সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহামুদ। তার কঠিন সময়েও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির বেশকিছু নেতা তার সঙ্গ ছাড়েননি। অথচ যাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন তাদের অনেকেই মামুন মাহামুদকে পল্টি দিয়েছেন সাময়িক লাভবান হওয়ার আশায়, কেউবা প্রতিদ্বন্ধিদের ভয়ে। মামুন মাহামুদের কঠিন সময়ে তার পাশে থেকে রাজনীতি করেছেন এমন নেতাদের সংখ্যাও বেশ। মামুন মাহামুদের পাশে রাজনীতি করায় অনেকেই হামলা মামলার শিকার হয়েছেন। সামাজিকভাবে ও রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করতে দল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা করানো হয়েছিল এই ৫ আগস্টের পরে।
৫ আগস্টের পর সিদ্ধিরগঞ্জে মামুন মাহামুদের ঘনিষ্ঠ নেতাকর্মীরা চরম বিপাকে পড়েছিলেন। কিন্তু শত বাধা বিপত্তির পরেও মামুন মাহামুদের নেতৃত্বে রাজনীতি করে গেছেন। দু’একজন সাময়িকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় মামুন মাহামুদকে পল্টি দিয়ে স্রোতে গা ভাসিয়েছেন। কিন্তু তাদেরই আজকে তীরে এসে তরী ডুবেছে। ২ ফেব্রুয়ারী অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে আহ্বায়ক করে জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। আবারো জোয়ারে ভাসছেন সিদ্ধিরগঞ্জে মামুন মাহামুদের অনুগামীরা। কিন্তু মামুন মাহামুদের খারাপ সময়ে তাকে পল্টি দিয়ে সব হারিয়েছেন পল্টিবাজরা।
স্থানীয়রা নেতাকর্মীরা জানান, মামুন মাহামুদের কঠিন সময়েও তার পাশে থেকে রাজনীতি করেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী মনির হোসেন, অকিল উদ্দীন ভুঁইয়া, রিয়াজুল ইসলাম, বিএনপি নেতা লিয়াকত আলী লেকু, সামসুজ্জামান শেখ, মহানগর মহিলা দলের সদস্য সচিব আয়েশা আক্তার দিনা, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জুয়েল রানা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন, মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আক্তারুজ্জামান মৃধা, বিএনপি নেতা রাকিব দেওয়ান, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এরশাদ আলী সহ আরো বেশকজন নেতাকর্মী। এদের মধ্যে ৫ আগস্টের পর খোকনকে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানো হয় এবং খোকন ও অকিল উদ্দীনকে বহিষ্কারের ঘোষণাও করা হয়। দিনার বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা করে দেয়া হয়।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, বিএনপির সাবেক নেতা তৈমূর আলম খন্দকারকে বিএনপি থেকে বহিষ্কারের পর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতৃত্বশূণ্যতা দেখা দিলে ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর সাবেক এমপি বিএনপির রাজনীতিতে নিস্ক্রিয় মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীনকে আহ্বায়ক ও জেলা যুবদলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকনকে সদস্য সচিব এবং জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক (সাইনিং পাওয়ারসহ) করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় বিএনপি। এর আগে ২০০৯ সাল থেকে বিএনপির রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে গিয়াসের কোনো ভুমিকা ছিল না। কিন্তু সেই থেকে রাজপথের আন্দোলনে বহাল ছিলেন মামুন মাহমুদ ও তার নেতাকর্মীরা। জেলা যুবদলের সভাপতি পদে থেকেও বীরত্ব দেখিয়েছিলেন রাজপথে মামুন।
এর আগে ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঘোষিত জেলা বিএনপির কমিটিতে তৈমুর আলম খন্দকারকে আহ্বায়ক ও মামুন মাহামুদকে সদস্য সচিব করে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় বিএনপি। তৈমূর আলমকে বহিষ্কারের পর কিছুদিন ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন মনিরুল ইসলাম রবি এবং এরপর নাসির উদ্দীন। ওই সময় ২০২২ সালের ২৮ জানুয়ারী তৎকালীন জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক নাসির উদ্দীন ও সদস্য সচিব মামুন মাহামুদ সিদ্ধিরগঞ্জে আব্দুল হাই রাজুকে আহ্বায়ক ও শাহআলম হীরাকে সদস্য সচিব করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির কমিটি ঘোষণা করেন। এই কমিটিতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মিয়ার হাতে ২০১৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে ফুল দিয়ে আওয়ামীলীগে যোগদানকারী টিএইচ তোফাকেও যুগ্ম আহ্বায়ক করেছিলেন মামুন মাহামুদ।
একই বছর ২০২২ সালের ১৫ এপ্রিল সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সম্মেলনের আয়োজন করা হলে সেই সম্মেলনে গিয়াসউদ্দীন পন্থী সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে হামলা ও ভাংচুর চালিয়ে সম্মেলন পণ্ড করে দেয়া হয়। একই মাসের ২৫ এপ্রিল ঢাকায় বিএনপির পার্টি অফিস থেকে বের হয়ে বাড়ি ফেরার পথে মামুন মাহামুদ সন্ত্রাসী হামলার শিকার হোন। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার পেটে ছুরিকাঘাত করে দূর্বৃত্তরা।
পরবর্তীতে ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর ঘোষিত জেলা বিএনপির কমিটিতে গিয়াস জেলা বিএনপির দায়িত্ব পেয়ে ইকবালকে থানা বিএনপির সদস্য সচিব ও পরে সাধারণ সম্পাদক বানান। এর আগে ২০২২ সালের ১৪ জুন তৎকালীন জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবি ও সদস্য সচিব মামুন মাহামুদ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির রাজু ও হীরার কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।
গিয়াস দায়িত্ব পেয়ে ২০২৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী বিএনপির রাজনীতি থেকে নিস্ক্রিয় মাজেদুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও ইকবালকে সদস্য সচিব পদে বসান। যদিও এই কমিটিতে মামুন মাহামুদের অনুগামী অকিল উদ্দীন ভুঁইয়া ও গাজী মনির হোসেনকে যুগ্ম আহ্বায়ক পদে রাখা হয়। একই বছরের ১৮ এপ্রিল থানা বিএনপির সম্মেলনে মাজেদুল ইসলাম সভাপতি ও ইকবাল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। গত ১২ ডিসেম্বর বাস ভাংচুর ও এক সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার অপরাধে সাময়িকভাবে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন ইকবাল হোসেন।
এদিকে ৫ আগস্টের পর সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন সেক্টর নিয়ন্ত্রণে নিতে থাকে গিয়াসপন্থীরা। মামুন মাহামুদ ক্লিন ইমেজধারী হওয়ায় এসব দখলবাজি চাঁদাবাজি, মামলা বানিজ্য, ঝুট সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ছিলেন না তিনি ও তার নেতাকর্মীরা। কিন্তু লোভ সামলাতে পারেনি আব্দুল হাই রাজু, টিএইচ তোফা ও যুবদল নেতা শহিদুল ইসলাম। শাহআলম হীরাও মামুন মাহামুদের সঙ্গ ছেড়ে নীরব হয়ে যান। তারা মামুন মাহামুদকে পল্টি দিয়ে গিয়াসউদ্দীনের হাতে ফুল দিয়ে গিয়াস বলয়ে অংশগ্রহণ করেন। শহিদুল ইসলাম গিয়াস বলয়ে যোগদান করে ঝুটের ব্যবসার নিয়ন্ত্রণও পেয়েছেন বলে জানাগেল। রাজু ও তোফা কি পেয়েছেন সেটা জানা যায়নি। ফলে কিছুদিনের জন্য অধর্য্য হয়ে সাময়িক লাভের আশায় মামুন মাহামুদকে পল্টি দিয়ে আম-ছালা হারালেন বিএনপির ৪জন নেতা।