মুক্তিপণ চাওয়া আসামি নিয়ে নিখোঁজ শিশুর বাবার স্মারকলিপি: ঘটনায় লাগছে জট

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ এলাকার ওমর খালেদ এপনের শিশু সন্তান নিখোঁজ সাদমান সাকির বাবা যখন শিশুটির মুক্তিপণ চাওয়া আসামিকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন তখন এ ঘটনায় আরও জট বাধতে শুরু করেছে বলে দেওভোগ বাসীর দাবি। দেওভোগবাসী বলছেন- এপন অভিযুক্তদের বাঁচাতেই কি তাহলে একেক সময় একেকজনের নামে অভিযোগ তুলছেন কিনা সেটা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে যায়। এদিকে দেওভোগবাসী আরও বলছেন- বর্তমানে সন্তানের নিখোঁজের পর উদ্ধারের দাবির চেয়ে এলাকায় ঘোষণা দিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনিই হতে যাচ্ছেন ১৬নং ওয়ার্ডের আগামীর কাউন্সিলর! ফলে আরও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে এপনের মুল উদ্দেশ্য নিয়ে। সন্তানের উদ্ধার চান নাকি কাউন্সিলর হতে চান সেটাই এখন মুল প্রশ্ন হয়ে দাড়িয়েছে দেওভোগবাসীর কাছে। এর আগে চারুকলা মাঠে দেওভোগবাসী একটি প্রতিবাদ সভা করেও সেখানে এপনের বিষয়ে নানা প্রশ্ন তোলা হয়।

জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ থেকে নিখোঁজ হওয়া দেড় বছরের শিশু সাদমান সাকি নিখোজের ঘটনায় শিশুটির বাবা ওমর খালেদ এপন তার ছোট ভাই সৈয়দ সাদিম আহমেদকে সাথে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের পর দেওভোগবাসীর মাঝে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। দেওভোগের কেউ কেউ বলছেন এপনকেও এখন জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত আসলেই শিশুটি নিখোঁজ কিনা। কারন এপনের ভাই এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মোবাইল ফোনে শিশুটির মুক্তিপণ হিসেবে টাকা দাবি করে। বিকাসে কিছু টাকাও দিয়েছিল এপন। কিন্তু সেই সাদিম আহমেদকে নিয়েই যখন শিশুটির নিখোঁজের বিষয়ে স্মারকলিপি প্রদান করা হলো তখণ দেওভোগবাসী প্রশ্ন তুলেছেন- এপন কি তাহলে সাদিমকে বাঁচাতেই বিভিন্ন জনের নামে অভিযোগ তুলছেন কিনা। তবে আবার কেউ কেউ বলছেন ঘটনাটিকে আর জট বাধিয়ে ফেলছেন এপন।

এলাকাবাসী বলছেন- কেননা, শিশু সাদমান সাকি ইস্যুতে শিশু সাদমান সাকি নিখোজের মামলাটি একেবারেই দ্বারপ্রান্তে আসার পর মামলার বাদী নিজেই মামলাটি আর পরিচালনা করতে চান না বলে তার ভাইকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নেন। ইতিপূর্বে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজল পুলিশের কথপোকথনের একটি অডিও সাংবাদিকদের শোনান। যেখানে বিকাশে টাকা চাওয়া এপনের ভাই সাদিমকে ছাড়িয়ে নেয় বলে জানা যায়। আবার এপনই তাদের ছাড়িয়ে নেয়।

সাংবাদিকদের কাছে দেয়া ওই অডিওতেও নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক জয়নাল আবেদীন ঘটনার পুরো বর্ননা দেন। জয়নাল আবেদীন ঘটনার বর্ননায় বলেন, ‘২০১৭ সালের ১ ডিসেম্বর দুপুরে দেওভোগ এলাকা থেকে অপহৃত হয় সৈয়দ ওমর ফারুক এপনের ছেলে সাদমান সাকি। এই ঘটনাটি অধিক গুরুত্ব দিয়ে আলফা ওয়ান (পুলিশ সুপার স্যার) নিজেই শিশুটির বাড়ীতে যান এবং কঠোর হস্তে তদন্ত করার আদেশ দেন। সে মোতাবেক শিশুটিকে উদ্ধার করতে দারোগা শামীম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলো। ডিসেম্বর ২৬ তারিখে ওসি শাহিন শাহ পারভেজের সাথে আলফা ওয়ানের ভূল বোঝাবুঝির কারণে গোলমেলে অবস্থার সৃষ্টি হয় থানায়। ওসির দায়িত্ব তখন পালন করছিলেন তদন্ত আবদুর রাজ্জাক। এই সময় শিশু সাকির বাবা খবর দিলো তার বাচ্চাকে ফেরত পেতে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবী করে ফোন করেছে অজ্ঞাত ব্যাক্তি। তার যে অপহরণকারী তার প্রমাণ হিসেবে পরদিন সকালে তার বাচ্চার পায়ের জুতা এপনের বাসার সামনে ফেলে যাবে। অপহরণকারীর কথামতো বিকাশের মাধ্যমে ৪৫০০ টাকাও পাঠানো হলো। টাকা পাঠানার পর দিন সকালে সাকির পায়ের জুতা এপনের বাসার সামনে ফেলে যায়।’

তারিখ উল্লেখ না করে ওই অডিওতে পুলিশের পরিদর্শক জয়নাল আবেদীন আরো বলেন, ‘এরপরও আবারো ফোন করে করে শিশু সাকিকে মুক্তিপন বাবদ ৫ লাখ টাকা দাবী করে। নইলে পরদিন বাচ্চার পরিহিত জামা আবার বাসার সামনে ফেলে যাবে বলে হুমকিও দেয়। অপহরণকারীর কথা মতো ফের সকালে ঘুম থেকে উঠে সাকির বাবা মা সাকির জামা কাপর তার দরজার সামনে দেখে হতবাক হয়ে পরে।’

‘এমন খবরে ততপর হয়ে উঠে পুলিশ। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপরহরণকারীর অবস্থান পাওয়া যায় মামলার বাদি এপনের বাসার সাথেই। বারবার চেষ্টার পর মোবাইল ট্রেকিং করে পাওয়া যায় অপহরণকারী অন্য কেউ না তার আপন চাচা সাদিম আহমেদ। সেই মোতাবেক আটক করে আনা হলে মামলার বাদী সৈয়দ ওমর খালেদ এপন নিজেই তার ভাই সৈয়দ সাদিম আহমেদকে ছাড়াতে তৎপর হয়ে উঠে। থানায় ঘুরঘুর করতে থাকে সাদিমকে ছাড়ানোর জন্য। দারোগা শামীম ও আমার (জয়নাল আবেদীন) কাছে নানা ভাবে আকুতি করতে থাকে।’

‘এপনের আকুতি উপেক্ষা করে দারোগা শামীম ও আমি (জয়নাল আবেদীন) অপহরণ মামলার আসামী ও মোবাইলে মুক্তিপন দাবীকারী এবং সাড়ে ৪ হাজার টাকা বিকাশের মাধমে গ্রহণকারী সৈয়দ সাদিম আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলেই অচেতন হয়ে পরার অভিনয় করতে থাকে। অপরদিকে মামলার বাদী এপনের থানায় সার্বক্ষনিক অবস্থানের কারণে ঠিক মতো জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারছি না। রাতের এক পর্যায়ে সৈয়দ সাদিম আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলে সে অচতন হয়ে পরে। আমরাও নাছোরবান্দা যে কোন উপায়ে শিশুকে উদ্ধার করতেই হবে। সে দিক বিবেচনা করে সৈয়দ সাদিম আহমেদকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই চিকিৎসা করাতে। তৎকালীন সময়ের চিকিৎসক সাদিমকে পর্যবেক্ষণ করে কোন ওষুধ না দিয়ে বলেন, সাদিম সম্পূর্ণ সুস্থ্য সে অভিনয় করতেছে।’

‘এ সময় খবর পেয়ে আবার অপহৃত শিশু সাকির বাবা এপন পুলিশকে জানান, “আমার ছেলে হারাইছি এখন আর ভাইকে হারাতে চাই না।”

‘এপনের এমন জোড়াজুড়িতে তৎকালীন সময়ের সদর থানার দায়িত্বরত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাকের অনুমতিক্রমে হাতের নাগালে অপহরণকারীকে পেয়েও ছেড়ে দিতে হয়েছে বাদীর আপত্তির কারণে। এক্ষেত্রে পুলিশ অথবা অন্য কাউকে দোষারোপ করার কোন সুযোগ নাই মামলার বাদী এপনের।’

ইতিমধ্যে দেওভোগ বৃহত্তর এলাকাবাসী সম্প্রতি দেওভোগ চারুকলা মাঠে একটি প্রতিবাদ ও শিশুটির উদ্ধার দাবিতে সমাবেশ করেছেন। সেখানে এপনের ভুমিকা নিয়ে স্থানীয় মান্যগণ্য ব্যক্তিরাও প্রশ্ন তুলেন। এপনের আত্মীয়স্বজনও ওই প্রতিবাদ সমাবেশে গিয়ে উপস্থিত হন। ওই প্রতিবাদ সভায় বক্তারা দ্রুত শিশুটির উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান। আর একেক সময় একেকজনের বিরুদ্ধে এপন অভিযোগ তোলায় বক্তারাও তার ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। সেই সঙ্গে কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজলকে জড়িয়ে অভিযোগ তোলার বিষয়টিও রহস্যজনক দেখছেন এলাকাবাসী। সজলের বিরুদ্ধে অভিযোগ অমুলক হিসেবেও অবহিত করেন স্থানীয় মান্যগণ্য ব্যক্তিরা। এখানে ভিতরগত কোন রাজনৈতিক খেলা রয়েছে কিনা তাও দেখতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিলেন বক্তারা।