সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সাহেদ আহমেদ ও সেক্রেটারি মমিনুর রহমান বাবুর নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করলেন মহানগর ছাত্রদলের একাংশের নেতারা। যারা মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি ও সেক্রেটারিকে বাদেই মহানগর ছাত্রদলের ব্যানারে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে দোয়া মাহফিল করেছেন। যেখানে নারায়ণগঞ্জে মহানগর বিএনপির বেশকজন শীর্ষ নেতাও উপস্থিত ছিলেন। যদিও আয়োজকরা দাবি করছেন এই কর্মসূচিটি মহানগর ছাত্রদলের ছিল। কিন্তু সভাপতি ও সেক্রেটারি দাবি করছেন সেটা মহানগর ছাত্রদলের কর্মসূচি ছিল। এতেই প্রতিয়মান হয় মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি ও সেক্রেটারির প্রতি একাংশের নেতাদের অনাস্থা। কিন্তু ওই কর্মসূচিটিতে যাদেরকে দাওয়াত করা হয়েছিল তারা উপস্থিত হয়ে পরবর্তীতে বলেছেন মহানগর ছাত্রদলের ব্যানারে হবে সেটা তারা জানতেন না। সর্বপরি মহানগর ছাত্রদলের রাজনীতিতে এখন দ্বিধাবিভক্তি দৃশ্যমান।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলে বাড়ছে সমালোচনা। সংগঠনের মধ্যে কোন চেইন অব কমান্ড নেই। সংগঠনের সভাপতি ও সেক্রেটারির প্রতি আস্থা হারিয়েছে সংগঠনের নেতারা। যার ফলে সংগঠনের সভাপতি ও সেক্রেটারিকে বাদ দিয়েই মহানগর ছাত্রদলের ব্যানারে কর্মসূচি পালন করেছে সংগঠনের একাংশের নেতারা। যেখানে নারায়ণগঞ্জের বেশকজন সিনিয়র বিএনপির নেতারা ওই সংগঠনের ব্যানারে অনুষ্ঠিত হওয়া ইফতার মাহফিলে উপস্থিত হয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন তারাও। তারাও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। যদিও এ সংক্রান্ত বিষয়ে ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুকুল ইসলাম রাজীব তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাজ দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছেন। যা পরবর্তীতে আরেক অতিথি মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদও সমর্থন করে রাজীবের সেই স্ট্যাটাজটি শেয়ার করেছেন।
তবে সিনিয়র নেতাদের প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুুর রহমান সাগর। তিনি তার ফেসবুকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, ব্যানার দেখার পর ফটোসেশন নাকি ফটোসেশনের পর ব্যানার দেখা?
২১ মে মঙ্গলবার রাতে রাকিবুুর রহমান সাগর লিখেন, ‘প্রশ্ন হলোঃ ব্যানার দেখার পর ফটোসেশন নাকি ফটোসেশনের পর ব্যানার দেখা??? সিনিয়র বিজ্ঞ কৌসূলি রাজনীতিবিদদের অপরাজনীতি নামক মুভির দর্শক বানাইয়া দিলো! ছাত্রদলের ভাইদের উদ্দেশ্যে বলা দলের এই দুঃসময়ে কি এমন কিছু করার কি খুব দরকার ছিলো? সমন্বয় করেও তো করা যেতো। ঐক্য জরুরি, বিভেদ নয়।’
এর আগে ওই দিন রাতেই এই আয়োজনের পর মঙ্গলবার রাতে মহানগর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আশিকুর রহমান অনি তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাজে লিখেছেন, ‘সিনিয়রদের কাাছ থেকে আমরা রাজনীতিতে কি শিখবো? যেখানে তারা নিজেরাই ঐক্য বিনষ্ট করছেন এবং দূরত্ব তৈরি করছেন।’
নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের ব্যানারে মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি ও সেক্রেটারিকে বাদ দিয়েই ২১ মে মহানগর ছাত্রদলের একাংশের নেতাদের আয়োজিত একটি অনুষ্ঠান নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে মহানগর ছাত্রদল।
জানাগেছে, এবার নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সাহেদ আহমেদ ও সেক্রেটারি মমিনুর রহমান বাবুকে ছাড়াই মহানগর ছাত্রদলের ব্যানারে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল ইফতার অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে মহানগর ছাত্রদলের এই ইফতার মাহফিল নিয়ে ছাত্রদলের নেতাদের মধ্যে পাওয়া গেল ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য যেখানে বিরোধ বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের সাবেক বেশকজন নেতাও। তাদের কেউ কেউ বলছেন- মহানগর ছাত্রদলের ব্যানারে ইফতার মাহফিল হবে সেটা তারা জানতেন না। সেখানে গিয়ে তারা ব্যানার দেখতে পান। তবে আয়োজকরা দাবি করছেন-এটা মহানগর ছাত্রদলের উদ্যোগেই করা হয়েছে। কিন্তু তাতে আরও স্পষ্ট মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি ও সেক্রেটারির প্রতি একাংশের নেতারা নাখোশ। যে কারনে তাদের নেতৃত্বে মানতে চাচ্ছেন না।
গত ২১ মে মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ শহরের একটি চাইনিজ রেস্তোরায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৮তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দোয়া ও ইফতারের আয়োজন করেছে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের একাংশের নেতারা। যেখানে ছাত্রদলের সাবেক ও বর্তমান ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ব্যানারটিও ছিল মহানগর ছাত্রদলের ব্যানার। ফলে মহানগর ছাত্রদলের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়েছে। এর মধ্যে আয়োজকদের একজন রাফিউদ্দীন রিয়াদ অনেক আগে থেকেই মহানগর ছাত্রদলের রাজনীতি ছেড়ে আড়াইহাজার বিএনপির নেতা নজরুল ইসলাম আজাদের সঙ্গে রাজনীতি করে আসছিলেন।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি রাফিউদ্দীন রিয়াদের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম আহমেদ বাবুর সার্বিক আয়োজনে এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন- নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, জেলা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এইচএম আনোয়ার প্রধান, জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি পারভেজ মল্লিক, মহানগর যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক নুরে এলাহী সোহাগ, মহানগর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি সিরাজ উদ্দিন প্রধান দর্পন, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আল আমিন প্রধান প্রমূখ। অনুষ্ঠানে সভাপতি ও সেক্রেটারি সহ অধিকাংশ নেতাদের উপস্থিতি এখানে দেখা যায়নি।
এদিকে ওইদিন ওই কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সাহেদ আহমেদ অনলাইন নিউজ পোর্টাল সান নারায়ণগঞ্জকে বলেছিলেন, এটা মহানগর ছাত্রদলের ইফতার মাহফিল ছিল না। যাদেরকে অতিথি হিসেবে দাওয়াত করা হয়েছিল তাদেরকে মহানগর ছাত্রদলের ব্যানারে হবে জানানো হয়নি। তারা ব্যক্তিগত কারো অনুষ্ঠানে গিয়ে সেখানে দেখতে পেয়েছে মহানগর ছাত্রদলের ব্যানার। তবে মহানগর ছাত্রদলের ২৩৫ জনের অধিকার রয়েছে কর্মসূূচি পালনের। কিন্তু সেখানে মহানগর ছাত্রদলের ব্যানার যদি লাগানো হয়ে থাকে তাহলে সেটা রাজনৈতিক অজ্ঞতা আর কিছু নয়। আমি ও সেক্রেটারি ঢাকায় ছিলাম। নারায়ণগঞ্জে থাকলে হয়তো সেখানে আমরাও থাকতাম।’
তিনি জানিয়েছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিলের আয়োজনের কাজ চলছে। যেখানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দোয়া মাহফিল করা হবে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম আহমেদ বাবু বলেছিলেন, ‘হ্যা, এটা মহানগর ছাত্রদলের উদ্যোগে করা হয়েছে। আর যেহেতু এখানে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক সহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন সেহেতু মহানগর ছাত্রদলের ব্যানারেই কর্মসূচি হতে পারে সেটা স্বাভাবিক।’
মহানগর ছাত্রদলের উদ্যোগে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হলে সভাপতি ও সেক্রেটারি নাই কেন জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, এটা মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি বলতে পারবেন কেন মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি ও সেক্রেটারি ছিল না।’
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি রাফিউদ্দীন রিয়াদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়। একই সঙ্গে মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলামিন প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে তার মোবাইলে কল করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে অনুষ্ঠানের অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকা নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব বলেছিলেন, আসলে আমাদের ছোট ভাইয়েরা দাওয়াত করেছে তাই গিয়েছি। গিয়ে দেখি মহানগর ছাত্রদলের ব্যানার লাগানো হয়েছে। এটা তেমন কিছু না।’
এ বিষয়ে আরেক অতিথি মহানগর ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ও মহানগর বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম সজলকে তার ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।