যেসব অপকর্মের শাস্তিস্বরুপ বিএনপিতে ‘কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা’

সান নারায়ণগঞ্জ

রাজপথের যত ত্যাগী ও যতবড় নেতাই হোক ৫ আগস্টের হুজুগে দখলবাজি, চাঁদাবাজি, নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসী সহ অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সারাদেশে অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে তারেক রহমান জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছেন। অভিযুক্তদের সরাসরি দল থেকে বহিষ্কার সহ অনেকের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে দিচ্ছেন। তদন্ত কমিটি গঠন ও তদন্ত কমিটির সুপারিশে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে বিএনপি।

নারায়ণগঞ্জে জেলা বিএনপি সহ এর বেশকটি অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্যমুলক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার কারনে তাদের এসব কথা বিলুপ্ত ঘোষণা করে দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপির নিজ নিজ সংগঠন। যদিও বিলুপ্ত কমিটির নেতারা নিজেদের পক্ষে ভুয়া দাবির ধুয়া তুলে প্রচারণায় ব্যস্ত থাকলেও তাদের অপকর্মের শাস্তিস্বরুপ যে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে সেটা জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। একই সঙ্গে বিলুপ্ত কমিটির নেতাদের সামনের রাজনৈতিক ভবিষৎ অন্ধের দিকে চলে গেছে। মিথ্যা প্রপাগান্ডার ধুয়া তুলে খড় কুটো ধরে রাজনীতিকে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন বিলুপ্ত কমিটির নেতারা।

বিলুপ্ত কমিটির নেতারা দাবি করছেন, কমিটি ঘোষণা ও বিলুপ্ত করা দলের নিয়মতান্ত্রিক। এমনটা দাবি করে তাদের অপকর্ম আড়াল করার চেষ্টা করলেও দলটির গঠনতন্ত্রে আছে দলীয় নিয়ম অনুযায়ী কখনই কোনো ইউনেটে নেতৃত্বশূণ্য থাকবে না। অর্থাৎ কমিটি বিলুপ্ত করে সাথে সাথে কমিটি গঠন করতে হবে। একট কমিটির পর আরেকটি কমিটি। কিন্তু রাজনৈতিকবোদ্ধাদের মতে, যখনি নেতৃত্বশূণ্য থাকে তখনি বুঝতে হবে পূর্বের কমিটি এতটাই অপকর্মে জড়িত ছিল যে, নতুন কমিটি তৈরি না করেই নেতৃত্বশূণ্য রেখেই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করতে বাধ্য হোন কেন্দ্রীয় নেতারা।

গত ২৪ ডিসেম্বর জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। গত ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীনকে আহ্বায়ক ও গোলাম ফারুক খোকনকে সদস্য সচিব করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। গত ২০২৩ সালের ১৫ জুন জেলা বিএনপির সম্মেলনে তাদেরকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।

৫ আগস্টের পর গিয়াসউদ্দীন ও খোকনের লোকজন মারাত্মকভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আকবর দখলবাজি করতে গিয়ে একাধিকবার মারামারি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়েছেন। গিয়াস পন্থী ফতুল্লা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি পলাশ ও স্বেচ্ছাসেবক দলের থানা কমিটির আহ্বায়ক জাকির হোসেন রবিন গ্রুপের মাঝে কয়েক দফা ঝুট দখল নিয়ে সংঘর্ষ হয়। গোলাম ফারুক খোকনের সঙ্গে দেশের একটি শীর্ষ ব্যবসায়ীর ছবি প্রকাশ নিয়েও তোলপাড় হয়। জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্তির পূর্বে জেলার সাতটি থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ও আহতের ঘটনায় ৮২টি মামলা রুজু হয়, যার মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জে ৪০টি ও ফতুল্লা থানাতেই ২১টি, যা গিয়াসের নির্বাচনী এলাকা।

১২ ডিসেম্বর তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাইনবোর্ড এলাকায় বাস ভাংচুর ও সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটায় গিয়াসপন্থী সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন। তাকে সরাসরি বিএনপি বহিষ্কার করে দেয়। গিয়াসউদ্দীনের ছেলে রিফাত জেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব পদে বসে ইপিজেডের ঝুট নিয়ন্ত্রণে নামে। এ নিয়ে থানা কৃষকদলের আহ্বায়ক তৈয়ম হোসেন বাদী হয়ে মহানগর মহিলা দলের সদস্য সচিব আয়েশা আক্তার দিনা, মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব সাহেদ আহমেদ ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মমিনুর রহমান বাবুকে আসামী করে কোর্টে মামলা করে দেয়। যদিও তারা সবাই ঝুট ব্যবসায় নেমেছেন। দাবি করেন বৈধ ঝুট ব্যবসায়ী!

যদিও নানা বিতর্কের কারনে ১ জানুয়ারী জেলা কৃষকদলের কমিটিও বিলুপ্ত ঘোষণা করে দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। ২০২৪ সালের ১২ জানুয়ারী শাহিন মিয়াকে আহ্বায়ক ও কাউসার আহমেদ রিফাতকে সদস্য সচিব করে জেলা কৃষকদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল।

৫ আগস্টের পর নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারনে ১৭ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রদল সহ তাদের আওতাধীন সকল ইউনিট কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। এর আগে ২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারী নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। নাহিদ হাসান ভূঁইয়াকে সভাপতি ও জুবায়ের রহমান জিকুকে সাধারণ সম্পাদক করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের কমিটি দেয় ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ। কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি সুলতান মাহমুদ, সহসভাপতি সাগর সিদ্দিকী, সহসভাপতি আতা ই রাব্বি, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক জাকারিয়া ভূঁইয়া, যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক আবু তাহের রিফাত এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান দোলন।

একই দিন নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের ৬ সদস্যের নতুন আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। কমিটিতে সভাপতি পদে রাকিবুর রহমান সাগরকে ও সাধারণ সম্পাদক পদে রাহিদ ইসতিয়াক সিকদার। কমিটিতে সিনিয়র সহসভাপতি শাহাজাদা রতন, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আজিজুল ইসলাম রাজিব, যুগ্ম সম্পাদক ওসমান প্রীতম, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রাসেল।

৮ সেপ্টেম্বর নাসিকের ৭নং ওয়ার্ডে দখলবাজি ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য শামীম ঢালী ও মহানগর ছাত্রদলের তৎকালীন সভাপতি রাকিবুর রহমান সাগরের অনুগামীদের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওইদিন রাতে ৭নং ওয়ার্ড বিএনপির কার্যালয় ভাংচুর, বেগম খালেদা জিয়া ও জিয়াউর রহমান, তারেক রহমানের ছবি ভাংচুরের ঘটনা ঘটনায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।

এ নিয়ে ১০ সেপ্টেম্বর পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ও মানববন্ধন করে একে অপরকে দোষারোপ করেন। ওই দিন নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে ৭নং ওয়ার্ডবাসী সাগরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি দখলবাজির অভিযোগ তুলেন। একই দিন সকালে সাগরের পক্ষে ও শামীম ঢালীর বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলে মানবন্ধন ও সমাবেশ করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।  

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য শামীম ঢালী বলেছিলেন, ‘আমাদের সিটির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা, মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুর রহমান সাগর এমন কোনো জায়গা নেই, যেখান থেকে চাঁদাবাজি করেননি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দোকানে চাঁদা তোলে, ময়লার গাড়ি থেকেও তিনি চাঁদা দাবি করেছেন। আমাদের ওয়ার্ডের পাশের ইপিজেডের ভেতরে কয়েকটি পোশাক কারখানায় হুমকি ধামকি দিয়ে ঝুট বের করছে মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সাগর। সাবেক যুবলীগ নেতা মতিউর রহমান মতি ও পানি আক্তারের বাহিনী নিয়ে এ সব চাঁদাবাজি করছেন তিনি। আমরা তাতে বাধা দেওয়ায় সাগরের সন্ত্রাসী বাহিনী বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর করেছে। দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন।