সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও সোনারগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফরের বিরুদ্ধে গুরুত্বর অভিযোগ তুলেছেন সোনারগাঁও বিএনপির সেক্রেটারি আজহারুল ইসলাম মান্নানের পিএস এবং জেলা যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক সেলিম আহমেদ দিপু। টাকা ছাড়া দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী গণসংযোগে নামেননি বলে আবু জাফরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন তিনি। এও অভিযোগ তুলেছেন- সোনারগাঁও পৌরসভার গত নির্বাচনে এবং জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগে নামাতে খন্দকার আবু জাফরকে মোটা অংকের টাকা দিতে হয়েছিল। এমন অভিযোগটি সামাাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে বেশ সোনারগাঁয়ে বিএনপির রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তবে এমন অভিযোগ খন্দকার আবু জাফর অস্বীকার করে বলেন, এটা নোংরা রাজনীতি। আমি যখন ঐক্যের ডাক দিলাম তখনি তারা এসব বলছে। তাহলে এতদিন কেন বলেনি?
১৪ জুন শুক্রবার বিকেলে সোনারগাঁও পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কৃষ্ণপুরা গ্রামে এক ঈদ পূর্ণমিলনী অনুষ্ঠানে খন্দকার আবু জাফর বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে সকল ভেদাভেদ ভুলে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দলকে শক্তিশালী করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। পকেট বন্ধি হয়ে নয় জোটবন্ধ হয়ে সবাইকে কাজ করতে হবে। কোন ব্যক্তির না হয়ে বিএনপির হয়ে কাজ করতে হবে। বিএনপি একটি মহা সমুদ্রের মত দল। এ দল থেকে দু একজন দল থেকে ছুটে গেলেও এ দলের কিছুই হবে না।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, আওয়ামীলীগ ২১বছর ক্ষমতার বাহিরে থেকে যতটুকু না অত্যাচারিত হয়েছে বিএনপি ১২বছর ক্ষমতার বাহিরে থেকে তার চেয়ে ১০গুণ বেশী অত্যাচারের শিকার হয়েছে। এরপরও সোনারগাঁয়ে বিএনপির উল্লেখযোগ্য কোন নেতাকর্মী দল থেকে ছুটে যায়নি।’
এখানে উল্লেখ্যযে, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁ) বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পান খন্দকার আবু জাফর ও সেক্রেটারি আজহারুল ইসলাম মান্নান। দুজনকেই মনোনয়ন পত্র দাখিলের নির্দেশ কেন্দ্র থেকে দেয়া হলেও জাফর তার মনোনয়ন পত্র দাখিল করেননি। তিনি দাখিল না করার কারন হিসেবে মিডিয়াতে দাবি করেছিলেন- যে ব্যক্তি নমিনেশন উচ্চারণ করতে পারেনা সেই প্রার্থীর ড্যামী প্রার্থী হয়ে মনোনয়ন দাখিল করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন পান মান্নান। যদিও নির্বাচনে মাত্র একদিন মান্নানের নির্বাচনী গণসংযোগে ছিলেন জাফর। তার সঙ্গে অনেক আগে থেকেই মান্নানের মতপার্থক্য ও বিরোধ রয়েছে।
শুক্রবার আবু জাফরের ওই অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ওয়াহিত বিন ইমতিয়াজ বকুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম মুকুল, সোনারগাঁও পৌর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির রফিক, নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি জাকারিয়া সালেহ স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক সালাউদ্দিন সালু, উপজেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নুর-ই-ইয়াসিন নোবেল প্রমূখ।
এদিকে শুক্রবার থেকে ফেসবুকে খন্দকার আবু জাফরের ঐক্যের ডাক এবং তার সেই অনুষ্ঠানটি অনলাইনে প্রকাশিত হওয়ার পর আজহারুল ইসলাম মান্নানের নেতাকর্মীরা ব্যাপক সমালোচনা করে মন্তব্য করেন। যার মধ্যে খন্দকার আবু জাফরের বিরুদ্ধে অর্থের লেনদেনের অভিযোগটিও তোলা হয়। মান্নানের নির্বাচনী গণসংযোগে নামাতে খন্দকার আবু জাফরকে টাকা দিতে হয়েছে এমন অভিযোগ তুলেন মান্নানের পিএস সেলিম। মান্নানের পিএসের এমন অভিযোগটি নেতাকর্মীরাও আমলে নেন, কারন তিনি মান্নানের পিএস। মান্নানের অনেক গোপন কাজগুলো তিনিই করেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও মান্নানের পিএস সেলিম আহমেদ দিপু অভিযোগ করেন, জাফর সাহেব একজন নিচু মনের মানুষ। সে সামান্য কয়টি টাকার জন্য চরিত্র বিক্রি করিতে দ্বিধাবোধ করেনা। উনি তো সেই জাফর গত পৌর মেয়র নির্বাচনে মোশারফের গণসংযোগ করতে মান্নান সাহেব টাকা না দিলে ঘর থেকে বাহির হন নাই। প্রতি দুই দিন পরপর আমি নিজে মান্নান সাহেবের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা দিয়েছি উনাকে আমি গণসংযোগ বাবদ। ৮/১০ দিন উনি গণসংযোগ করেছেন।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এমন অভিযোগ তুলেন সেলিম আহমেদ দিপু দাবি করেন- ‘আমি মান্নান সাহেবের কাছ থেকে মোট ১৫০০০০ টাকা দিয়েছি। আর সেই নেতা, ক্ষেতা নাকি ঐক্যর ডাক দেন। এটা উনার ফাজলামি ছাড়া কিছুই না। উনি সত্যিই একজন রাজনৈতিক ব্যবসায়ি। উনার থেকে সবাই সাবধান।’
এ বিষয়ে অনলাইন নিউজ পোর্টাল সান নারায়ণগঞ্জকে খন্দকার আবু জাফর বলেন, ‘আমার জীবনে অর্থের লেনদেন তো দুরের কথা একটি ইটের কাজও আমি করিনি। আমি গতকাল (শুক্রবার) একটি অনুষ্ঠানে ঐক্যের ডাক দিয়েছি। এখন এতেই বুঝা যায় তারা নোংরা রাজনীতি করছে এবং দলকে কুলষিত করার চেষ্টা করছে। আমি কেবলমাত্র ঐক্যের ডাক দিয়েছি, আমি কারো বিরুদ্ধে তো কিছু বলিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা এসব বলছে বা লিখছে তারা বুঝতে পারছেনা তারা কি সব বলছে। পরিমাপ করতে পারছেনা তারা। আর টাকা নিয়ে দলের প্রার্থীর পক্ষে গণসংয়োগ করবো এটার প্রশ্নই আসেনা। তারা তো এতদিন এসব লিখেনি। যখন ঐক্যের ডান দিলাম তখনি তারা এসব লিখছে। এতেই প্রমানিত হয় তারা মিথ্যা বলছে। নতুবা এতদিন কেন বলেনি? এটা তাদের নোংরা রাজনীতি।’