গ্রেপ্তারকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের তথ্যে পুলিশের কাছে রাঘব বোয়ালদের নাম!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জে জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ যোগদানের পর জেলায় প্রায় হাজারের অধিক মাদক ব্যবসায়ী, ভূমিদস্যূ, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে সরকারি দলের নেতাকর্মী সহ অন্যান্য দলের নেতাকর্মীও রয়েছে। এসব গ্রেপ্তারকৃতরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনেক নেতার ছত্রছায়ায় মাদক ব্যবসা ভূমিদস্যূতা চাদাবাজি করে আসতো বলে পুলিশের কাছে তথ্য দিয়েছে। সেই সঙ্গে কিছু বিশেষ পেশার কোন কোন ব্যক্তি এসব মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোহারা নিয়ে শেল্টার দিয়ে আসছিল তাও পুলিশের কাছে তথ্য দিয়েছে গ্রেপ্তারকৃত মাদক ব্যবসায়ীরা।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের সূত্রে জানাগেছে, মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীদের শেল্টারদাতা আশ্রয়দাতাদের নাম গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা পুলিশের কাছে জানিয়েছে। ইতিমধ্যে জেলা পুুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ সম্প্রতি চাষাড়া শহীদ মিনারে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ব্রিফিংয়েও বলেছেন, মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ ভূমিদস্যূদের রাঘব বোয়ালদের আমরা এখনও ধরতে পারিনি। তবে আমাদের কাছে তথ্য আছে।’

জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ নারায়ণগঞ্জে যোগদানের পূর্বে জেলার সাতটি থানায় প্রায় দুই শতাধিক মাদক স্পট গড়ে ওঠে। বিভিন্ন এলাকার অলিগলি হয়ে ওঠে মাদক ব্যবসায়ীদের হাট বাজার। কোন কোন এলাকায় প্রকাশ্যেই দিন দুপুরে হরদম চলতো মাদক ব্যবসা। তবে সেই পরিস্থিতি কিছুটা নির্মূল হলেও এখনও চলছে কিছু এলাকায় মাদক বিকিকিনি। পুলিশও নিয়মিত মাদক বিরোধী অভিযান দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করছেন। করছেন ইয়াবা ফেন্সিডিলি হেরোইন গাঁজা উদ্ধার।

নারায়ণগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বেশি মাদকের ছড়াছড়ি সোনারগাঁঁয়ে। প্রাথমিকভাবে সোনারগাঁয়ে মাদক বিরোধী তেমন কোন অভিযান দেখা না গেলেও এখন নিয়মিত সোনারগাঁয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার চলছে। একইভাবে অনেক আগেই ব্লক রেইড দিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় কয়েক শ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে পুুলিশ। অন্যদিকে রূপগঞ্জ বন্দর ও আড়াইহাজারেও চলছে মাদক বিরোধী অভিযান।

নারায়ণগঞ্জের এসব মাদক স্পটে নিয়মিত যাতায়াত ছিল জেলা পুলিশের অনেক কতিপয় অসাধু পুলিশ সদস্যদের। অনেকের বিরুদ্ধে মাসোহারা কিংবা বখড়া খাওয়ার অভিযোগও ওঠেছিল। পুলিশের সঙ্গে অনেক রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন পদে থাকা নেতারাও দিয়ে আসছিল শেল্টার। মাদক ব্যবসায়ীদের অনেকেই বিভিন্ন দলের মিটিং মিছিলে মিছিল নিয়ে অংশগ্রহণও দেখা যেতো। মাদক ব্যবসায়ীদের প্রধান শেল্টারদাতাই ছিল রাজনৈতিক দলের নেতারা। আর পুলিশের কতিপয় দুএকজন অসাধু সদস্য ও বিশেষ পেশার কিছু অসাধু ব্যক্তি মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বখড়া আদায় করতো। ফলে নারায়ণগঞ্জে বেপরোয়া হয়ে ওঠেছিল মাদক ব্যবসায়ীরা। এক পর্যায়ে পুলিশ ও বিশেষ পেশার অসাধুদের ম্যানেজ এবং রাজনৈতিক দলের নেতাদের আশ্রয় প্রশয়ে শেল্টারে জেলায় মাদক ব্যবসায়ীরা হয়ে ওঠেছিল দাপটশালী।

কিন্তু নারায়ণগঞ্জে জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ যোগদানের পর পুলিশের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারী দিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, নারায়ণগঞ্জে কোন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মাদকে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অতীতেও এমন অনেক এসপিরা এমন হুশিয়ারী দিয়েছিলেন। কিন্তু কাজের কাজটি হয়নি। কিন্তু পুলিশ সুপার যখন ব্লক রেইড দিয়ে প্রতিদিন গ্রেপ্তার শুরু করে তখন পালিয়ে বেড়ায় মাদক ব্যবসায়ীরা। মাদক ব্যবসায়ীদের শেল্টারদাতাদের অনেকেই আবার গা ঢাকা দিয়েছেন। কিন্তু ততদিনে কয়েকশ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।

জানাগেছে, মাদক ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তার করেই তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় কাকে কাকে মাসোহারা ও বখড়া দিয়ে মাদক ব্যবসায় ও চাঁদাবাজি করে আসছিল। অনেকের নাম পুুলিশ টুকে নেয়। গ্রেপ্তারকৃত এসব মাদক ব্যবসায়ীদের তথ্যে অনেক বখড়া আদায়কারী, মাসোহারা খাওয়া এবং আশ্রয়দাতা শেল্টারদাতাদের নাম এখন পুুলিশের তালিকায়। যে কারনে পুুলিশ সুপার বলেছেন, মাদকের রাঘব বোয়ালদের এখনও ধরতে পারিনি। কিন্তু আমাদের কাছে তথ্য আছে।’ নারায়ণগঞ্জের মানুষ এখন সেইসব মাসোহারা আদায়কারী ও রাঘব বোয়ালদের গ্রেপ্তার দেখতে চায়। কারন এদের আইনের আওতায় না আনা হলে এই পুলিশ সুপার এখান থেকে যাওয়ার পর আবারো শুরু হবে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি এবং তাদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায় ও তাদের আশ্রয় শেল্টার দেয়া।