সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের ভট্টপুর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিআর বিলকিসের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধিক পরিমাণ টাকা নিয়ে নতুন ড্রেস বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। স্কুল ড্রেস পরিবর্তনের অজুহাতে তিনি এ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ড্রেস পরিবর্তন না করার জন্য স্কুলের অভিভাবকরা গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে ১১ জুলাই বৃহস্পতিবার সকালে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার অঞ্জন কুমার সরকার বরাবর স্বারকলিপি প্রদান করেছেন।
এছাড়াও অভিভাবকরা নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নিখিল চন্দ্র বিশ্বাসের কাছে অনুলিপি প্রদান করেছেন। এর আগেও শিক্ষার্থীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এতে কোন ফল পায়নি শিক্ষার্থীরা।
তবে স্থানীয়দের অনেকেই বলছেন- বিআর বিলকিস বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিদ্যালয়টি বেশকবার শ্রেষ্ঠ হয়েছে। ফলাফলেও রেকর্ড গড়েছে বিদ্যালয়টি। ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ ওঠেনি।
তবে অভিভাবকদের অভিযোগ, উপজেলা পরিষদের সীমানা ঘেঁষে ভট্টপুর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়টি দেশের সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করার অজুহাতে প্রধান শিক্ষক বিআর বিলকিস মনগড়া মতো স্কুল পরিচালনা করছেন। এ বিদ্যালয়ে অভিভাবকদের মতামতের কোন প্রধান্য দেওয়া হয় না। তার মতামতের বিপক্ষে কোন অভিভাববক মতামত দিলেই তার সঙ্গে খারাপ আচরন করা হয়।
মাসুদুর রহমান নামের এক অভিভাবক বলেন, ভট্টপুর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সকলের মতামতের বিরুদ্ধে এ স্কুলের ড্রেস পরিবর্তন করেছেন। এখানের প্রায় ১২শ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী দারিদ্র পরিবারের। বছরের শেষ দিকে এ ড্রেস পরিবর্তন করলে অনেকের পক্ষে আটশ বা একহাজার টাকা দিয়ে ড্রেস কেনা সম্ভব না। তাই ড্রেস পরিবর্তনের কোন দরকার নেই। শুধু মাত্র তিনি বানিজ্যের জন্যই সকলের মতামতের বিরুদ্ধে এ ড্রেস বছরের শেষ দিকে পরিবর্তন করছেন।
অনু রানী দাস ও সুরাইয়া বেগম নামের অভিভাবদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক অভিভাববকদের সাথে খুবই খারাপ আচরণ করেন। তিনি পড়াশোনা মান উন্নয়নের নামে বিভিন্ন টাকা আদায় করে থাকেন। তিনি কারো কথার মূল্য দেন না। তাকে কিছু বললেই তিনি ধমক দিয়ে কথা বলেন।
আছমা নামের এক অভিভাবক বলেন, ভট্টপুর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ড্রেস পরিবর্তন করার কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। তিনি আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়ার জন্য অন্য জায়গা থেকে ড্রেস বানিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে ড্রেস বিক্রি করছেন। তাছাড়া পুরানো ড্রেসটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতের ছেঁয়া রয়েছে। এ ড্রেসে আমরা গর্ববোধ করি। এ স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মারগুবা ইয়াসমিন অধরা নামের এক শিক্ষার্থী হস্ত লেখা প্রতিযোগিতায় সারা বাংলাদেশে প্রথম হয়ে ওই ড্রেস পড়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার নিয়েছেন। অধরাকে পিঠ চাপরিয়ে আদর করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
এ বিষয়ে ভট্টপুর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিআর বিলকিস বলেন, ড্রেস বিক্রির অভিযোগ সত্য নয়। প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীকে সভাপতি ড্রেস ফ্রি দিয়েছেন। ডিসেম্বর মাসে নোটিশের মাধ্যমে অভিভাবকদের অবগত করেই ড্রেস পরিবর্তন করেছি।
সোনারগাঁ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নিখিল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ড্রেস পরিবর্তনের সময় ডিসেম্বর মাসে। তবে ড্রেস পরিবর্তনের বিষয়টি স্কুলের শিক্ষকদের আওতায় থাকে। অভিভাবকদের বছরের প্রথমে ড্রেসের কাপড় ও রং বাছাই করে অভিভাবকদের ডেকে ড্রেস তৈরি করতে বলে দেবেন। স্কুল ড্রেস বিক্রির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে প্রধান শিক্ষক বলেছেন, স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি কিছু শিক্ষার্থীকে ফ্রিতে ড্রেস দিয়েছেন। তবে তিনি যদি ড্রেস বিক্রি করে থাকেন তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার বলেন, এবিষয়ে আমার কাছে একটি অভিযোগ এসেছে। বছরের শেষ সময়ে ড্রেস পরিবর্তনের কোন নিয়ম নেই। আমি তাদের ডেকে ড্রেস বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হবে।