সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
গত ২৪ ডিসেম্বর বিলুপ্ত ঘোষণার পর নেতৃত্বশূণ্য নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের মাধ্যমে নেতৃত্বে ফিরে পেতে যাচ্ছে জেলা বিএনপি। যদিও নেতৃত্ব বাছাইয়ে জটিলতার মধ্যে পড়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক পদে নেতৃত্বের বিরাট সংকট দেখা দিলেও সেক্রেটারি কিংবা সদস্য সচিব পদে যোগ্য একাধিক নেতা রয়েছে নারায়ণগঞ্জে। যাদের মধ্য থেকে ক্লিন ইমেজধারী ও তারুণ্যনির্ভর নেতৃত্ব চাচ্ছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। পঙ্খানুপঙ্খুভাবে নেতৃত্ব বাছাই শেষে ঘোষণা করা হবে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি।
কেন্দ্রীয় বেশকজন নেতা জানিয়েছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এই আহ্বায়ক কমিটি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। একই সঙ্গে নির্বাচনের পূর্বে সামনে যদি বড় ধরণের কোনো আন্দোলনের প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে যারা রাজপথে থেকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবেন এমন নেতৃত্ব চাচ্ছেন শীর্ষ নেতারা। অতীতে ব্যর্থ হয়েছেন কিংবা নেতৃত্ব পেয়েও রাজপথে ছিলেন না এমন কাউকে রাখতে চাচ্ছেনা কেন্দ্রীয় বিএনপি।
এরি মধ্যে বেশকটি বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব পদে নেতৃত্ব বাছাইয়ের জন্য গোপনে ’সার্চ কমিটি’ গঠন করেছেন তারেক রহমান। এই কমিটি আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব পদে দুজনের নাম তারেক রহমানের কাছে সুপারিশ করবেন। সেই নামের সঙ্গে কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং তারেক রহমানের বিশেষ গোয়েন্দা প্রতিনিধিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই বাছাই করে কমিটি চূড়ান্ত করে সেটা অনুমোদনের সিদ্ধান্ত দিবেন তারেক রহমান।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটিতে সেক্রেটারি পদে আলোচনায় আছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহামুদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক জাহিদ হাসান রোজেল, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির বর্তমান সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু, জেলা যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল ইসলাম চয়ন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী। উপরোক্ত এসব নেতাদের অনেকেই আবার শীর্ষ নেতাদের মাধ্যমে, কেউ কেউ নিজেদের মত করে নেতৃত্বে আসতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন। মামুন মাহামুদকে আহ্বায়ক পদে বসানো যায় কিনা সেটা নিয়ে ভাবছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় অনেক নেতা জানিয়েছেন, এলাকায় ক্লিন ইমেজধারী ও পরিচ্ছন্ন নেতাদের হাতে নেতৃত্ব ওঠবে। যারা ৫ আগস্টের পর মামলা বানিজ্য, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, নৈরাজ্য, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন তাদেরকে কমিটিতে রাখবেন না তারেক রহমান।
একই সঙ্গে অতীতে যাদেরকে নিয়ে নানা বিষয়ে বিতর্ক আছে এবং নানা অপকর্মের কারনে বিতর্কিত, এ ছাড়াও ৫ আগস্টের পূর্বে যারা রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন না, যারা বিগত সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামীলীগের সঙ্গে আতাত করে ব্যবসা বানিজ্য করেছে বুক ফুলিয়ে চলেছেন সেইসব ব্যক্তিদের রাখতে চাচ্ছেনা কেন্দ্রীয় বিএনপি।
ইতিমধ্যে উপরোক্ত ৫ আগস্টের পর যেসব কারনে জেলা বিএনপি সহ বেশকটি অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। সুতরাং যেসব কর্মকান্ডের কারনে কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে সেই একই কর্মকান্ডে জড়িতদের কমিটিতে রাখবেন না তারেক রহমান।
অন্যদিকে কমিটি গঠনের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের নেতাদের চেষ্টার বিষয়ে জানাগেছে, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ চাচ্ছেন মামুন মাহামুদ ও মাসুকুল ইসলাম রাজীবের নেতৃত্বে জেলা বিএনপি হোক। কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়া চাচ্ছেন গোলাম ফারুক খোকন ও শহিদুল ইসলাম টিটুর নেতৃত্বে জেলা বিএনপির কমিটি হোক। কিন্তু বিতর্কের কারনেই গিয়াসউদ্দীন ও খোকনের কমিটি বিলুপ্ত করে বিএনপি। ফলে খোকনের সম্ভাবনা ফিকে। যদিও কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই জানান- কারো প্রেসক্রিপশনে মুঠোবন্ধি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি দিবেনা তারেক রহমান। যোগ্যতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে রাজপথের ত্যাগী নির্যাতিতদের নেতৃত্বে কমিটি হবে।
অনেকেই জানিয়েছেন, আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব দুটি পদেই তরুণ নেতৃত্ব চাচ্ছেনা বিএনপি। একজন সিনিয়র নেতাকে আহ্বায়ক পদে রেখে আরেকজন কার্যত তরুণ নেতাকে সদস্য সচিব পদে রেখে কমিটি গঠন করতে চায় বিএনপির অনেক শীর্ষ নেতাদের মতামত। সেক্ষেত্রে সিনিয়রদের মধ্যে বর্তমানে নাম চলে আসে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির ও সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান। সেক্ষেত্রে তাদের দুজনের যেকোনো একজনকে আহ্বায়ক পদে রেখে সদস্য সচিব পদে মামুন মাহামুদকে দিয়েই কমিটি হতে পারে।
যদিও অনেকেই আবার মত দিয়েছেন মামুন মাহামুদকে আহ্বায়ক পদে রেখে তরুণ নেতাদের মধ্য থেকে একজন ক্লিন ইমেজধারী রাজপথের নেতাকে সদস্য সচিব পদে বসানোর। আবার অনেকেই ধারণা করছেন- শেষতক সিনিয়র জুনিয়র মিলিয়ে কমিটি হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। সেক্ষেত্রে তরুণ নেতাদের যুগ্ম আহ্বায়ক পদে রাখা হবে।