আনাড়ি কর্মীদের হাতে যুবদলের নেতৃত্ব: রাজপথের ত্যাগীরা বিতাড়িত বঞ্চিত!

সান নারায়ণগঞ্জ

কৌশলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের রাজপথের ত্যাগী নির্যাতিত নিপীড়িত মামলা মামলার শিকার সিনিয়র নেতাদের বিতাড়িত করা হয়েছে। একই সঙ্গে বঞ্চিত করা হয়েছে বহু ত্যাগী নির্যাতিত নেতাকর্মীদের। মুলত মহানগর যুবদলের নেতৃত্ব জুনিয়র নেতাদের হাতে তুলে দেয়ার ফলে তাদের চেয়েও আরো যারা জুনিয়র নেতা, সেইসব নেতাকে ঠাই দেয়া হয়েছে কমিটিতে।

এভাবে দীর্ঘদিন যেসব নেতাকর্মীরা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন তাদেরকে বিতাড়িত করা হয়েছে কৌশলে। যেসব নেতাদের কমিটিতে ঠাঁই দেয়া হয়েছে সেই সারির নেতাদের চেয়ে অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীরা কমিটিতে সদস্য পদ না পেলেও অনেক আনকোড়া আনাড়ি ধাচের নেতাকর্মীরা হয়েছেন মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। যেসব নেতাদের মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক পদে রাখা হয়েছে তাদের মধ্যে দু‘তিনজন বাদে বাকিদের চেহারাতেও রাজনীতিতে সুপরিচিতির ছাপ নাই।

কর্মীদের অভিযোগ, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের মত একটি শক্তিশালী সংগঠনকে আনাড়ি কর্মীদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিয়েছে কেন্দ্রীয় যুবদলের শীর্ষ নেতারা। মুলত মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল ও সদস্য সচিব সাহেদ আহমেদের বিশেষ ভালোবাসায় ম্যানেজ হয়ে এই জুনিয়রদের দিয়ে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। কিন্ত্র দলের কঠিন সময়ে গত সাড়ে ১৫ বছর যারা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন এমন বঞ্চিত নেতার সংখ্যা আরো দিগুণ। অনেক ত্যাগী যেসব নেতারা নেতৃত্ব প্রত্যাশা করেছিলেন, সেইসব নেতাদের কর্মীতুল্যদের করা হয়েছে যুগ্ম আহ্বায়ক।

গত ১৪ জানুয়ারী নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের ৫১ সদস্য বিশিষ্ট লম্বা আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় যুবদল। কমিটিতে ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট তিন সদস্যের গঠিত কমিটির আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাগর প্রধান ও সদস্য সচিব পদে সাহেদ আহমেদকে বহাল রেখে এই কমিটি লম্বা করা হয়, যা যুবদলের রাজনীতিতে অতীতে এমনটা দেখা যায়নি। আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর আবারো আহ্বায়ক কমিটি লম্বা অর্থাৎ নেতাদের ভাষায় আহ্বায়ক কমিটি নাকি পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে।

নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, ২০১২ সালে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের নেতৃত্ব পান মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। এর আগে তিনি সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, ওই কমিটিতে সভাপতি ছিলেন প্রয়াত জাহাঙ্গীর আলম। পরবর্তীতে খোরশেদের সঙ্গে নেতৃত্বে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হোন সানোয়ার হোসেন, যিনি বর্তমানে শয্যাশয়ী। এরপর খোরশেদের সঙ্গে নেতৃত্বে সদস্য সচিব ও পরবর্তীতে সাধারণ সম্পাদক হোন মমতাজ উদ্দীন মন্তু। মমতাজ উদ্দীন মন্তু সভাপতি থাকাকালে সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন মনিরুল ইসলাম সজল।

২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট মনিরুল ইসলাম সজলকে আহ্বায়ক ও সাহেদ আহমেদকে সদস্য সচিব করা হয়। ওই সময় নেতৃত্ব প্রত্যাশি ছিলেন মহানগর যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজপথের ত্যাগী নেতা রানা মুজিব, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক মাজহারুল ইসলাম জোসেফ, মহানগর যুবদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন শোখনের মত নেতারা। কিন্তু সিনিয়র নেতাদের বাদ দিয়ে মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সাহেদ আহমেদকে সদস্য সচিব ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম সজলকে আহ্বায়ক পদে দায়িত্ব দেয় কেন্দ্রীয় যুবদল।

এ ছাড়াও মহানগর যুবদলের নেতৃত্ব প্রত্যাশিদের মধ্যে মহানগর যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন মন্টি, জুয়েল প্রধান, জুয়েল রানা, মঞ্জুরুল আলম মুসা, আল আমিন খান, আহাম্মদ আলী, মাহাবুবুল হাসান জুলহাস, বন্দর থানা যুবদলের সভাপতি আমির হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আলী নওশাদ তুষার, সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী সোহাগ, বন্দর উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম রিপন, যুবদল নেতা রাসেল আহমেদ মনির, নাজমুল কবির নাহিদ, শওকত খন্দকার, সরকার মুজিব, মিঠু আহমেদ, মুসা মিয়া, শহীদ, শাহজালাল কালুর মত রাজপথের ত্যাগী নির্যাতিত সক্রিয় নেতারাও মহানগর যুবদলের ৫১ সদস্যের লম্বা কমিটিতে ঠাঁই পায়নি।

এদিকে গত ১৪ জানুয়ারী ঘোষিত ৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে পূর্বের তিন সদস্যকে বহাল রেখে যুগ্ম আহ্বায়ক পদে ১১ জন ঠাঁই পেয়েছেন। তারা হলেন- নুরে এলাহী সোহাগ, রুহুল আমিন, সাজ্জাদ হোসেন কমল, শেখ মোহাম্মদ অপু, আব্দুর রহমান, মোফাজ্জল হোসেন আনোয়ার, শাকিল মিয়া, আহসান খলিল শ্যামল, সাইফুল আলম সজিব, জাকির হোসেন সেন্টু, আক্তারুজ্জামান মৃধা।

কমিটিতে সিনিয়র নেতাদের পূর্বে ঠাঁই পেয়েছেন ছাত্রদলের সাবেক নেতা নূরে এলাহী সোহাগ। সিনিয়র নেতা আক্তার হোসেন মৃধা ও আব্দুর রহমানকে রাখা হয়েছে শেষের দিকে। এছাড়াও শেখ মোহাম্মদ অপু ছিলেন মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক, মহানগর যুবদলেরও সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তাকে রাখা হয়েছে পরের সিরিয়ালে। এদের সঙ্গে জাকির হোসেন সেন্টু ছাড়া বাকিদের সবার মুখ নতুন। শুধুমাত্র সজল ও সাহেদের কাছে সুপরিচিত তারাই কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক পদে বেশি। সদস্য পদেও একই দশা করেছেন সজল ও সাহেদ। সর্বপরি বলা যায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের জুনিয়র কমিটি।