কাকে ‘বদমাইশ’ আখ্যায়িত করলেন শামীম ওসমান?

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন বন্দর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এমএ রশিদ মিয়া। ২১ মে মঙ্গলবার বিকেলে বন্দরে গিয়ে তার মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমান। মনোনয়ন দাখিল শেষে স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে শামীম ওসমান বলেন, ‘বদমাইশের হাত থেকে বন্দরকে রক্ষা করতেই এমএ রশিদ ভাইকে সমর্থন করে নৌকা এনেছি।’ শামীম ওসমানের এমন বক্তব্যের পর নেতাকর্মীদের মাঝে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তাহলে কে সেই বদমাইশ? কারন শামীম ওসমান তার বক্তব্যে কারো নাম উল্ল্যেখ করেননি। ফলে নেতাকর্মীদের মাঝে সেই বদমাইশের নাম জানাটা আগ্রহের ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, ‘আমার প্রার্থী ছিল এম সালাম ও দেলোয়ার হোসেন প্রধান। কিন্তু বন্দর উপজেলা নির্বাচনে বন্দরকে বদমাইশের হাত থেকে রক্ষা করতে মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী এমএ রশিদ ভাইকে সমর্থন করে তাকে এনেছি।’ ২১ মে মঙ্গলবার বিকেলে বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিন্টু বেপারীর কার্যালয়ে নৌকা প্রার্থী এমএ রশিদের মনোনয়ন পত্র দাখিল শেষে উপজেলা অডিটরিয়ামে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন শামীম ওসমান।

অন্যদিকে জানাগেছে, বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামীলীগ থেকে তিন জনের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়। যেখানে এমএ রশিদ সহ জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আবু সুফিয়ান ও মদনপুুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ সালামের নাম ছিল। এমএ সালাম শামীম ওসমানের বলয়ে রাজনীতি করেন।
এর আগে বন্দরের বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী সভা সমাবেশ করে একেএম আবু সুফিয়ান দাবি করেছিলেন তিনিই নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হতে যাচ্ছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি মনোনয়ন পাননি। মনোনিত হয়েছেন এমএ রশিদ।

আরও জানাগেছে, আর এই সুফিয়ান নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর ঘনিষ্ঠ কর্মী। গত বেশকটি নির্বাচনী গণসংযোগে আবু সুফিয়ান বলেছিলেন, ‘মেয়র আইভীর পাশে থেকে উন্নয়ন কিভাবে করতে হয় তা আমি শিখেছি।’ তিনি নির্বাচিত হলে মেয়র আইভীর কাছ থেকে শেখা উন্নয়ন কৌশল নিয়ে বন্দরবাসীর উন্নয়ন করবেন বলে দাবি করে বক্তব্য রেখেছিলেন। নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে শামীম ওসমানের সঙ্গে মেয়র আইভীর রাজনৈতিক বিরোধ রয়েছে।

এর আগে গত বছরের ১৬ জানুয়ারি চাষাড়ায় হকারদের সঙ্গে মেয়র আইভীর সংঘর্ষের ঘটনার একদিন নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে আবু সুফিয়ানের একটি ছবি দেখিয়ে শামীম ওসমান বলেছিলেন, ‘এই সুফিয়ান, যে মেয়র আইভীর বয়ফ্রেন্ড।’

এদিকে বন্দর উপজেলা পরিষদে বর্তমানে চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল। যেহেতু শামীম ওসমান তার বক্তব্যে বন্দর উপজেলাকে বদমাইশের হাত থেকে রক্ষা করেছেন বলে দাবি করেছেন তাহলে প্রশ্ন দেখা দেয় তিনি কাকে এমনটা আখ্যায়িত করলেন।

মঙ্গলবার এমপি শামীম ওসমান আরো বলেন, বন্দর উপজেলাবাসী অস্বস্থিতে ছিল যে, উপজেলা পরিষদে প্রতিনিধিত্ব কোন খারাপ লোক কিংবা বদমাইশের হাতে চলে গেল কিনা। অনেকেই অনেক তদবীর করেছেন কিন্ত জাতির জনকের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সব খবরই রাখেন। তৃনমুল পর্যায়ে খবর নিয়ে তিনি বীরমুক্তিযোদ্ধা এমএ রশিদ ভাইকে নৌকা প্রতীকে নমিনেশন দিয়েছেন।

শামীম ওসমান বলেন, আমার মনে হয় বন্দর উপজেলাবাসী একটা কলংকের হাত থেকে মুক্ত হয়েছে। কালো টাকার কাছে বিক্রি না হয়ে একজন ভাল মানুষ ও রনাঙ্গনের বীর সৈনিককে মনোনীত করেছেন। চেয়ারম্যান প্রার্থী পক্ষে আগামীকাল (বুধবার) বিজয় মিছিল করব আমরা।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত শহিদ মোহাম্মদ বাদল, মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আরজু রহমান ভূঁইয়া, ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম সাইফুল্লাহ বাদল, সাধারণ সম্পাদক এম শওকত আলী, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান, বন্দর থানা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবেদ হোসেন, মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, মহানগর আওয়ামীলীগের সদস্য এহসানুল হাসান নিপু, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভূইয়া সাজনু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন আহমেদ দুলাল প্রধান, বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সাবেক কৃষি বিষয়ক সম্পাদক শাহজাহান মোল্লা, বন্দর থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খান মাসুদ ও মহানগর ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক হাসনাত রহমান বিন্দু প্রমূখ।