সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
সহসাই নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হচ্ছেনা এটা প্রায় নিশ্চিত। একইভাবে জেলার ৪ মোড়ল বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, বিএনপির সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান মনির, শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলম ও মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়ার পছন্দসই তাদের প্রেসক্রিপশনে জমা দেয়া খসড়া কমিটির অনুমোদনও পাচ্ছেনা। নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে যোগ্য একাধিক নেতার সমারোহ থাকলেও জেলা বিএনপির কর্ণধার অর্থাৎ আহ্বায়ক কিংবা সভাপতি পদে নেতৃত্ব দেয়ার মত নেতার সংকট তৈরি হয়েছে নারায়ণগঞ্জে।
এদিকে বিশ্বস্থ সূত্রে জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতৃত্ব নির্ধারণে গোপনে ‘সার্চ কমিটি’ গঠন করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সার্চ কমিটি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের লক্ষ্যে একটি খসড়া কমিটি তারেক রহমানের হাতে জমা দিয়ে সুপারিশ করবে। একই সঙ্গে তারেক রহমান তার ব্যক্তিগত গোয়েন্দা দিয়ে তথ্য সংগ্রহের সাথে সার্চ কমিটির সুপারিশ মিলিয়ে এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় বেশকজন নেতার সঙ্গে আলোচনা শেষে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা করবেন।
তারেক রহমানের গঠিত সার্চ কমিটিতে কারা রয়েছেন এমনটা কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি। যদিও অনেকেই জানিয়েছেন, যেভাবে গোপনে জেলা বিএনপির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে ঠিক একইভাবে তারেক রহমান সার্চ কমিটির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ ও খসড়া কমিটি গ্রহণ করবেন। সার্চ কমিটির দেয়া সুপারিশের কারণও ব্যাখ্যা করা থাকবে। খুব দ্রুত সার্চ কমিটি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটির সুপারিশ করে তারেক রহমানের হাতে জমা দিলে কমিটি দ্রুত ঘোষণা করা হবে। যদিও সার্চ কমিটির উপর পুরোপুরি তারেক রহমান নির্ভর করবেন না।
এদিকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক পদে নেতৃত্বের সংকটের কারনে আবারো ঘুরেফিরে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের নাম চলে আসছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের অনেকেই চাচ্ছেন তৈমূর আলমের হাতে আবারো নির্বাচনকালীন কমিটি তুলে দিতে। এর কারন হিসেবে নেতারা বলছেন, এক সময় জেলা বিএনপির সভাপতি পদে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম। তিনি এখন বার্ধক্যের কারনে দায়িত্ব পরিচালনা করতে পারবেন না। জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনিরের ব্যর্থতার কারনেই তার কমিটিও বিলুপ্ত ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় বিএনপি। যদিও কাজী মনির নির্বাচনের কারনে দায়িত্ব নিতেও নারাজ। একইভাবে মারাত্মক দোষে দুষ্ট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন। যে কারণে কমিটি সদ্য বিলুপ্ত করা হলো।
এরপর আলোচনায় আছেন সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান। তাকে জেলা বিএনপির সভাপতি কিংবা আহ্বায়ক পদে রাখতে কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বিমত রয়েছে নানা কারনে। অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে আবারো সদস্য সচিব পদে বসানোর চিন্তা করছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। তাকে আহ্বায়ক পদে এখনই যোগ্য মনে করছেন না কেন্দ্রীয় নেতারা।
এ ছাড়াও গেল কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটুকে দিয়ে কমিটি আনার চেষ্টা করছেন দিপু ভুঁইয়া। এভাবে জুনিয়র কমিটি দেয়ার চিন্তায় নেই কেন্দ্রীয় বিএনপি। কেন্দ্রীয় বিএনপি ও তারেক রহমানের পছন্দ আহ্বায়ক পদে সিনিয়র কোনো নেতার সঙ্গে সদস্য সচিব পদে মধ্যমসারির নেতাকে বসানো। নজরুল ইসলাম আজাদ চাচ্ছেন মামুন মাহামুদ ও মাসুকুল ইসলাম রাজীবকে দিয়ে কমিটি। কিন্তু দিপু ভুঁইয়া, মাহামুদুর রহমান সুমন কিংবা আজাদের একক পছন্দে তাদের পকেট কমিটি দিতে নারাজ তারেক রহমান।
সেক্রেটারি পদে আরো আলোচনায় সামনে আছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক জাহিদ হাসান রোজেল, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী। এরা আবার শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলমের পছন্দের তালিকায় তাদের নাম চলে গেছে লন্ডনে। সদস্য সচিব পদে আসতে কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারে ধর্ণা দিচ্ছেন জেলা যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল ইসলাম চয়ন।
এই যখন অবস্থা তখন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক পদে কাকে দায়িত্ব দিবেন তারেক রহমান? ব্যর্থতার দায়ে বিলুপ্ত কমিটির নেতা কাজী মনির ও মামুন মাহামুদের উপর সামনের নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন কমিটি দেয়ার প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারছেন না তারেক রহমান। যার মধ্যে কমিটি নিতে কাজী মনিরের রয়েছে অনীহা। সদস্য সচিব পদে একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকলেও আহ্বায়ক পদে নেতৃত্বের সংকট দেখা দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপিতে। এসব কারনে আবারো ঘুরেফিরে তৈমূর আলম খন্দকারের নাম সামনে চলে আসছে।
ইতিমধ্যে তৈমূর আলম মিডিয়াতে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘দলের প্রয়োজনে বিএনপি ডাকলে পাশে থাকবো’। এই মুহুর্তে জেলা বিএনপির দায়িত্ব আবারো তৈমূর আলমের উপর তুলে দিলে তিনি নিবেন সেটার আভাসও দিয়েছেন। সামনের নির্বাচনে জেলার ৫টি সংসদীয় আসন এলাকায় বিজয় নিশ্চিত করতে তৈমূর আলমের মত একজন মুরুব্বী জেলা বিএনপিতে প্রয়োজনীয়তা এখনই দেখা দিয়েছে। তারেক রহমানের সার্চ কমিটি তৈমূর আলমের নাম প্রস্তাব করলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
দুইদিন পূর্বেও রূপগঞ্জে বিএনপির ওলামাদলের আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তৈমূর আলম। তৈমূর আলমের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হলেও সেই মামলার বাদী বাবুল সর্দার চাখারীকেই উল্টো যুবদল নেতা শামীম হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে রিমাণ্ডে চেয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গত ২৪ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা কেন্দ্রীয় বিএনপি। জেলা বিএনপির ওই কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকনের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্তের কমিটির সুপারিশে তাদের কমিটি বিলুপ্ত করা হয় বলে জানানো হয়।