সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, মাদকের বড় বড় রাঘব বোয়ালদের এখনো ধরতে পারিনি, তবে আমাদের কাছে তথ্য আছে, আমরা চেষ্টা করছি। আমরা এখনও ওই ভূমিদস্যূদের বিরুদ্ধে।
তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন এক সময় এই নারায়ণগঞ্জে ভূমিদস্যূদের বিরুদ্ধে, ওই মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কেউ মামলা করার, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়ার সাহসটুকু পেতেন না। আমি সাধারণ নাগরিকদের বিনীতি অনুরোধ করছি আপনারা ভয় থেকে বের হয়ে আসেন। ওই মাদক ব্যবসায়ী, ওই সন্ত্রাসী, ওই চাঁদাবাজ, ওই ভূমিদস্যূদের বিরুদ্ধে নিশ্চিন্তে নিরাপদে অভিযোগ দিতে পারেন, থানায় এসে মামলা দিতে পারেন। যদি প্রকাশ্যে অভিযোগ করতে ভয় পান তাহলে আমাদের সিনিয়র অফিসারদের কাছে এসে জানান।
এসপি হারুন বলেন, আমরা চাই সুন্দর একটি নারায়ণগঞ্জ। আমরা চাই পরিচ্ছন্ন নারায়ণগঞ্জ। আমরা চাই সাধারণ মানুষের নারায়ণগঞ্জ। যে নারায়ণগঞ্জে সাধারণ মানুষ তার মনের কথাটি বলতে পারবে।
১৫ জুন শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ চাষাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নারায়ণগঞ্জ জেলার সার্বিক আইনশৃংখলা পরিস্থিতি, নাগরিকগণ নিরাপত্তায় ও স্বাচ্ছন্দে ফুটপাতে পায়ে হেটে চলাফেরা করতে পারে সেই লক্ষ্যে হকারমুক্ত ফুটপাত সহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে গিয়ে এসব কথা বলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।
এছাড়াও মতবিনিময় সভায় পুলিশ সুপার জানান আগামী ২৪ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ লাইন্স মাঠে বাংলাদেশ পুলিশের কনস্টেবল পদে সরাসরি পুরুষ ও মহিলা নিয়োগ করা হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের ব্যাপারে আমি অত্যন্ত কঠোর। কোন দালাল বা সিন্ডিকেট চক্র বা কোন পুলিশ সদস্য বা কোন ভায়া বা মিডিয়ার মাধ্যমে প্রতারিত না হবার জন্য সতর্ক করেন। শতভাগ স্বচ্ছতার মাধ্যমে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ সম্পন্ন করা হবে।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে কোনো আর্থিক লেনদেন করবেন না। পুলিশ কনস্টেবল পদে ভর্তি হতে কোন টাকা লাগবেনা। কোন দালাল বা সিন্ডিকেট চক্র বা কোন পুলিশ সদস্য বা কোন ভায়া বা মিডিয়া কর্তৃক নিয়োগের ব্যাপারে কোনো আর্থিক লেনদেন বিষয়ে তথ্য থাকলে আমাকে অবহিত করবেন। আমি তাৎক্ষণিকভাবে তাদের গ্রেপ্তার করব।
এসময় তিনি সাংবাদিকদের কাছে শতভাগ স্বচ্ছতার মাধ্যমে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ সম্পন্ন করা হবে বিষয়টি সাধারণ মানুষকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করেন।
এর আগে শনিবার দুপুুরে নারায়ণগঞ্জ চাষাড়া থেকে বঙ্গবন্ধু সড়কের মন্ডলপাড়া এলাকা পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে অবৈধভাবে দখল করে ব্যবসা করা হকার ও ব্যবসায়ীদের মালামাল সরিয়ে দেন। প্রায় কয়েকশ পুলিশ সদস্য এই অভিযানে ছিলেন। শহরের ডিআইটি বানিজ্যিক এলাকায় ইলেক্ট্রনিক দোকানদাররা ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করলে সেখানে মালামাল সরিয়ে নিতে দশ মিনিট সময় দেন তিনি। এই অভিযানে পুরো শহরের ফুটপাতমুক্ত হয়ে ওঠে নারায়ণগঞ্জ। এতে নারায়ণগঞ্জের মানুষের মাঝে স্বস্থি দেখা যায়।
এসময় পুলিশ সুপারের সাথে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মনিরুল ইসলাম এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) নূরে আলম সিদ্দিকী, নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম, জেলা পুলিশের ডিআইও-১ মমিনুল ইসলাম, ডিআইও-২ সাজ্জাদ রোমন সহ জেলা গোয়েন্দা শাখার একাধিক টিম ও প্রায় দুই শতাধিক পুলিশ সদস্য অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। এই অভিযানে থাকায় পুলিশ সুপার সকল সাংবাদিকদেরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
এখানে উল্লেখ্যযে, গত বছরের ১৬ জানুয়ারি এই হকার সরাতে গেলে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরেন নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমানের লোকজন। ওই সময় হকার উচ্ছেদের বিরোধীতা করেছিলেন শামীম ওসমান। এ নিয়ে সংঘর্ষের মাঝে পড়ে গেলে মেয়র আইভীকে তার অনুগামী নেতাকর্মীরা মানবপ্রাচীর তৈরি করে হামলা থেকে রক্ষা করেন। দুই পক্ষের মাঝে গোলাগুলিও হয়। থানায় মামলাও দায়ের করা হয়। জেলা প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেও সেই কমিটি এখনও প্রতিবেদন দাখিল করেনি। এরপর সাত মাসে পূর্বে নারায়ণগঞ্জে যোগদান করেই পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ ফুটপাত দখলমুক্ত করেন। ঈদে আবারো ফুটপাত দখল করে হকার বসলে তা এবার শনিবার দখলমুক্ত করেন এসপি হারুন অর রশীদ। আবারো বসানো হলে তিনি ব্যবস্থা নিবেন বলেও জানান।