দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:
গত কয়েক দিন ধরে বিগত সাড়ে ৪ বছরে নিজের অতীত ভুলের জন্য বিভিন্ন সভায় সকলের উদ্দেশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে আসছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। কিন্তু তিনি হয়তো বুঝতেও পারেননি কোন প্রকার অন্যায় অপকর্মকে প্রশ্রয় না দেওয়া, দলমত নির্বিশেষে সবাইকে একত্রিত করে এলাকার উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে অনেকেই আগেই বন্দরের মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছিলেন এমপি সেলিম ওসামন। আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষ্যে বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষের সাথে মতবিনিময়কালে নিজের দোষ ভুল সম্পর্কে জানতে গিয়ে মানুষের মনে সেলিম ওসমানের প্রতি সেই ভালবাসার বহি:প্রকাশ শুরু করেছে।
৮ ডিসেম্বর শনিবার বিকেলে বন্দর ইউনিয়নবাসীর উদ্যোগে কুশিয়ারী এলাকায় হাজী আব্দুল মালেক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত আগামী ১৬ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে মঞ্চে সাধারণ মানুষের বক্তব্যে সেটিই স্পষ্ট হয়েছে।
নিজের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এমপি সেলিম ওসমানের আহ্বানে মঞ্চে উঠে আসেন বন্দর কুশিয়ারা এলাকার মেয়ে ও পুত্রবধূ। তিনি বলেন, আমাদের এলাকার এমপি সাহেব এলাকার গরীব মানুষের জন্য কি করছেন এখানে অনেক যোগ্যতা সম্পন্ন রাজনীতি নেতারা আছেন সেটা কেউ বলেন না। আমি এই এলাকার মাইয়া, এই এলাকারই বউ। সেই সুবিধা চিন্তা করলে ব্যাগটা হাতে লইয়া, বোরকা কাচাইয়া, বাচ্চা কোলে লইয়া, কাঁচা রাস্তা দিয়া কত কষ্ট কইরা বড় রাস্তায় আসছি। রিকশা পাইনাই রাস্তা খারাপ থাকার কারনে। কিন্তু এখন এমন আরসিসি পাকা রাস্তা আমার জন্মের পর থেইক্কা আগে দেখি নাই। আগে আমাদের ছেলে মেয়েদের কলেজে পাঠাতে গেলে হাতে ১০০ টাকা দিতে হইতো আর এখন বন্দরে দুইটা সরকারী কলেজ আছে। ঈদে এখন গরীবেরাও আনন্দ করে, ঠিকমত গ্যাস থাকায় তাড়াতাড়ি রান্নার কাম শেষ করতে পারি। মহিলা গো ফ্রি সেলাই মেশিন দিছেন। এসব কিছু আমাগো কইরা দিছেন আমাদের এমপি সাহেব। সত্যি আমরা অনেক গর্বিত। এমন এমপি সাহেবকে যদি আমরা হারাই তাহলে আমরা বন্দরবাসী অনেক ভুল করমু। তাই সবার কাছে অনুরোধ মার্কা টার্কা চিনিনা সেলিম ওসমান ছাড়া কিছু বুঝি না।
মঞ্চে উঠে আসেন ৮১ বছরের একজন বৃদ্ধও। যিনি আগামী নির্বাচনে সেলিম ওসমানকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে সকলের প্রতি আহবান রাখেন। একই সাথে মঞ্চে উঠে আসেন কুশিয়ারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি সদস্য আশরাফুনেচ্ছা বিউটি। তিনি বলেন আমার এলাকায় আমি ছোট বেলায় যা দেখেছি কিন্তু বর্তমান এমপি আমলে এলাকায় একটা রাস্তাও কাঁচা নাই। আমার বিশ্বাস আমাদের ওয়ার্ডের মত পুরো ৫ আসনেই এমন উন্নয়ন হয়েছে। আমি মুখে কিছু বলে কাজে দেখাতে চাই। এই আসন থেকে আমরা সেলিম ওসমান ভাইকে বিজয়ী করার মাধ্যমে আবারো আমাদের মাঝে ফিরে পেতে চাই।
উল্লেখ্য চারিদিকে নির্বাচনের ঢামাঢোল শুরু হয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হেভিওয়েট নেতারা যখন প্রার্থী হতে নিজের পক্ষে শোডাউন গণসংযোগে ব্যস্ত ঠিক তখনও আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিবেন না বলে ঘোষণা দিয়ে আসছিলেন এমপি সেলিম ওসমান। আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টির এমনকি বিএনপি দলীয় অনেক নেতা এবং জনপ্রতিনিধিদের আগামী নির্বাচনে সেলিম ওসমানের প্রার্থী হওয়ার লাগাতার দাবীর পরেও প্রার্থী হতে তিনি রাজি হচ্ছিলেন না।
যার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ নভেম্বর বন্দরে ময়মনসিংহপট্টি মাঠে সর্বস্তরের বন্দরবাসীর পক্ষ থেকে “দল যার যার সেলিম ওসমান সবার” স্লোগানে আয়োজিত একটি সমাবেশে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে ঘোষণা দেওয়ার জন্য স্থানীয় সকল জনপ্রতিনিধি, আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি সহ কয়েক হাজার স্থানীয়রা জোরালো দাবী রাখেন।
সবার সাথে সম্মতি প্রকাশ করে এমপি সেলিম ওসমানের সহধর্মিনী মিসেস নাসরিন ওসমান নিজেই এমপি সেলিম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে ঘোষণা দেন, তোমাকে আর পরিবার এবং ব্যবসার কথা চিন্তা করতে হবেনা। এগুলো আমরাই দেখবো। বন্দরের মানুষ তোমাকে এতো ভালবাসে তুমি আর না করতে পারবেনা। তোমাকে নির্বাচন করতেই হবে। সকলের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন এমপি সেলিম ওসমান একাদশ জাতীয় সংসদে আবারো প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে বলে ছিলেন আগামী নির্বাচনে আপনাদের প্রতি সম্মান রেখে আমি আবারো আপনাদের গোলামী করতে প্রস্তুত আছি। আপনাদের দেওয়া মনোনয়নই আমার চুড়ান্ত মনোনয়ন। আমার মার্কা নৌকা, আমার মার্কা লাঙ্গল, আমার মার্কা ধানের শীষ, আমার মার্কা আনারাস আমি সবার।
প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর ১১ নভেম্বর ঢাকায় জাতীয় পার্টির গুলশান কার্যালয় থেকে নিজের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। ১২ নভেম্বর রাতে বন্দর খেয়াঘাট সংলগ্ন সুরুজ্জামান টাউয়ারের তাঁর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন এমপি সেলিম ওসমান। সেখানে তিনি নেতাকর্মীদের যার যার নিজ ঘর থেকেই ভোট প্রার্থনা শুরু করতে অনুরোধ রাখেন। এরপর ২০ নভেম্বর রাইফেল ক্লাবের আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টি সহ মহাজোটের নেতাকর্মীদের সাথে মত বিনিময় করে তিনি কর্মীদের নিজ নিজ এলাকায় ষড়যন্ত্রকারীদের ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখার অনুরোধ রাখেন।
এদিকে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ও নিজের পক্ষে দলীয় মনোনয়ন আনতে যখন আওয়ামীলীগ সহ অন্যান্য দলীয় প্রার্থী কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দদের সাথে লবিং ও বিভিন্ন চেষ্টায় ব্যস্ত তখন ঠিক সেই মুহুর্তে ২১ নভেম্বর ওমরা হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কায় চলে যান এমপি সেলিম ওসমান। হজ্জ শেষে ২৫ নভেম্বর রাতে তিনি বাংলাদেশে ফেরত আসেন। পরদিন ২৬ নভেম্বর বন্দরে সুরুজ্জামান টাউয়ারে তার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে বন্দরের মহাজোটের প্রায় ৪ হাজার নেতাকর্মীর সাথে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। সেখানে তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের দায়িত্বটুকু সঠিক ভাবে পালন করবেন জয় আপনাদের নিশ্চিত। ২৭ নভেম্বর চাষাঢ়া হীরা মহলে দলমত নির্বিশেষে সকল স্তরের মানুষের উপস্থিতিতে দোয়া ও মতবিনিময় সভায়, আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা নির্বাচনে তাকে সমর্থন প্রদান করেন। ২৮ নভেম্বর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স প্রাঙ্গনে মতবিনিময়কালে নারায়ণগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা যে কোন মূল্যে তাঁকে বিজয়ী করার ঘোষণা দেন। ২৯ নভেম্বর আবারো বন্দরে ব্যক্তিগত কার্যালয়ে সকাল ১১টা রাত ৮টা পর্যন্ত বন্দর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধি ও বন্দর থানা জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সাথে পৃথক ভাবে প্রায় ৩ হাজার নেতাকর্মীর সাথে মেরাথন মত বিনিময় করেন। ৩০ নভেম্বর হীরামহলে আলীরটেক ও গোগনগর ইউনিয়নের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও তাদের কর্মীদের সাথে মত বিনিময় করেন। ১ ডিসেম্বর চাষাঢ়া হীরা মহল ও বন্দরে সুরুজ্জামান টাউয়ারে শহর ও বন্দরের কয়েক হাজার নারীর সাথে পৃথক দুটি মতবিনিময় করেন সেলিম ওসমানের সহধর্মিনী মিসেস নাসরিন ওসমান। ২ ডিসেম্বর বন্দরে ব্যক্তিগত কার্যালয়ের সিটি কর্পোরেশনের ৯টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলদের সাথে মতবিনিময় করেন একইভাবে ৩ ডিসেম্বর চাষাঢ়া হীরা মহলে শহর এলাকার কাউন্সিলরদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত দুটি মতবিনিময় সভায় কাউন্সিলরা ব্যক্ত করেন আগামীতে কেন আবারো সেলিম ওসমানকে নারায়ণগঞ্জ ও বন্দরবাসীর প্রয়োজন। হীরা মহলে একই দিন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দদের সাথে মত বিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে আগামী নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের হিন্দু সম্প্রদায় সেলিম ওসমানের প্রতি আস্থা রাখার কথা জানিয়েছেন।
এদিকে বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম এ রশিদের আহবানে গত ৪ ডিসেম্বর তার বাসভবনে বন্দর থানা আওয়ামীলীগের নির্বাচনী মত বিনিময় সভায় যোগ দেন তিনি। যেখানে তাকে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী করার ঘোষণা দেন। ৫, ৬, ও ৭ ডিসেম্বর যথাক্রমে ধামগড়, মুছাপুর ও কলাগাছিয়ে ইউনিয়নবাসীর উদ্যোগে আয়োজিত নির্বাচনী আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উক্ত দোয়া অনুষ্ঠান গুলোতে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষের সমাগম হয়। দোয়া অনুষ্ঠান গুলো থেকে উপস্থিত সকলেই আগামী নির্বাচনে সেলিম ওসমানকেই বিজয়ী করবেন বলে স্বর্তস্ফূর্ত সমর্থন প্রদান করেন।
প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর তাঁর শূন্য আসনে ২০১৪ সালের ২৬জুন উপ-নির্বাচনে এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়ে আসেন তাঁরই ছোট ভাই সেলিম ওসমান উক্ত আসনে সাংসদ নির্বাচিত হোন। যিনি এর আগে দেশব্যাপী একজন সফল উদ্যোক্ত এবং দক্ষ ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
ওই উপনির্বাচনে এমপি সেলিম ওসমান তারঁ প্রতিদ্ব›দ্ধী আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্রপ্রার্থী এস.এম আকরামকে প্রায় ১৬ হাজার ভোটে পরাজিত করেন। এস.এম আকরাম যিনি ১৯৯৬ সালে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবুল কালামকে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হয়ে ছিলেন।
২০১৮ সালের ৮ জুলাই শপথ গ্রহনের পর থেকেই তিনি শহর-বন্দর উন্নয়নের দলমত নির্বিশেষে সকলকে সাথে নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যান। যার পরিশ্রম ও প্রচেষ্টার ফসল বন্দরে অতীতের উন্নয়নের সকল রেকর্ডকে পেছনে ফেলে ইতোমধ্যে আপামোর বন্দরবাসী মনে স্থান করে নিয়েছেন তিনি।