মামুন মাহামুদকে পল্টি দিয়ে তিন নেতা হারিয়েছে আম-ছালা!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

গত ৫ আগস্টের পর সাময়িকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে পল্টি দিয়েছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির তিনজন নেতা। কিন্তু ২৪ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার পর আম-ছাড়া দুটোই হারিয়েছেন তারা। সামনে জেলা বিএনপির কমিটির নেতৃত্বে আসার চরম সম্ভাবনা এখন মামুন মাহামুদের সামনে হাতছানি দিচ্ছে। কিন্তু বিভিন্ন সেক্টর থেকে বিশেষ সুবিধা পাওয়ার লোভে মামুন মাহামুদকে পল্টি দিয়েছিলেন বিএনপির তিন নেতা, যারা এখন দিকবিদিক হয়ে হতাশায় ভুগছেন।

স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, তৈমূর আলম খন্দকারকে বিএনপি থেকে বহিষ্কারের পর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতৃত্বশূণ্যতা দেখা দিলে ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর সাবেক এমপি বিএনপির রাজনীতিতে নিস্ক্রিয় মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীনকে আহ্বায়ক ও জেলা যুবদলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকনকে সদস্য সচিব এবং জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক (সাইনিং পাওয়ারসহ) করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় বিএনপি। এর আগে ২০০৯ সাল থেকে বিএনপির রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে গিয়াসের কোনো ভুমিকা ছিল না। কিন্তু সেই থেকে রাজপথের আন্দোলনে বহাল ছিলেন মামুন মাহমুদ ও তার নেতাকর্মীরা।

এর আগের কমিটিতে তৈমুর আলম খন্দকারকে আহ্বায়ক ও মামুন মাহামুদকে সদস্য সচিব করে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় বিএনপি। তৈমূর আলমকে বহিষ্কারের পর কিছুদিন ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন মনিরুল ইসলাম রবি এবং এরপর নাসির উদ্দীন। ওই সময় ২০২২ সালের ২৮ জানুয়ারী তৎকালীন জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব মামুন মাহামুদ সিদ্ধিরগঞ্জে আব্দুল হাই রাজুকে আহ্বায়ক ও শাহআলম হীরাকে সদস্য সচিব করে থানা বিএনপির কমিটি ঘোষণা করেন। এই কমিটিতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মিয়ার হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামীলীগে যোগদানকারী টিএইচ তোফাকেও যুগ্ম আহ্বায়ক করেছিলেন মামুন মাহামুদ।

একই বছর ২০২২ সালের ১৫ এপ্রিল সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সম্মেলনের আয়োজন করা হলে সেই সম্মেলনে গিয়াসউদ্দীন পন্থী সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে হামলা ও ভাংচুর চালিয়ে সম্মেলন পণ্ড করে দেয়া হয়। একই মাসের ২৫ এপ্রিল ঢাকায় বিএনপির পার্টি অফিস থেকে বের হয়ে বাড়ি ফেরার পথে মামুন মাহামুদ সন্ত্রাসী হামলার শিকার হোন। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার পেটে ছুরিকাঘাত করে দূর্বৃত্তরা। এদিকে পরবর্তীতে গিয়াস জেলা বিএনপির দায়িত্ব পেয়ে ইকবালকে থানা বিএনপির সদস্য সচিব ও পরে সাধারণ সম্পাদক বানান।

গিয়াস দায়িত্ব পেয়ে ২০২৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী বিএনপির রাজনীতি থেকে নিস্ক্রিয় মাজেদুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও ইকবালকে সদস্য সচিব পদে বসান গিয়াস। যদিও এই কমিটিতে মামুন মাহামুদের অনুগামী অকিল উদ্দীন ভুঁইয়া ও গাজী মনির হোসেনকে যুগ্ম আহ্বায়ক পদে রাখা হয়। একই বছরের ১৮ এপ্রিল থানা বিএনপির সম্মেলনে মাজেদুল ইসলাম সভাপতি ও ইকবাল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। গত ১২ ডিসেম্বর বাস ভাংচুর ও এক সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার অপরাধে সাময়িকভাবে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন ইকবাল হোসেন।

এদিকে ৫ আগস্টের পর সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন সেক্টর নিয়ন্ত্রণে নিতে থাকে গিয়াসপন্থীরা। মামুন মাহামুদ ক্লিন ইমেজধারী হওয়ায় এসব দখলবাজি চাঁদাবাজি, মামলা বানিজ্য, ঝুট সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ছিলেন না তিনি ও তার নেতাকর্মীরা। কিন্তু লোভ সামলাতে পারেনি আব্দুল হাই রাজু, টিএইচ তোফা ও শহিদুল ইসলাম। তারা মামুন মাহামুদকে পল্টি দিয়ে গিয়াসউদ্দীনের হাতে ফুল দিয়ে গিয়াস বলয়ে অংশগ্রহণ করেন। শহিদুল ইসলাম গিয়াস বলয়ে যোগদান করে ঝুটের ব্যবসার নিয়ন্ত্রণও পেয়েছেন বলে জানাগেল। রাজু ও তোফা কি পেয়েছেন সেটা জানা যায়নি। গিয়াসের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটির সুপারিশে কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর সামনের রাজনীতিতে গিয়াসের অবস্থান অন্ধকার। ফলে কিছুদিনের জন্য অধর্য্য হয়ে সাময়িক লাভের আশায় মামুন মাহামুদকে পল্টি দিয়ে আম-ছাড়া হারালেন বিএনপির তিন নেতা।