দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:
প্রায় এক যুগ পূর্বে বিটিভিতে একটি বিজ্ঞাপন ছিল সবচেয়ে আলোচিত। যে বিজ্ঞাপন চিত্রে মডেল হিসেবে ছিলেন আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। সহজ সরল একজন সাংস্কৃতিকমনা মানুষ। দেখতে সুদর্শন। পিতা প্রয়াত আবুল হাসনাতের শক্তিশালী করে গড়ে তোলা সোনারগাঁও আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে পা দেন তিনি। বিএনপি জামাত জোট সরকার আমলে পুলিশের বেদম পিটুনির শিকার হন রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে। খেয়েছেন মামলা, করেছেন কারাভোগ। ওই সময় তরুণ কায়সার হাসনাতের রক্তমাখা ছবির পোস্টারে ছেয়ে যায় পুরো সোনারগাঁও। সোনারগাঁয়ে তার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের আন্দোলন দৃষ্টি কেড়ে নেয় জাতীয় রাজনীতিতে। তৎকালীন সোনারগাঁও থানার ওসির নাম এখনও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মনে হলে আতংকে ওঠেন তারা।
সাদা সিদে এই রাজনীতিক এমপি হওয়ার পর তার মাথায় কাঠাল ভেঙ্গে খেয়েছেন অনেকেই। কিন্তু বদনামের ঝুড়ি গিয়েছে কায়সার হাসনাতের নামে। সরলতার সুযোগ নিয়ে অনেকেই পকেট ভারি করেছেন। চাচা মোশারফ হোসেনের সঙ্গে বিরোধ বাধিয়ে সুবিধা আদায় করেছেন কেউ কেউ। কিন্তু এবার পাকাপোক্ত রাজনীতিক কায়সার হাসনাত মাঠ ছাড়ছেন না। সোনারগাঁও আওয়ামীলীগকে বাঁচাতে একাই মাঠে নড়ছেন তিনি। সঙ্গে যোগ দিয়েছেন তার চাচা মোশারফ হোসেন। রয়েছেন সোনারগাঁও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ। যে কারনে আবারো আলোচনায় সেই সাদা মনের মানুষ কায়সার হাসনাত। একজন ভদ্র ন¤্র রাজনীতিক মিথ্যা বলতে পারেননা, যে কারনে ইনিয়ে বিনিয়ে বানিয়ে মিথ্যার ফুলঝুড়ি নেই তার মুখে। তার বক্তব্যেও সেটা স্পষ্ট। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি নেই তার মুখে। যে কারনে পারেননা তিনি অনড়গল বক্তব্য হৃদমে চালিয়ে যেতেও।
নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫টি সংসদীয় আসনের মধ্যে আলোচনায় এখন নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও)। এ আসনে তিনি আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন। এখানে এবারের নির্বাচনেও নৌকা প্রতীকের কোন প্রার্থী দেয়া হয়নি। মহাজোটের শরীক দল জাতীয়পার্টি থেকে এখানে গত নির্বাচনে বিনা ভোটে নির্বাচিত লিয়াকত হোসেন খোকাকে আবারো করা হয় মহাজোটের প্রার্থী। কিন্তু গত ৫টি বছরে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের যে দূর্দিন গিয়েছে সেই দিনের মুখোমুখী আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা আর হতে চাননা। সোনারগাঁয়ে জাতীয়পার্টির এমপি থাকার কারনে আওয়ামীলীগ সরকারের ক্ষমতায় থাকলেও সোনারগাঁও আওয়ামীলীগ ছিল বিরোধী দলের ভুমিকায়। এসব কারনে সোনারগাঁয়ের নেতাকর্মীরা বলছেন, আসলেই কায়সার হাসনাত হিরো। এখন সিংহ প্রতীক নিয়ে আলোচনায় দ্যা হিরো অব সোনারগাঁও।
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত সিংহ প্রতীকে লড়াই করছেন। ১০ ডিসেম্বর সোমবার নারায়ণগঞ্জ জেলা রিটার্নিং অফিসার রাব্বী মিয়ার হাত থেকে সিংহ প্রতীক তুলে নেন কায়সার হাসনাত। ফলে এ আসনে মহাজোটের মনোনিত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার জয় এখন অনিশ্চিত। কেউ কেউ বলছেন এখানে লিয়াকত হোসেন খোকার জয়ের আশাই ছেড়ে দিয়েছেন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরাও। যে কারনে এখন সোনারগাঁও আওয়ামীলীগকে বাঁচাতে একটাই পথ সেটা হলো সিংহ মার্কায় ভোট দেয়া। যে কারনে খোকার পক্ষে এখনও নামেনি আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। তারাও বিষয়টি পর্যবেক্ষন করছেন। নিশ্চিত পরাজয় জানা প্রার্থীর পক্ষে লড়াই করার চেয়ে কায়সার হাসনাতের পাশে এসে দাড়ানোটাই হবে তাদের জন্য শ্রেয়।
সোমবার প্রতীক বরাদ্ধের পর সোনারগাঁয়ের নেতাকর্মীরা বলেছেন, সোনারগাঁয়ে বাঘের হাতেই সিংহ মার্কা। এ আসনে অন্তত ১০ জনের বেশি মনোনয়ন প্রত্যাশি মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু তারা সোনারগাঁও আওয়ামীলীগকে বাঁচাতে একাট্টা হননি। এখানে আনাড়ি ধাচের মনোনয়ন প্রত্যাশিদের ছড়াছড়ির কারনে আসনটিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আনা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এখন সোনারগাঁয়ে আওয়ামীলীগের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে সিংহ মার্কায় ভোট দেয়া ছাড়া আওয়ামীলীগের কোন পথ খোলা নেই। মহাজোটের প্রার্থীকে নিয়েও ধানের শীষ প্রতীকের সঙ্গে লড়াই করার মত অবস্থানও নেই। ফলে কায়সার হাসনাতকে নিয়েই চিন্তা ভাবনা করছেন নেতাকর্মীরা। এছাড়াও ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ব্যক্তি হিসেবেও দূর্বল। বৃহত দল বিএনপির কারনে মুলত কায়সার হাসনাতের সঙ্গে তার লড়াইটাই দেখছেন তারা।
তবে এ আসনে ভোটের হিসেবে রয়েছে নানান হিসেবে নিকেশ। যেখানে বিএনপির প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নানের বিপক্ষে রয়েছেন এ আসনের সাবেক এমপি রেজাউল করিম ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু জাফর। এই দুইজন নেতা পুরোদমে মান্নানের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে না থাকলে মান্নানের জয়ের সম্ভাবনা কম। যদিও খন্দকার আবু জাফর এখানে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পেলেও তিনি মনোনয়ন পত্র দাখিলই করেননি। তিনি মান্নানের মনোনয়নের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এখানে রেজাউল করিমের বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। যার বেশির ভাগ ভোট চলে যাবে কায়সার হাসনাতের বাক্সে। কারন কায়সার যখন এমপি ছিলেন ওই সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতনের মাত্রা কমই ছিল।
এখানে আওয়ামীলীগের একটি অংশ কায়সার হাসনাতের সঙ্গে দূরত্ব রয়েছে এবং এমপি খোকা হলেন মহাজোটের প্রার্থী। সেই হিসেবে খোকার পক্ষেও থাকবে আওয়ামীলীগের একটি অংশ। তবে সেই ভোট জয়ের জন্য যথেষ্ট নয়। তিন প্রার্থীর মধ্যে কায়সার হাসনাতই সবচেয়ে বেশি এ আসনে জনপ্রিয়। নির্বাচনের হলফনামা থেকেও জানাগেল, শিক্ষাগত দিক থেকে কায়সার হাসনাত বিএসএস পাস আর বাকীরা কেউই প্রাইমেরী স্কুলের গন্ডি পেরুতে পারেননি। কায়সার হাসনাতের চাচা মোশারফ হোসেনও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করলেও তিনি আপীল করেও বৈধতা পাননি। তবে তিনি সোমবার কায়সার হাসনাতের পক্ষেই মাঠে নেমেছেন। তিনি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও গত নির্বাচনে তিনি আওয়ামীলীগের মনোনয়নও পেয়েছিলেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এ আসনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পান উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগ তার মহাজোটের শরীক দল জাতীয়পার্টিকে এ আসনটি ছেড়ে দিলে মোশারফ হোসেন মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেন। মোশারফ হোসেন কায়সার হাসনাতের আপন চাচা। ওই নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় এমপি নির্বাচিত হন লিয়াকত হোসেন খোকা। এর আগে সোনারগাঁয়ে কারো কাছেই এমপি খোকা পরিচিত ছিলেন না। সোনারগাঁয়ে জাতীয় পার্টির হাল ধরেছিলেন এরশাদের পালিত মেয়ে অনন্যা হুসেইন মৌসুমী।