সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
ফ্লাট দখলকারী মাস্তানদের ‘নারায়ণগঞ্জ’ হবে না কঠোর হুশিয়ারী দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলছেন, নারায়ণগঞ্জ হবে সাধারণ মানুষের। শান্তিপ্রিয় মানুষের জন্য হবে নারায়ণগঞ্জ। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সাধারণ মানুষের জন্যই কাজ করছে। নারায়ণগঞ্জ ফ্লাট দখলকারী মাস্তানদের হবে না। কোন ভূমিদস্যূ, মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের নারায়ণগঞ্জ হবে না।’
৩০ জুন রবিবার সকাল সাড়ে ১১টায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানাধীন দিগুবাবুর বাজারের মীরজুমলা সড়কে উপর অবস্থিত অবৈধ দোকাকানদারদের উচ্ছেদ করে সেই স্থান পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন পুলিশ সুপার।
এর আগে পুলিশ সুপারের নির্দেশে সদর মডেল থানা কর্তৃক উচ্ছেদের পর উক্ত সড়ক সহ বঙ্গবন্ধু সড়ক ও আশপাশের সড়ক ও ফুটপাত পরিদর্শনে করেন নারায়ণগঞ্জ জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, বিপিএম(বার), পিপিএম(বার)। এর আগে জেলা পুলিশের ডিআইও-৩ সাজ্জাদ রুমন বাজারে আসা মানুষের সঙ্গে কথা বলেন্ মীরজুমলা সড়কটি উচ্ছেদ করায় সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সাধারণ মানুষ জেলা পুলিশ সুপারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। কেউ কেউ ধন্যবাদ জানিয়ে পুলিশ সুপারকে এগিয়ে যেতে আহ্বান জানান। বাজারের দোকানদার ও অন্যান্য ব্যবসায়ীরাও পুলিশের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেন।
এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন- জেলার অতিরিক্ত পুুলিশ সুপার নূরে আলম, মনিরুল ইসলাম, সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী, সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম, জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক এনামুল হক, জেলা পুুলিশের জিআইও-২ সাজ্জাদ রুমন।
এর আগে পুলিশ সুপারের উক্ত সড়কে আগমন উপলক্ষ্যে উক্ত স্থানে উপস্থিত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা (সিও) এহতেশামূল হক। পুলিশ সুপার সড়ক পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময় করেন।
পুলিশ সুপার তার বক্তব্যে বলেন, ‘কোন মাস্তান জোর করে ফ্ল্যাট দখল করে রাখবে, জমি দখল করবে, আমরা তাঁদের আইনের আওতায় আনবো। নারায়ণগঞ্জ হবে সাধারণ মানুষের। শান্তিপ্রিয় মানুষের জন্য হবে নারায়ণগঞ্জ। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সাধারণ মানুষের জন্যই কাজ করছে। নারায়ণগঞ্জ ফ্লাট দখলকারী মাস্তানদের হবে না। কোন ভূমিদস্যূ, মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের নারায়ণগঞ্জ হবে না।’
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসপি বলেন, এখন আমাদের কাছে ভূমিদস্যূদের কোন অভিযোগ আসছেনা। যদি ভূমিদসূ্যূদের বিরুদ্ধে অথবা ফ্ল্যাট দখলকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে তাহলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিবো। অরাজকতার শহর নারায়ণগঞ্জ নয়। নারায়ণগঞ্জ হচ্ছে ব্যবসায়ীদের আশ্রয়স্থল। নারায়ণগঞ্জ প্রাচ্যের ড্যান্ডি। এখানে কোন মাস্তানের বসবাস করার জায়গা নয়। এখানে কোন মাস্তান জোর করে ফ্ল্যাট দখল করে রাখবে, এখানে কোন মাস্তান মানুষের জমি জোর করে দখল করে রাখবে, আমরা পুলিশের লোকজন কিন্তু এটা করতে দিতে পারিনা। আমরা তাদের আইনের আওতায় অবশ্যই আনবো এবং সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।
এসপি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু সড়কের পর এবার আমরা চাষাঢ়া থেকে ফতুল্লা এবং পঞ্চবটি থেকে মুন্সিগঞ্জের রাস্তাটি পরিষ্কার করার চেষ্টা করবো। আমরা জনসাধারণকে স্বস্তি দিতে চাই। কারো ক্ষতি করা, কারো পেটে লাথি দেওয়া এটা আমাদের উদ্দেশ্য না। আমাদের কাজই হচ্ছে জনসাধারণের সেবা করা। সেবার মানুষিকতা নিয়েই আমরা নারায়ণগঞ্জ পুলিশের সকল কর্মকর্তারা কাজ করছি।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, আমরা যখন জানলাম এখানে (মীরজুমলা সড়ক) একটি রাস্তা ছিল এবং কিছু লোক এই রাস্তার দুই পাশে দোকান বসিয়ে চাঁদা তোলে, ঠিক তখনই আমরা এই চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। কারণ এখান দিয়ে মানুষ চলাচল করবে। বাস চলাচল করবে। বিভিন্ন গাড়ি চলাচল করবে। এদিকে তো দোকান বসিয়ে তাঁদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়াটা ঠিক হবেনা। কিন্তু যদি কেউ এই রাস্তাটিতে বাজারের পণ্য লোডিং-আনলোডিং করতে চায় সেক্ষেত্রে তাঁরা রাত ১টার পর থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত এই রাস্তাটি ব্যবহার করতে পারে।
বক্তব্যের এক পর্য়ায়ে পুলিশ সুপার বলেন, বঙ্গবন্ধু সড়কের চাষাড়া থেকে সিটি করপোরেশন পর্যন্ত এবং ১নং রেলগেট পর্যন্ত সকল রাস্তার আশেপাশে কোন হকার বসবেনা। আমরা মেয়র এবং জনপ্রতিনিধি কাছে বলবো যে, তাঁদের (হকারদের) জন্য একটি মাঠের ব্যবস্থা করে দিন যেখানে তাঁরা বসে কেনাবেচা করতে পারবে। পুলিশ হকারদের বিরুদ্ধে নয়। আমরা চাই রাস্তা দিয়ে যেন সাধারণ মানুষ ভালোভাবে চলাফেরা করতে পারে। ইতিমধ্যেই এই কাজটা সম্পূর্ণ হয়েছে এখন সকলেই খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু সড়ক দিয়ে তাঁদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারে।
এখানে উল্লেখ্য যে, দীর্ঘ ৪০ বছরের ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করল এসপি মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, বিপিএম(বার), পিপিএম(বার)। এই শহরের যে ছোট্ট ছেলেটি দেখে আসছে এটা একটি বাজার আজ যখন ৩৫ বছর পর ঘুম থেকে উঠে দেখে এটি একটি রাস্তা তৈরী হয়েছে তখন সে নারায়ণগঞ্জবাসী হিসেবে গর্ববোধ করে। সে কখনো ভাবেনি এই বাজারের জায়গাটি রাস্তায় পরিণত হবে। সব কিছুই সম্ভব হয়েছে সম্মানিত নারায়ণগঞ্জবাসীর সহযোগীতায় এবং সম্মানিত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের একান্ত প্রচেষ্টায়। এখন স্কুল কলেজের কোমলমতি ছেলে মেয়েরা স্বাচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারে এবং তারা জেলা পুলিশ নারায়ণগঞ্জকে এই কাজের জন্য ধন্যবাদ জানান। পুলিশ সুপার সকল সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন।