সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
ইসলামের পাঁচটি মৌলিক স্তম্ভের একটি হলো যাকাত। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের দু-বছর পর পূর্ণাঙ্গরূপে যাকাতের বিধান ফরয হয়। পবিত্র আল কোরআনের সূরা তাওবার ৬০নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন- ‘আপনি তাদের সম্পদ থেকে সদকা (যাকাত) গ্রহণ করুন। যা দ্বারা তাদেরকে (বাহ্যিক ও আত্মীকভাবে) পবিত্র করবেন এবং তাদের জন্য দোআ করুন, নিশ্চয় আপনার দোআ তাদেরর জন্য প্রশান্তির কারণ হবে।’হাদীস শরীফে এসেছে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা তোমাদের মালের যাকাত প্রদান কর।’
অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে- ‘আমার উম্মতের ধনীদের থেকে যাকাত গ্রহণ করে দরিদ্রদেরকে দেয়া হবে (মেশকাত) বিধানের দিক থেকে ইসলামের মৌলিক অন্য চার স্তম্ভ থেকে যাকাতের গুরুত্ব কোন অংশেই কম নয়। যদি কেউ স্বেচ্ছায় যাকাতের ফরয হওয়াকে অস্বীকার করে তবে অমুসলিম হিসেবে ঘোষিত হবে। ’সর্বপরি বান্দার আর্থিক ইবাদতের এ বিধানটি আল্লাহ তায়ালা ঢালাওভাবে সকলের উপর এবং সব ধরণের সম্পত্তির উপর ফরয করেননি। তাই আসুন যাকাত সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় জেনে নেই।
যাকাত আদায়ের শর্তাবলীঃ
১. মুসলমান হওয়া।
২. প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়া। কাজেই নাবালেগের উপর
যাকাত ওয়াজিব হবেনা।
৩. বুদ্ধি সম্পন্ন হওয়া। পাগলের উপর যাকাত ফরয
না।
৪. স্বাধীন হওয়া।
৫. নেসাব পরিমান মালের মালিক হওয়া।
৬. উক্ত মাল নিজের মৌলিক প্রয়োজন অতিরিক্ত
হওয়া।
৭. উক্ত মালের পূর্ণ মালিক হওয়া।
৮. উক্ত মাল ঋণ থেকে মুক্ত হওয়া।
৯. উক্ত নেসাবের উপর এক বছর অতিবাহিত
হওয়া।
যাকাতের নেসাবঃ
যদি কারো কাছে ১. সাড়ে সাত তোলা পরিমান সোনা অথবা
২. সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা
৩. সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার যে কোন একটির মূল্যের সমপরিমান টাকা-পয়সা বা ব্যবসার মাল থাকে অথবা
৪. যাকাতযোগ্য চারটি (সোনা, রূপা, টাকা-পয়সা ও ব্যবসার মাল) সম্পদই থাকে অথবা দুটি বা তিনটি থাকে যার সমষ্টিমূল্য উপরোক্ত সোনা বা রূপার যেকোন একটির মূল্যের সমপরিমান হয় তবে সে নেসাবের মালিক হিসেবে ধর্তব্য হবে।
যে সকল সম্পদের উপর যাকাত ওয়াজিব হয়ঃ
স্বর্ণ, রূপা, টাকা-পয়সা ও ব্যবসার পণ্য এ চারটি জিনিসের উপর যাকাত আসে। সোনা, রূপা যে অবস্থাই থাকুকনা কেন তা যাকাতযোগ্য সম্পদ হিসাবে ধর্তব্য হবে। চাই নিজের ব্যবহারের জন্য হোক অথবা ব্যবসার জন্য। ফসলি জমি, বাড়ি নির্মাণের জন্য ক্রয়কৃত জমি এবং এমনিতেই ফেলে রাখা যমীনের উপর যাকাত ফরয নয়। তবে এগুলো ব্যবসার উদ্দেশ্যে ক্রয় করলে যাকাত দিতে হবে যদি নেসাব পরিমান হয়। কারো একাধিক বাড়ি আছে তার উদ্দেশ্য হলো বাড়া খাটিয়ে টাকা অর্জন। তাহলে উক্ত বাড়িগুলোর মূল্যের উপর যাকাত আসবেনা।
তবে ভাড়া বাবদ অর্জিত টাকার উপর যাকাত আসবে যদি নেসাব পরিমান হয়। মিল, কলকারখানা ও বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে যে সকল মেশিন রাখা আছে সেগুলোতে যাকাত ওয়াজিব হবেনা। কেননা এগুলো বিক্রির নিয়তে রাখেনি। তবে মেশিন থেকে উৎপন্ন পণ্যে যাকাত আসবে।
যে সকল যানবাহন (রিক্সা, বাস, ট্রাক, লঞ্চ) ইত্যাদি ভাড়ায় খাটানো হয় অথবা উপার্জনের উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা হয় তার মূল্যের উপর যাকাত আসেনা বরং এগুলোর আয়ের উপর যাকাত আসবে তবে এগুলো বিক্রির নিয়ত করলে মূল্যের উপর যাকাত আসবে।
লেখক: মুফতি উসমান গনী কাসেমী