সান নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়ন কৃষকদলের উদ্যোগে কৃষক সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফার বিস্তারিত তুলে ধরেছেন সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও উপজেলা কৃষকদলের সাবেক সভাপতি সেলিম হোসেন দিপু। ওই সময় তিনি বিশেষ অতিথি হিসেবে কৃষকদের উদ্দেশ্যে দৃষ্টিনন্দন বক্তব্য রাখেন।
সেলিম হোসেন দিপু নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, প্রিয় ভাইয়েরা আপনারা জানেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৩১ দফা ঘোষণা করেছেন। ৩১ দফার আদলে এই দেশ পরিচালিত হবে, যদি আপনাদের ভোটে আমাদের দল বিএনপি ক্ষমতায় আসে। এই ৩১ দফার মধ্যে এমন কোন বিষয় নাই যা বাদ পড়েছে। যার মধ্যে কৃষকদের নিয়ে উৎপাদন বিপনন সুযোগ সুবিধার সুরক্ষার মাধ্যমে কৃষকের ন্যায্য মুল্য নিশ্চিত করা হবে। কৃষকের ন্যায্যমুল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হবে, শস্য বিভাগ কৃষকের জন্য, পশু সম্পদ বিভাগ, মৎস্য সম্পদ বিভাগ, পোল্ট্রি সম্পদ বিভাগ প্রবর্তনের মাধ্যমে কৃষকের উৎপাদন সুরক্ষিত রাখা হবে।
তিনি আরো বলেন, প্রান্তিক কৃষক পণ্যের সঠিক মুল্য পায়না। আবার যারা ক্রয় করে খায় তারাও সঠিক দামে কিনতে পারছেনা। পন্য হাত বদল করে মধ্যস্বত্বভোগী লাভবান হয়। এদেরকে দমন করা হবে। তারেক রহমানের নির্দেশে কৃষকদল সারাদেশে কৃষকদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কৃষকদলকে ধন্যবাদ জানাই সুন্দর আয়োজন করায়।
সেলিম হোসেন দিপু বলেন, পাশাপাশি আরেকটি কথা বলি, স্বৈরাচারীরা দেশ থেকে চলে গেছে, কিন্তু তাদের দোসররা কিন্তু রয়ে গেছে। দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য, সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য চক্রান্ত শুরু করেছে। গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানের ঘটনাগুলো আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। আমরা আপনারা সবাই সজাগ থাকবো যেনো স্বৈরাচারী দোসরদের প্রতিহত করতে পারি। তারা ঘাপ্টি মেরে বসে আছে, যে কোনো সময় আমার উপর, আপনার উপর আঘাত হানতে পারে। স্বৈরাচারীরা ও তাদের দোসরেরা দেশের ব্যাংক লুট করেছে, খুন গুম রাহাজানি করেছে, আমাদের উপর হামলা মামলা জেল জুলুম নির্যাতন চালিয়েছে। তারেক রহমানও প্রতিরোধ চান, আমরাও প্রতিশোধ চাই, তারেক রহমান বলেছেন এই ৩১ দফা বাস্তবায়িত হলেই প্রতিশোধ নেয়া হয়ে যাবে। এই ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিগত স্বৈরাচারী সরকারকে জবাব দেয়া হয়ে যাবে।
তিনি সোনারগাঁয়ের রাজনীতি সম্পর্কে সেলিম হোসেন দিপু বলেন, আপনারা জানেন কিছুদিন যাবত সোনারগাঁয়ে ৫ আগস্টের পরের নেতারা বিভিন্ন কথা বলছে সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপি ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানকে নিয়ে। তারা ছিল স্বৈরাচারীর দোসর। তারা ৫ আগস্টের পূর্বে বিএনপির কোনো আন্দোলন সংগ্রামে ছিল না। ৫ আগস্টের পর সোনারগাঁয়ের মাঠে এসে বড় বড় কথা বলছে তারা। তারা মিথ্যা বানোয়াট বক্তৃতা দিয়ে গণমাধ্যমে নিউজ করিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চায়। তারা কোনোদিন বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে ছিল না, এখন ত্যাগী নির্যাতিত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কথা বলে হাইলাইট হতে হতে চায়।
তিনি ওইসব সুবিধাবাদী নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা যারা বিগত সাড়ে ১৫ বছর স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে করেছি, হামলা মামলা জেল জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছি, তখন আপনারা কোথায় ছিলেন? আপনারাতো তখন আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টির নেতাদের সঙ্গে ওঠাবসা করেছেন। কখনো আওয়ামীলীগের হয়ে, কখনো জাতীয়পার্টির হয়ে কাজ করেছেন। এখন বড় বড় কথা বলছেন। আপনারা তো যারা গুম খুন করে গেছে, তাদের বিরুদ্ধে কথা বলছেনা। আপনারা আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টির হয়ে বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। আপনারা সাবধান হয়ে যান। উল্টাপাল্টা কথা বলে স্বৈরাচারী দোসরদের প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছেন। সোনারগাঁয়ের নির্যাতিত জনতা আপনাদের ছাড় দিবে না।
জানাগেছে, বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষক জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করার লক্ষ্যে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল সারাদেশে তিন মাসব্যাপী ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষক সমাবেশের আয়োজন করছে। তারই অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নে এক কৃষক সমাবেশ এবং কৃষকের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়।
৮ ফেব্রুয়ারী শনিবার বিকেলে নোয়াগাঁও ইউনিয়ন লাধুরচর স্কুল মাঠে ইউনিয়ন কৃষক দলের আয়োজনে এই সমাবেশ এবং কম্বল বিতরণ করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন সেলিম হোসেন দিপু।
নোয়াগাঁও ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি মোঃ নাছিরের সভাপতিত্বে নোয়াগাঁও ইউনিয়ন কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ চঞ্চল মিয়ার সঞ্চালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ১নং সহ-সাধারণ সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষক দলের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট শরিফুল ইসলাম মোল্লা।
সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি আল মুজাহিদ মল্লিক, বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন-সোনারগাঁও উপজেলা কৃষক দলের আহবায়ক ফজলু মেম্বার, বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সাবেক সদস্য অধ্যাপক নাসিরউদ্দীন, নোয়াগাঁও ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি ডাক্তার মিজানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক, সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক মোঃ সেলিম হোসেন দিপু, সোনারগাঁ উপজেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব বাবুল হোসেন বিজয়, নোয়াগাঁও ইউনিয়ন বিএনপি’র সিনিয়র সহ সভাপতি সেলিম ভূইয়া, সহ সভাপতি নাসিরউদ্দিন, নোয়াগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পারভেজ, সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা ওমর ফারুক, সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপি সদস্য আতাউর রহমান, মোগরাপাড়া ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি সুমন, মোগরাপাড়া ইউনিয়ন কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক মামুন মিয়া।
এছাড়াও পিরোজপুর ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি দেলোয়ার বেপারী, সনমান্দী ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি মোকবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক চঞ্চল, জামপুর ইউনিয়ন কৃষক দল নেতা শাহ আলম, পিরোজপুর ইউনিয়ন কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষক দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় কৃষক দলের নেতাকর্মীরা সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় শতাধিক কৃষকের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন।
সমাবেশে বক্তারা কৃষকদের সংগঠিত করার আহ্বান জানান এবং কৃষি ও কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কার্যক্রম আরও বেগবান করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।