সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
শুরুতে ঝড় তুলে দলকে পথে রেখেছিলেন সৌম্য। মাঝে মুশফিকুর রহিমও গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছেন। শেষদিকে মোসাদ্দেক ঝড়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডে শুক্রবার ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজের ফাইনাল ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বৃষ্টি আইনে ৫ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বহুজাতিক কোনো শিরোপা জিতল বাংলাদেশ।
ডাবলিনের ম্যালাহাইডে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেয়া ২১০ রানের লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে ব্যাট করতে নেমে ৭ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটে দুর্দান্ত জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। সৌম্য ২৭ বলে ব্যক্তিগত অর্ধশত পূরণ করার পর ৪১ বলে ৬৬ রান করে আউট হন। এই ইনিংস খেলতে তিনি ৯টি চার মারেন ও তিনটি ছক্কা হাঁকান। ওয়ানডেতে এটি তার ১০ম হাফ সেঞ্চুরি।
সাত নম্বর পজিশনে ব্যাট করতে নেমে ২৪ বলে ৫২ রান করে অপরাজিত থাকেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তিনি পাঁচটি ছক্কা হাঁকান ও দুইটি চার মারেন। ২০ বলে ব্যক্তিগত অর্ধশত পূরণ করেন মোসাদ্দেক। ওয়ানডেতে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এটি দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি। ওয়ানডেতে মোসাদ্দেকের এটি ব্যক্তিগত দ্বিতীয় অর্ধশত।
২২ বলে ৩৬ রান করেন মুশফিকুর রহিম। ১৩ বলে ১৮ রান করেন তামিম ইকবাল। ১৪ বলে ১৭ রান করেন মোহাম্মদ মিথুন। ১৯ রান করে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের মধ্যে শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ২টি, রেমন রেইফার ২টি ও ফ্যাবিয়ান অ্যালেন ১টি করে উইকেট শিকার করেন।
ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ শুরু থেকেই দারুণ খেলছিল। সৌম্যর ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দলীয় ৫০ রান পূরণ করে ৫ ওভারে। দলীয় শতরান পূরণ হয় ১১তম ওভারে। দলীয় শতরানের মধ্যে দুইটি উইকেট পড়ে যায় বাংলাদেশের। দলীয় ৫৯ রানে শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের বলে তুলে মারতে গিয়ে জ্যাসন হোল্ডারের হাতে ক্যাচ হন তামিম ইকবাল।
অন্য ম্যাচে সাব্বির তেমন ব্যাট করার সুযোগ না পেলেও টিম ম্যানেজমেন্ট তার উপর আস্থা রেখে তাকে ওয়ানডাউনে ব্যাটিংয়ে পাঠায়। কিন্তু তিনি আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি। দুই বল খেলে কোনো রান না করেই ফিরে যান তিনি। তামিম ফিরে যাওয়ার ওই ওভারেই এলবিডব্লিউ হন সাব্বির।
এরপর সৌম্য-মুশফিক জুটিতে এগোতে থাকে বাংলাদেশ। ১২তম ওভারে রেমন রেইফারের বল তুলে মারতে গিয়ে শেল্ডন কটরেলের হাতে ধরা পড়েন সৌম্য। ১৪তম ওভারে মুশফিকুর রহিমকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন রেইফার। ১৬তম ওভারে মোহাম্মদ মিথুনও এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান। তিনি আউট হন ফ্যাবিয়ান অ্যালেনের বলে।
শুরুতে রানের গতি ঠিক থাকলেও মাঝে কিছু উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। শেষ ১৮ বলে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ২৭ রান। কিন্তু সব চিন্তা দূর করে দেন মোসাদ্দেক হোসেন। ফ্যাবিয়ান অ্যালেনের করা ২২তম ওভার থেকে ২৫ রান নেন তিনি। এর পরের ওভারেই জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। এই সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ খেলে তিনটিতেই জিতল বাংলাদেশ।
ডাবলিনের ম্যালাহাইডে শুক্রবার ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল ম্যাচটি শুরু হয় বাংলাদেশ সময় বিকাল তিনটা ৪৫ মিনিটে। টস হেরে ব্যাট করতে নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০.১ ওভার খেলা হওয়ার পর বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বৃষ্টি থামলে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে দশটায় পুনরায় খেলা শুরু হয়। ম্যাচের ওভার কমিয়ে ২৪ ওভার করা হয়।
বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার আগে দুর্দান্ত ব্যাট করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দেদারসে রান তুলেছিল তারা। দুই ওপেনার শাই হোপ আর সুনিল আমব্রিস দুজনই ব্যক্তিগত অর্ধশত পূরণ করেন। খেলা বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ছিল ২০.১ ওভারে বিনা উইকেটে ১৩১ রান। তখন শাই হোপ ৬৮ ও সুনিল আমব্রিস ৫৯ রান করে অপরাজিত ছিলেন। পুনরায় খেলা শুরু হলে ইনিংসের ২৩তম ওভারে মিরাজের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের হাতে ক্যাচ হন শাই হোপ।
নির্ধারিত ২৪ ওভারে ১ উইকেটে ১৫২ রান সংগ্রহ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ২১০ রান। ক্যারিবীয় ওপেনার শাই হোপ ৬৪ বলে ৭৪ রান করে আউট হন। ৬৯ রান করে অপরাজিত থাকেন সুনিল আমব্রিস। ৩ রান করে অপরাজিত থাকেন ড্যারেন ব্রাভো। টাইগার স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ১টি উইকেট শিকার করেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। আর টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের শাই হোপ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ফল: বৃষ্টি আইনে ৫ উইকেটে জয়ী বাংলাদেশ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস: ১৫২/১ (২৪/২৪ ওভার)
(শাই হোপ ৭৪, সুনিল আমব্রিস ৬৯*, ড্যারেন ব্রাভো ৩*; মাশরাফি বিন মর্তুজা ০/২৮, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ০/২৯, মোস্তাফিজুর রহমান ০/৫০, মোসাদ্দেক হোসেন ০/৯, মেহেদী হাসান মিরাজ ১/২২, সাব্বির রহমান ০/১২)।
বাংলাদেশ ইনিংস: ২১৩/৫ (২২.৫/২৪ ওভার) (লক্ষ্যমাত্রা: ২১০)
(তামিম ইকবাল ১৮, সৌম্য সরকার ৬৬, সাব্বির রহমান ০, মুশফিকুর রহিম ৩৬, মোহাম্মদ মিথুন ১৭, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১৯*, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ৫২*; অ্যাশলে নার্স ০/৩৫, জ্যাসন হোল্ডার ০/৩১, কেমার রোচ ০/৫৭, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ২/৩০, রেমন রেইফার ২/২৩, ফ্যাবিয়ান অ্যালেন ১/৩৭)।
ম্যাচ সেরা: মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (বাংলাদেশ)।
টুর্নামেন্ট সেরা: শাই হোপ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।