সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের দুই গ্রুপের বিরোধ নিষ্পত্তির আহ্বান জানিয়ে মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও সেক্রেটারি মমতাজ উদ্দীন মন্তুকে সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন যুবদলের একাংশের নেতারা। তবে এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও তা কর্ণপাত করেননি যুবদলের সভাপতি ও সেক্রেটারি। ফলে যুবদলের বিবাদমান কোন্দল নিরসনও হয়নি।
এ বিষয়ে আল্টিমেটাম দেয়া নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাগর প্রধান অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম’কে বলেন, আমরা দ্বন্ধ বিরোধ চাইনা। তাই সমস্যা নিরসনের জন্য সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। যেহেতু তারা আমলে নেয়নি তাই বিষয়টি সুরাহ হয়েছে তা বলা যায় না। তারা আমাদের বাদ দিয়ে পরবর্তী কার্যক্রম পালন করলে আমরাও সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিব। এখন যেহেতু সিয়াম সাধনার মাস তাই আপাতত আমরা কোন প্রকাশ্য বিরোধ চাই না।’
এদিকে নেতাকর্মীরা বলছেন- ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও এরি মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কোন ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় এই সংগঠনের বিরোধ ধীরে ধীরে বিরাট আকার ধারণ করছে। এরি মধ্যে গত ১ মে শ্রমিক দিবসে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের সঙ্গেই মে দিবস পালন করতে দেখা গেল সাগর প্রধান সহ মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি সানোয়ার হোসেন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ হোসেন সহ যুবদলের নেতাদের। আবার ওইদিন যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখন কর্মসূচি পালন করেছেন মহানগর বিএনপির সভাপতি আবুল কালামের সঙ্গে। একই দিনে মহানগর যুবদলের ব্যানারে তৈমূর আলম খন্দকারের সঙ্গে মে দিবস পালন করেছিলেন যুবদল সভাপতি ও সেক্রেটারি সহ বেশকজন।
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি ও সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকে ৭ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের একাংশের নেতারা। গত ২২ এপ্রিল সোমবার সন্ধায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বন্দরে ২৭নং ওয়ার্ডের কুড়িপাড়া এলাকায় বন্দর যুবদলের আয়োজিত এক কর্মীসভায় এই আল্টিমেটাম দেন নেতারা। কর্মী সভায় মহানগর যুবদলের একাংশের নেতাকর্মীদের পক্ষে এমন ঘোষণা দেন মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাগর প্রধান। ওই সময় নেতাকর্মীরা এমন আল্টিমেটামের পক্ষে হাত তালি দিয়ে সমর্থন জানান।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি সানোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে মহানগর যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখন, প্রধান বক্তা হিসেবে মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাগর প্রধান, বিশেষ অতিথি হিসেবে মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি আহাম্মদ আলী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ ওই সভায় বক্তব্য রাখেন।
কর্মীসভায় প্রধান বক্তা সাগর প্রধান তার বক্তব্যে বলেছিলেন, সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে গেলাম। এই সাত দিনের মধ্যে এই মহানগর যুবদলের সভাপতি, সেক্রেটারি সকলকে নিয়ে বসে কমিটি কিভাবে সাজাতে হবে, কমিটি কিভাবে কাজ করবে, নেতাকর্মীদের কিভাবে মুল্যায়ন করা যায়, এমন কার্যক্রম পরিচালনা করতে যদি অপারগতা প্রকাশ করে, তাহলে আমরা কেন্দ্রকে জানাবো এবং সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর নারায়ণগঞ্জ আমাদের সঙ্গে যত নেতাকর্মী আছে, তাদের সাথে পরামর্শ করে, আমরাও বিকল্প কি করা যায় সেটা চিন্তা করব। এবং সেটা এমনভাবে করব, আপনারা যত সহজ মনে করেন এতটা সহজে বুঝবেন না। এত সহজে হাল ছাড়বো না। একটা হাতি হাজার হাজার পিপড়াকে পাড়া দিয়ে পিসিয়ে ফেলতে পারে, কিন্তু একটা পিপড়া যদি বাইয়া হাতির কানের ভিতরে ঢুকে তাহলে সেই পিপড়া কিন্তু বিশাল হাতিকে নাচাইয়া ফালায়। আমরা কিন্তু সেই পিপড়া। কাজেই আপনারা চালাকি করবেন না। যত দূর পারি এগিয়ে যাবো কিন্তু পরাজিত হবো না ইনশাহআল্লাহ।
সাগর প্রধান আরও বলেছিলেন, মহানগর যুবদলে ২৫ জন কখনও সহ-সভাপতি হতে পারেনা। ১৮ জন কখনও যুগ্ম সম্পাদক হতে পারেনা। যোগ্য আছে, ধরলাম সবাই যোগ্য। কিন্তু কমিটির ক্ষেত্রে ২৫ জন সহ-সভাপতি হতে পারে না। এটা স্বেচ্ছাচারিতা, এটা সংগঠন বিরোধী কাজ। এটা হচ্ছে পামওয়েল তেল আর এক নম্বর ঘি এক সাথে এক ধরে বেচা কিনি করা। যারা এভাবে গুণীজনের সম্মান নষ্ট করে আল্লাহর তরফ থেকে আল্লাহর তরফ থেকে তাদের সম্মান নিজে নষ্ট করে।
সাগর প্রধান আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেছিলেন, তৈমূর আলম খন্দকারের একটা ভুলের কারনে আমাকে জেল খাটতে হয়েছিল। তার ভুলের কারনেই দ্বিতীয়বার জেলে যেতে হয়েছিল।
সভায় সাগর প্রধান এর আগে আরও বলেছিলেন, আমরা মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকে মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক হিসেবে সম্মান করে তার সঙ্গে কাজ করেছি। দলের দুঃসময়ে যেনো বিভেদ সৃষ্টি না হয় আন্দোলন সংগ্রামে কাজ করেছি। ২০১৪ সালের আন্দোলন সংগ্রামে খোরশেদ নারায়ণগঞ্জে প্রবেশ করতে পারেনি। ওই সময় সবচেয়ে বেশি ভুমিকা ছিল সানোয়ার ভাইয়ের। আমরা পালিয়ে থেকে এসেও মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় কর্মসূচি পালন করেই আবার আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলাম। খোরশেদ যখন আত্মগোপনে ছিল তখন আমরাই মহানগর যুবদলের নেতৃত্ব দিয়েছিলাম এবং আন্দোলন সংগ্রাম করেছিলাম।
তিনি খোরশেদের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, যদি সুপার ফাইভ কমিটি দিয়ে থাকে, যদি সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কোন কাজেই না লাগে তাহলে আপনারা এই দুটা পদকে কেন বাতিল করলেন না? আজকে আমাদের পদ নিয়ে কোন বিরোধীতা নাই। আমি সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদেও আছি, শোখন ভাই সিনিয়র সহ-সভাপতি পদেও আছেন। আমরা তো আমাদের জন্য কথা বলছি না। কিন্তু সানোয়ার ভাইকে অবমুুল্যায়ণ করা হয়েছে। সানোয়ার ভাইয়ের ঋণ খোরশেদ কখনও শোধ করতে পারবেন না।
তিনি বলেন, আমরা কোন গ্রুপিং করতে চাইনা। আমরা শুধু একটা কথা বলতে চাই, এখনও আমরা মিলে মিশে কাজ করতে চাই। দলের মধ্যে শৃঙ্খলা আছে, আমরা বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চাইনা। তারা সিদ্ধিরগঞ্জে সেদিন কর্মী সভা করেছেন। কিন্তু আমি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটিতেও আমি সিনিয়র সহ-সভাপতি, মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। আহ্বায়ক কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলাম। মহানগর যুবদলের সুুপার ফাইভ কমিটিতে আমি ছিলাম। কিন্তু আমার এলাকায় কর্মী সভা করলেন অথচ আমাকে জানানো হলো না! আপনার তো লজ্জা হওয়া উচিত। মতবিরোধ থাকতে পারে, যখন কমিটির কার্যক্রম পরিচালনা করবেন, আমি আসি বা না আসি, আমাকে দাওয়াত দেয়া উচিত ছিল। এটা সংগঠনের নিয়ম। নিয়ম ভঙ্গ করেছে মহানগর যুবদলের সভাপতি ও সেক্রেটারি, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার তথাকথিত সভাপতি।
সাগর প্রধান কঠোর ভাষায় বলেছিলেন, এই মহানগর যুবদলের সেক্রেটারি ২০১৪ সালে আত্মগোপন করার কারনে, সেইদিন এই খোরশেদ আর কাউকে খুজে পায় নাই। আমাকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জে কাজ করিয়েছিল। বিপদের দিন সাগর প্রধানকে ডাকবেন, বিপদের দিন ভাই ডাকবেন, মিছিল করাবেন, মিটিং করাবেন, পোস্টার ফ্যাস্টুন ব্যানার করাবেন, আর আপনারা ঢাকায় আত্মগোপনে থাকবেন, আর আমরা কাজ করব। তবুও এব্যাপারে কোন অভিযোগ ছিল না, কর্মী হিসেবে কাজ করেছি। কেন্দ্র থেকে সুপার ফাইভ কমিটি দিয়েছে, আমাদের কোন দাম নাই। সভাপতি ও সেক্রেটারি বইসা বইসা নিজেরা কমিটি বানাইয়া কেন্দ্র থেকে অনুমোদন করিয়ে নিয়ে আসলো।