রেজাউল করিমে ভর করেছে হরেক রকম সুবিধাভোগীরা

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

গত ৫ আগস্টের পর হটাত করে বিএনপিতে সরব হয়েছেন বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম ও তার অনুগামী। বিগত সময়ের দুএকজন সক্রিয় নেতাকর্মীরাও এখন রেজাউল করিমের উপর ভর করেছেন, আবার রেজাউল করিমও তাদের উপর ভর করেছেন। এদের সঙ্গে ‍যুক্ত হয়েছেন বিগত সাড়ে ১৫ বছর বিএনপির রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় থাকা ব্যক্তিরাও। আবার যেসব নেতারা বিগত সময়ে আওয়ামালীগ ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে গোপনে প্রকাশ্যে সখ্যতা রেখে চলেছেন তারাও এখন রেজাউল করিমের উপর ভর করে বিএনপির সাচ্চা কর্মী সাজার চেষ্টা করছেন। যারা সরাসরি জাতীয়পার্টির রাজনীতি করেছেন তারাও এখন রেজাউল করিমের উপর ভর করে বিএনপিতে ঢুকছেন। আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টির রাজনীতি করে আসা ব্যক্তিদের বিএনপিতে যোগদান করাচ্ছেন রেজাউল করিম। যেমন তেমন হোক যেকোনো ব্যক্তিদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছেন কর্মীশূণ্যতায় ভোগা রেজাউল করিম।

স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, ১/১১ এর সময় বিএনপির দল ভাঙ্গার ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে দেন রেজাউল করিম। তারপরেও ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পান এবং নৌকার প্রার্থীর কাছে অর্ধেক ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হোন রেজাউল করিম। নির্বাচনের পর থেকে রেজাউল করিমকে আর রাজনীতিতে দেখা যায়নি। সেই সময় থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা হামলা মামলা জেল জুলুম নির্যাতনের শিকার হতে থাকেন। তৎকালীন উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফরও জাতীয় নির্বাচনের পর নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেন জাফর। এমন অবস্থায় রাজপথে নেতাকর্মীদের নিয়ে লড়াই করে যান বর্তমান উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান। রেজাউল করিম ও জাফরকে হারিয়ে নেতাকর্মীরা যখন দিশেহারা তখন তাদের অভিভাবকে পরিনত হোন মান্নান। নেতাকর্মীদের সকল ধরণের সহযোগীতা করে আসেন মান্নান।

এমন অবস্থায় ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারো সরব হোন রেজাউল করিম ও খন্দকার আবু জাফর। নির্বাচনের কয়েক মাস পুর্বে দুএকটি শোডাউন দিয়ে নির্বাচনে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন রেজাউল করিম। এদিকে ভিন্ন কৌশলে এগুতে থাকেন খন্দকার আবু জাফর। তৎকালীন উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর ও জেলা যুবদলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শাহআলম মুকুল সোনারগাঁয়ে প্রবেশ করান জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীনকে। ওই সময় সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগাঁও এলাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন ছিল। গিয়াসউদ্দীনকে সোনারগাঁও থেকে নির্বাচন করাতে জাফর ও মুকুল কাজ করেন। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর রাজপথের কোনো হরতাল অবরোধ কোনো কর্মসূচিতেই তারা ছিলেন না।

২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। এই নির্বাচন হয় শুধুমাত্র সোনারগাঁও উপজেলা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন বন্টনে। এই নির্বাচনের পর সোনারগাঁয়ে আর যাননি গিয়াসউদ্দীন। নির্বাচনের পর আবারো নিষ্ক্রিয় হয়ে যান রেজাউল করিম ও খন্দকার আবু জাফর। আবারো বিএনপির আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে নেতাকর্মীরা হামলা মামলা জেল জুলুমের শিকার হতে থাকেন। কিন্তু রেজাউল করিমদের দেখা যায়নি। নেতাকর্মীদের বিপদে আপদে পাশে থাকেন মান্নান। রেজাউল করিমের হদিশও আর দেখা যায়নি। এমন অবস্থায় ২০১৮ সালের রেজাউল করিমের আপন ছোট ভাই শিল্পপতি বজলুর রহমান নৌকা প্রতীক প্রত্যাশা নিয়ে মাঠেও নামেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয় বজলুর রহমান নৌকা প্রতীক চাচ্ছেন। এই নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পান মান্নান। নির্বাচনের আগে ও পরে রেজাউল করিম ও তার অনুসারীদের ধাণের শীষ প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে দেখা যায়নি।

এই নির্বাচনের পর রেজাউল করিম ও তার অনুগামীদের কোনো অস্তিত্বই দেখা যায়নি। অনেক আগে থেকেই জাতীয়পার্টিতে যোগদান করে রাজনীতি করে আসছিলেন সোনারগাঁও পৌর বিএনপির সভাপতি এমএ জামান, বিএনপি নেতা সিরাজুল ইসলাম ভুঁইয়া, শফিকুল ইসলাম, সাবেক কাউন্সিলর ফারুক আহমেদ তপন, ওমর ফারুক লিটু সহ রেজাউল করিম পন্থী নেতাকর্মীরা। কিন্তু বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে মান্নানের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা ছিলেন সরব। ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরের আন্দোলনেও রেজাউল করিমের অনুগামীদের রাজপথে দেখা যায়নি। কিন্তু ৫ আগস্টের পর সিরাজুল ইসলাম ভুঁইয়া, ফারুক আহমেদ তপন সহ জাতীয়পার্টির নেতাকর্মীরা রেজাউল করিমের কাধে ভর করে বিএনপিতে ফিরতে শুরু করেছেন।

অতীতের রাজপথে সক্রিয় রাজনীতি করে আসলেও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব সালাউদ্দীন সালু ও সোনারগাঁও উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরে ইয়াসিন নোবেলও এখন নিস্ক্রিয় রেজাউল করিমকে নিয়ে রাজনীতির মাঠে নেমেছেন। নতুন করে সরব হয়েছেন সাবেক জেলা যুবদলের নেতা কাজী এনামুল কবির রবিন। কেন্দ্রীয় তাঁতী দলের সদস্য সচিব মজিবুর রহমান রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামেই কখনই ছিলেন না। গা বাঁচিয়ে রাজনীতি করা কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুলও সরব হয়েছেন। এরা এখন রেজাউল করিমের কাধে ভর করে রাজনীতির মাঠে সরব হওয়ার চেষ্টা করছেন। ৫ আগস্টের পর তারা এখন বিএনপির একেকজন বিরাট নেতা।