বিএনপিতে গণতন্ত্র নাই, কোটি কোটি টাকায় নমিনেশন বিক্রি হয়: গিয়াস

ডেস্ক রিপোর্ট, সান নারায়ণগঞ্জ

বিএনপিতে গণতন্ত্র নাই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য, সাবেক এমপি ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন। একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ তুলেছেন, জাতীয় নির্বাচনে কোটি কোটি টাকায় দলের নমিনেশন বিক্রি হয়। তিনি এও বলেছেন, যে দলে গণতন্ত্র নাই, আমরা আবার রাষ্ট্রের গণতন্ত্র চাই। নির্বাচনে বস্তায় বস্তায় টাকা ঢালতে হয়, টাকায় নমিনেশন বিকি কিনি হয়।

২৬ ফেব্রুয়ারী ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুর মোহনায় নৌ বিহারে যাওয়া অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন গিয়াসউদ্দীন। ওই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে ভাইরাল হয়ে যায়। বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে কঠোর সমালোচনাও শুরু হয়। মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব সাহেদ আহমেদ ২৮ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার সিদ্ধিরগঞ্জে যুবদলের এক সমাবেশ থেকে গিয়াসউদ্দীনের এই বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন।

এখানে উল্লেখ্যযে, গত ২৪ ডিসেম্বর গিয়াসউদ্দীন ও গোলাম ফারুক খোকনের নেতৃত্বাধীন জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তদন্ত কমিটির সুপারিশের মাধ্যমে কমিটি বিলুপ্ত করা হয় বলে জানান দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর গিয়াসউদ্দীনকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় বিএনপি। ২০২৩ সালের ১৮ জুন জেলা বিএনপির সম্মেলনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় গিয়াসউদ্দীন সভাপতি ও গোলাম ফারুক খোকন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হোন।

২ ফেব্রুয়ারী অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে আহ্বায়ক করে জেলা বিএনপির ৫ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে আরো তিনজনকে যুগ্ম আহ্বায়ক ও সেখানে একমাত্র সদস্য পদে গিয়াসউদ্দীনকে রাখা হয়। তারপর থেকে গিয়াসের নেতাকর্মীরা হতাশায় ভুগছিলেন। সেই হতাশা ক্ষোভ থেকে নৌ বিহারে নেতাকর্মীরা বক্তব্য রাখলে সেই বক্তব্যের জবাবে উপরোক্ত মন্তব্য করেন গিয়াস।

গিয়াসউদ্দিন তার বক্তব্যে বিএনপির কড়া সমালোচনা করে বলেন, ‘বিএনপিতে গণতান্ত্রিক চর্চা না থাকায় প্রকৃত নেতাদের কোনো মূল্যায়ন নেই। যে নেতা হয় সে স্বৈরশাসক হয়ে যায়। কারণ তার কোনো জবাবদিহিতা নেই। দলের ভেতর নেই গণতন্ত্র আর দল সারা দিন চিৎকার পারবা আমরা রাষ্ট্র গণতন্ত্র চাইবা- এই চাওয়াটাওতা অন্যায়। যখন নিজের দলে গণতন্ত্র নেই, সেখানে রাষ্ট্রের কাছ গণতন্ত্র চাই! গঠনতন্ত্র তৈরি হয়েছে দল পরিচালনার জন্য। সেখান লেখা আছে- সর্বস্তরের কমিটি নির্বাচিত হতে হবে কাউন্সিলরর ভোটের মাধ্যমে। এই যে অধিকার আমাদের না দিয়ে অ্যাপায়নটেড নেতা বানানো হয়। কেন্দ্র থেকে নিয়োগ দেয়া হয়। যেন দল নয়, চাকরি করি, গোলামি করি। কারোর দাসত্ব করি আমরা। নিয়োগ দেয়া হলে ওই বাড়িতে ফুল দিয়ে ভরে যায়। কারণ যে অ্যাপায়নটেড হয়েছে তার বাড়িত ফুল নিয়ে যাবে, সে যেন আবার কোনো একটা পদ অ্যাপায়নটেড হতে পারে। নির্লজ্জ বেহায়ার মতো অনেক সিনিয়র নেতাকে জুনিয়রর কাছে তোষামাদি করতে হয়। এভাবে চলতো পারে না একটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ। আপনাদের সামনে আমি খোলাখুলি আলাপ করছি এজন্য আমি বহিষ্কার হতে পারি- ‘আই ডোন্ট কেয়ার’। আমি একজন মুক্তিযাদ্ধা। জীবন বাজি রেখে দেশ স্বাধীন করেছি এই রাজনীতিক কারো কাছে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার জন্য না, কারো কাছে মালিকানাস্বত্ত্ব দেয়ার জন্য না। সৎ মানুষের নেতৃত্বে তখনি প্রতিষ্ঠিত হবে যখন ভোট দিয়ে কর্মীরা নেতা নির্বাচন করতে পারবে।’

মনোনয়ন প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির সাবেক এ সভাপতি বলন, ‘মনোনয়ন নিয়ে কি হয় আপনারা জানেন? মনোনয়ন বিক্রি হয়। কোটি কোটি টাকা মনোনয়ন বিক্রি হয়। এই দেশ এজন্য আমরা স্বাধীন করেছি? এজন্য আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করি? নিশ্চয়ই না। ভালো মানুষের কোনো অভাব নেই বিএনপি বা অন্য দল। কি ভালো মানুষের টাকা না থাকলে সমস্যা। সে নমিনেশন পাবে না। কারণ কি টাকার গাট্টি নিয়ে দিতে হবে। বিক্রি হয় নমিনশন। এমন রাজনীতি যদি থাকে তাহলে বাংলাদেশের আকাশে কখনো নতুন সূর্য উদয় হবে না।’

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে বলেন, তিনি (গিয়াসউদ্দিন) যে বক্তব্য দিয়েছেন তা তার ব্যক্তিগত এবং দলীয় গঠনতন্ত্রবিরোধী। তিনি দলের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। দলীয় কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারকরা ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জেনেছেন। দলীয় শীর্ষ নীতি নির্ধারকরাই তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।