঠাৎ করে আমরা জানতে পারি মনোয়ার হোসেন শোখন সরকারি জায়গায় পাকা স্থাপনা নির্মাণ করছে। খবর পেয়ে আমরা সেটিকে গুড়িয়ে দেই।
তিনি আরো বলেন, নৌ সংশ্লিষ্ট কোন বৈধ শ্রমিক সংগঠন যদি নৌপথ উন্নয়নে ভূমিকা রাখে তাহলে তারা প্রোপার চ্যানেলে আবেদন করতে পারেন। কিন্তু তিনি সেটা না করে আমাদের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছেন। আমাদেরকে বিগত সরকারের দোসর আখ্যায়িত করার চেষ্টা করছেন। নানাভাবে হয়রানি করার চেষ্টা করছেন। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী নদীর তীরবর্তী এলাকায় কোন ধরনের স্থাপনা করা যাবেনা। এখানে কেউ অনুমতিও দিতে পারবেনা।
সূত্র: যুগের নারায়ণগঞ্জ