সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর(এপিপি) অ্যাডভোকেট জাসমিন আহমেদের উপর হামলাকারী ট্র্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক ও তার ভাইকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন নারায়ণগঞ্জের আইনজীবীরা।
২৬ জুন বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নারী আইনজীবীদের আয়োজনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বক্তারা দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি করেন। নতুবা কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী দেন।
নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট সেলিনা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন-নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট বিদ্যুৎ কুমার সাহা, কোষাধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট আব্দুর রউফ মোল্লা, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহামুদা মালা, অ্যাডভোকেট মাসুদা আক্তার, অ্যাডভোকেট বিভা রানী পূজা, অ্যাডভোকেট কামরুন্নাহার ময়না, অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক সোহেল, অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল রোমেল মোল্লা, অ্যাডভোকেট এসএম গালিব, অ্যাডভোকেট শম্পা, অ্যাডভোকেট দিপা ঘোষ, অ্যাডভোকেট আশরাফুল আলম খোকন, অ্যাডভোকেট চায়না সুলতানা সহ শতাধিক আইনজীবী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, গত ২৯ মে বুধবার নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট জাসমিন আহমেদ তার স্বামী পুলিশ কর্মকর্তা ও তার দেবরের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। এর আগেও নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রশাসনের এডিএমের অফিস কক্ষে স্বামীর হাতে মারধরের শিকার হয়েছিলেন এই নারী আইনজীবী। ওইদিন বুধবার সকালে নারায়ণগঞ্জ চিফ জুুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বারান্দায় এই মারধরের শিকার হলে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যান অন্যান্য আইনজীবীরা।
তবে ওইদিন ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে নারায়ণঞ্জ কোর্ট পুলিশ আটক করলেও আইনজীবীদের না জানিয়েই তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছেন বলে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন আইনজীবীরা। বিষয়টি অস্বীকার করেছিলেন কোর্ট পুুলিশ পরিদর্শক হাবিবুর রহমান।
পুলিশ পরিদর্শক হাবিবুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিলেন, পুলিশের একজন পরিদর্শকের সঙ্গে ওই নারী আইনজীবীর মামলা রয়েছে নারায়ণগঞ্জ আদালতে। ওই মামলায় বুধবার হাজিরা দিতে আসছিলেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা ও তার ভাই, ৭০ বছরের বৃদ্ধা মা। হাজিরা দিতে আসলে আইনজীবীরা তাদের উপর হামলা চালায়। ওই সময় তারা দৌড়ে এসে কোর্টের গারদে আশ্রয় নেন। পরবর্তীতে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের সহায়তায় তাদেরকে আদালত থেকে নিরাপদে পৌছে দেয়া হয়েছে।’
তিনি আরও দাবি করেছেন-পুলিশের ওই কর্মকর্তা আইনজীবীদের উপর হামলা করেনি বরং ওই আইনজীবী পুলিশ কর্মকর্তাকে বক্সিং স্টাইলে হামলা চালিয়েছে যা প্রত্যক্ষদর্শীরা দেখেছেন। পুলিশ কর্মকর্তা সিভিল পোশাকে থাকায় অন্যান্যরাও তার ও তার পরিবারের উপর হামলা চালিয়েছে। উপায় না পেয়ে তারা কোর্ট গারদে এসে আশ্রয় নেন।’
তবে হাবিবুর রহমানের এমন বক্তব্য সম্পূর্ন মিথ্যা দাবি আইনজীবীরা বলেছিলেন- বুধবার সকালে মামলার বাদী জাসমিন আহমেদের উপর হামলা চালায় পুলিশ কর্মকর্তা স্বামী আবু নকিব ও তার ভাই। জাসমিন আহমেদকে বেদম মারধর করে তারা। ওই সময় জাসমিন আহমেদ অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান আইনজীবীরা। ওই সময় তিন জনকে পুুলিশ আটক করে কোর্ট গারদে নিয়ে যান। কিন্তু আইনজীবীদের না জানিয়েই তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
অন্যদিকে আরও জানাগেছে, এর আগে গত ১৩ মার্চ বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ এডিএম জ্যোতিকা যুথি সরকারের কক্ষে একটি মামলার বিষয়ে শুনানি করতে গেলে ওই পুলিশ কর্মকর্তার দ্বারা এই মারধরের শিকার হন নারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাসমিন আহমেদ। তবে ওই সময় এডিএম তার কক্ষে ছিলেন না। এডিএমের সহকারী আবদুর রহমান দাবি করেছিলেন ওই সময় এডিএমের কক্ষে কেউ ছিল না। ওই দিনও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন জাসমিন আহমেদ।
ঘটনা সূত্রে আরও জানাগেছে, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) আবু নকিবের স্ত্রী অ্যাডভোকেট জাসমিন আহমেদ। আবু নকিব ঢাকা মহানগর পুলিশের সার্কেল অফিসার। আর স্ত্রী অ্যাডভোকেট জাসমিন আহমেদ নারায়ণগঞ্জ জেলা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি। গত ৫ মার্চ নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে স্বামী আবু নকিবের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে মারধরের অভিযোগে একটি মামলা করেন অ্যাডভোকেট জাসমিন আহমেদ। ওই মামলাটি আদালত তদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ এডিএমকে দায়িত্ব দেন।
ওই মামলায় জাসমিনের স্বামী পুলিশ কর্মকর্তা আবু নকিবকে প্রধান আসামি করা হয়। নকিব ছাড়াও নকিবের ভাই মো: নাছের নিপুণ, বোন জুবরিয়া বেগম, অপর ভাই মো: আবু নোমান সজন ও ভাইয়ের স্ত্রী শিরিন আক্তার হিরাকে আসামি করেন জাসমিন আহমেদ।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সন্তানদানে অক্ষম জেনেও জাসমিন আহমেদের সঙ্গে ২০০৭ সালের ১৪ মে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মো: নকিব। বিয়ের পর স্ত্রীর কাছে ৫০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে তার উপর অত্যাচার করতে থাকেন স্বামী।
দাবি করা হয়- নিজ বিবাহজীবন সুখে-শান্তিতে কাটানোর জন্য স্বামীকে ১২লাখ টাকার একটি প্রাইভেটকার, ১টি মোটরসাইকেল ও ঢাকায় জমি কেনার জন্য নগদ ৫০ লাখ টাকা দেন জাসমিন।
মামলায় আরো দাবি করা হয়- জাসমিনের স্বামী নকিব সম্প্রতি চালচলন পরিবর্তন করে উগ্র জঙ্গিবাদী সংগঠনে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ইসলামের অনেক অপব্যাখ্যা দিয়ে জাসমিনকে তার দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করেন। এ ছাড়া প্রায়ই জাসমিনকে হত্যার চেষ্টা করেন। এর মধ্যে মোটরসাইকেল থেকে একবার ফেলে দিয়ে, আরেকবার ঘুমের মধ্যে গলাটিপে ধরে এবং বালিশচাপা দিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছিল।
মামলা দায়েরের পর জাসমিন আহমেদ বলেছিলেন, আমাকে না জানিয়ে আরো দুটি বিয়ে করেছে নকিব। পরে জাসমিন আহমেদের খোঁজ-খবর নেয়া বন্ধ করে দেন। ২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর জাসমিনের সঙ্গে দেখা করেন নকিব। সে সময় মারধর করে নগদ ৫ লাখ টাকা, ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, দলিল ও বিভিন্ন ডকুমেন্ট নিয়ে চলে যান।