সোনারগাঁয়ে জাতীয়পার্টির লোকজন নিয়ে বিএনপির উপর হামলা, সংঘর্ষে আহত ১০

সান নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বিজয় দিবসে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় লাঠি-সোঠা নিয়ে ইটপাকটেল নিক্ষেপ করে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।

১৬ ডিসেম্বর সোমবার দুপুরে সোনারগাঁ উপজেলা চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যধাপক মো. রেজাউল করিম ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য, সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান পক্ষের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

আহতরা হলেন- কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, সোনারগাঁ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক নুর এ ইয়াসিন নোবেল সহ উভয় পক্ষের মামুন, আব্দুল আলী, সোলায়মান, কবির হোসেন, মাসুদ মিয়া, রতন সহ ১০জন কর্মী আহত হয়। বাকি আহতদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। তাদেরকে উদ্ধার করে সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় ছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার আবু জাফর। গত ৫ আগস্টের পর হটাত করে রাজনীতিতে সরব হোন রেজাউল করিম ও খন্দকার আবু জাফর। সুসময়ে রাজনীতিতে ফিরেই আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টির লোকজনকে নিয়ে কর্মসূচি পালন করতে থাকেন তারা দুজন।

এ নিয়ে উপজেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানের মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চলে আসছে। তবে সোনারগাঁ উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত বিজয় দিবসে উপজেলা পরিষদ চত্বরে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য দুপক্ষের লোকজন সেখানেই অবস্থান করেন। এসময় রেজাউল করিমের লোকজন স্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে তর্ক বিতর্ক হয়। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে লাঠিসোটা নিয়ে তাদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।

এসময় ইটের আঘাতে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেনসহ উভয় পক্ষের মামুন, আব্দুল আলী, সোলায়মান, কবির হোসেন, মাসুদ মিয়াসহ ১০জন আহত হয়। আহতদের সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এদিকে সংঘর্ষের ফলে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত বিজয় মেলা পণ্ড হয়ে গেছে।

ওই হামলায় জাতীয়পার্টির পৌরসভার নেতা ফারুক আহমেদ তপন ও উপজেলা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ভুঁইয়া ও তাদের লোকজন রেজাউল করিমের পক্ষ নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের ‍উপর হামলা চালানো হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠেছে। সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে উপজেলা ও হাসপাতাল সড়ক দিয়ে জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক খাইরুল ইসলাম সজীবের ছবি সম্বলিত ও যুবদলের লোগো সম্বলিত টি-শার্ট পরিধান করে রিক্সাযোগে যাওয়ার পথে যুবদল নেতা রতন নামে একজনকে কুপিয়ে পিটিয়ে পায়ের ও হাতের রগ কেটে দিয়েছে রেজাউল করিমের লোকজন। গুরুত্বর আহত রতনকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরবর্তী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখান থেকে তাকে হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। আহত রতন উপজেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক সেলিম হোসেন দিপুর ভাগিনা। তিনি মান্নানের অনুগামী।

সোনারগাঁ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক নুর এ ইয়াসিন নোবেল গণমাধ্যমে দাবি করেন, রেজাউল করিমের নেতৃত্বে নেতাকর্মীদের নিয়ে শান্তিপূর্নভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যাই। সেখানে স্লোগান দেওয়ার এক পর্যায়ে তারা আমাদের ওপর হামলা করে। এতে আমাদের অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছে।

সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার আবু জাফর বলেন, জাতীয় দিবসে ন্যাক্কারজনক ঘটনার সূত্রপাত ঘটিয়েছে মান্নানের লোকজন। এমন হামলার ঘটনা নিন্দা জানাই। এ বিষয়ে অবশ্যই কেন্দ্রে মান্নানের বিরুদ্ধে নালিশ দেওয়া হবে।

সোনারগাঁ থানা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান বলেন, রেজাউল করিমের লোকজন শহীদ মিনারে ফুল দিতে এসে উষ্কানিমূলক কথা বলার কারনে নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করার কারনে আমাদের লোকজন আহত হয়েছে।

এ বিষয়ে সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল বারী স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে বলেন, পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তবে দুই পক্ষের সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়েছে। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।