যেসব কারনে বিএনপিতে ব্যাকফুটে দিপু-গিয়াস সিন্ডিকেট!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির রাজনীতিতে বিএনপির শীর্ষ নেতারা দুটি সিন্ডিকেটে বিভক্ত হয়ে রাজনীতি করে আসছেন দীর্ঘদিন যাবত। দুটি সিন্ডিকেটে আবার দুজন রাজনৈতিক মোড়ল রয়েছেন, যারা জেলা বিএনপির সরাসরি নেতৃত্ব নেন না, কিন্তু পেছন থেকে বিএনপির রাজনীতির কলকাঠি নাড়েন। একটি সিন্ডিকেটে রয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়া ও অপর সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন নজরুল ইসলাম আজাদ।

গত ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির রাজনীতিতে ছড়ি ঘুরিয়েছেন দিপু ভুঁইয়া। কিন্তু ২৪ ডিসেম্বরের পর জেলা বিএনপির রাজনীতি এখন নজরুল ইসলাম আজাদের মুঠোবন্ধি হওয়ার পথে। একইভাবে বিভিন্ন থানা এলাকার যেসব নেতারা দুুটি সিন্ডিকেটে বিভক্ত হয়ে রাজনীতি করেন তাদেরও একই দশা জেলা বিএনপির রাজনীতিতে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়ার সিন্ডিকেটের সঙ্গে আছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহামুদুর রহমান সুমন, জেলা বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন, জেলা বিএনপির সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন, সাবেক সংসদ সদস্য এম আতাউর রহমান খান আঙ্গুর ও জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি। এই সিন্ডিকেটকে আবার প্রমোট করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। মাহামুদুর রহমান সুমনের উকিল শ্বশুর হোন রিজভী। রিজভীর সঙ্গে সুমন ও রনির সবচেয়ে বেশি হৃদ্রতাপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান।

যদিও এই সিন্ডিকেটের সকলের সঙ্গে আবার মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের সুসম্পর্ক রয়েছে বেশ জোরালো। তিনি আড়াইহাজারে মাহামুদুর রহমান সুমনের বেশকটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের নজির রেখেছেন। উল্টো দিকে নজরুল ইসলাম আজাদ সিন্ডিকেটের সঙ্গে আবার সখ্যতা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুর। আজাদের বহু কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ জেলা ও মহানগরীতে করেছেন টিপু।

অন্যদিকে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের নেতৃত্বে সিন্ডিকেটে আছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলম, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহামুদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব। এই সিন্ডিকেটকে আবার প্রমোট করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মির্জা ফখরুলের সঙ্গে কাজী মনিরের বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক দীর্ঘদিনের।

নেতাকর্মীরা জানান, মুলত নারায়ণগঞ্জ-২(আড়াইহাজার) আসন নিয়ে নজরুল ইসলাম আজাদের সঙ্গে চাচা আতাউর রহমান খান আঙ্গুর ও ভাতিজা মাহামুদুর রহমান সুমনের মনোনয়ন নিয়ে লড়াইয়ে আছেন। যে কারনে তারা দুটি সিন্ডিকেটে বিভক্ত। এক্ষেত্রে চাচা ভাতিজা আজাদকে দমাতে চান।

নারায়ণগঞ্জ-১(রূপগঞ্জ) আসনে কাজী মনিরুজ্জামান মনিরের সঙ্গে মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়ার মনোনয়ন লড়াইয়ের কারনে তারা দুটি সিন্ডিকেটে বিভক্ত। নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁ) আসনে আজহারুল ইসলাম মান্নানের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ থাকলেও গিয়াসের কিছু লোকজন মান্নানকে ডিস্টার্ব করেন। যে কারনে গিয়াসবিরোধী শিবিরের সিন্ডিকেটে আছেন মান্নান।

নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে গিয়াসউদ্দীন ও শিল্পপতি শাহআলমের সঙ্গে মনোনয়ন লড়াইয়ের কারনে তারা দুটি সিন্ডিকেটে রাজনীতি করেন। একই আসন নিয়ে গিয়াসের সঙ্গে লড়াইয়ে আছেন মামুন মাহামুদ। যে কারনে মামুনকে ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন গিয়াস। এক সময় শাহআলমের হাত ধরে মশিউর রহমান রনি রাজনীতিতে প্রভাববিস্তারে আসলেও তিনি এখন গিয়াসের বলয়ে। আজাদের নেতৃত্বে আছেন নেতৃত্ব পাওয়ার প্রত্যাশায় মাসুকুল ইসলাম রাজীব।

এদিকে গত ২৪ ডিসেম্বর জেলা বিএনপির বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এই কমিটিতে সভাপতি ছিলেন মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন গোলাম ফারুক খোকন। তারা মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়ার সিন্ডিকেটে রাজনীতি করেছেন। দিপু ভুঁইয়ার গোলাম ফারুক খোকন সরাসরি কর্মী সমতুল্য নেতা। এই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার পর জেলা বিএনপির রাজনীতিতে ব্যাকফুটে দিপু ভুঁইয়া ও গিয়াসউদ্দীনের সিন্ডিকেট ভিত্তিক বিএনপির বলয়।