সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে বেশ প্রভাবশালী সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ও মাহফুজুর রহমান কালাম। কিন্তু উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক কমিটিতে রাখা হয়নি তাদেরকেই। কায়সার হাসনাত জাতীয় নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কালামও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। এবার কায়সার ও কালাম উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। দুজনই দাবি করেছেন এই কমিটির কোন বৈধতা নেই। এটি অবৈধ কমিটি। একই সঙ্গে এই কমিটির নেতাদের অবাঞ্চিত ঘোষণা করে তাদের প্রতিহতের ঘোষণাও দিয়েছেন। পৃথকভাবে দুটি অনুষ্ঠানে আওয়ামীলীগের এই দুই নেতা এমনটাই নেতাকর্মীদের জানিয়েছেন।
জানাগেছে, গত ৩০ জুলাই জেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক এম এ রাসেল স্বাক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে ৮ সদস্যের সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক কমিটি গঠন ঘোষণা করা হয়। এরপর সোনারগাঁ আওয়ামীলীগ, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ ও সকল সহযোগী সংগঠন কমিটিকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের গঠনতন্ত্র বিরোধী ঘোষণা করে প্রতিবাদ সভা করেছেন।
২ আগস্ট শুক্রবার জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সোনারগাঁ আওয়ামীলীগ, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ ও সকল সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে নবগঠিত সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগ আহবায়ক কমিটির বিরুদ্ধে মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে এ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়।
এ প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন- নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। তিনি সোনারগাঁ আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের সকলকে হুশিয়ার করে বলেন, গঠনতন্ত্র বিরোধী অবৈধ আহ্বায়ক কমিটির কাউকে কোন এলাকায় কোন সভা সমাবেশ, সংগঠনের কার্যাবলী পালন করতে দেয়া যাবে না। তারা যেখানেই দাঁড়াবে সেখানে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ মোশারফ হোসেন। সভায় তিনি বলেন, গঠনতন্ত্র বিরোধী এ অবৈধ আহ্বায়ক কমিটিকে মেনে নেওয়া হবে না। আমি এই অবৈধ কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সহ সকলকে আহবান জানাচ্ছি যে আপনারা সোনারগাঁয়ে ১০ ইউনিয়ন ও পৌরসভার আওয়ামীলীগের তৃণমূল নেত্রীবৃন্দর সাথে বসুন এবং গঠনতন্ত্র মোতাবেক একটি কমিটি করুন। অন্যথায় সোনারগাঁ আওয়ামীলীগ আপনাদের এই অবৈধ আহ্বায়ক কমিটিকে সোনারগাঁয়ের কোথায়ও কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেওয়া হবেনা।
এদিকে বিশেষ অতিথি মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবু বলেন, নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটিতে যে আমাকে সদস্য রাখা হয়েছে, তা আমি প্রত্যাখ্যান করিলাম, সোনারগাঁ আওয়ামীলীগকে ধ্বংস করতে এ ধরণের আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। অতিসত্তর তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে নতুন করে আওয়ামীলীগের কমিটি করার জন্য আহবান জানান।
প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন- সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কোহিনুর ইসলাম রুমা, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি গাজী মজিবুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবকলীগ সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম রবিন, সোনারগাঁও উপজেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. গোলজার হোসেন ভূঁইয়া, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রজন্ম লীগ সভাপতি আরমান মেরাজ ও মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক সজিব প্রমুখ।
অন্যদিকে এর একদিন পর ৩ আগস্ট শনিবার এক অনুষ্ঠানে কঠোর বক্তব্য রেখেছেন মাহফুজুর রহমান কালাম। সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের ব্যানারে জাতির জনকের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলার উদ্ববগঞ্জ এলাকায় আওয়ামীলীগের সহযোগী সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম। তিনি কমিটির বিষয়ে বলেন, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের কোনো আহ্বায়ক কমিটি গঠন হয়নি। এটা নিছক একটি গুজব। এটার সত্যতা কেউ দিতে পারবেনা, তাই এ কমিটি সম্পূর্ণ অবৈধ।
তিনি নেতাকর্মীদের জানান, আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী ও সাধাণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের স্বাক্ষর ছাড়া একটি কমিটি অনুমোদন হয় কিভাবে আমার জানা নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের গঠনতন্ত্র কি বলে জেনে নেন। কমিটি করতে হলে সম্মেলন করতে হবে। আমি কালাম কোনো পদের জন্য রাজনীতি করিনা। তবে যোগ্য লোকজনকে নিয়েই কমিটি গঠন করতে হবে।
তিনি বলেন, এই আহ্বায়ক কমিটি সম্পূর্ণ অবৈধ ও ভোগাজ কমিটি। জেলা কমিটির কোনো এখতিয়ার নেই উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করার। যারা ভাবেন রাজাকারের বংশধর ও জীবনে রাজনীতি করেনি তাদের দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ পরিচালিত হবে, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগ এতটা দেউলিয়া হয়ে যায়নি। তৃণমূলের নেতৃবৃন্দদেরকে নিয়ে আগামী দিনে সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। এছাড়া যারা এ ভূয়া আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করা হবে বলেও হুশিয়ারী করে দেন।
উক্ত আলোচনা সভায় সোনারগাঁ পৌরসভা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী আমজাদ হোসেনের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য দেন- উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান আহাম্মেদ বাদশা, সনমান্দী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ইসহাক মিয়া, জেলা পরিষদের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম, জেলা যুব আইনজীবি পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এটি ফজলে রাব্বী, সনমান্দী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন সাবু, বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরিষদের সহ-সভাপতি করিম আহাম্মেদ, সোনারগাঁ পৌরসভা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাসেল মাহামুদ, উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা মোতালেব মিয়া, সোনারগাঁ পৌরসভা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান রবিন ও সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার খান সাজু প্রমূখ।
এখানে উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক জানান, গত ১৩জুলাই অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভায় প্রতিটি উপজেলা ও থানা এলাকায় দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতিশীলতা বৃদ্ধি করতে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে প্রস্তাবনা উঠে এবং সকলের সম্মতিক্রমে উপজেলা আওয়ামীলীগের নতুন কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়। সভায় সকলের মতামতের ভিত্তিতে সংগঠনের বৃহত্তর স্বার্থে ১৫ জুলাই সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান কমিটি বিলুপ্তি করে অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়াকে আহ্বায়ক ও ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমকে যুগ্ম-আহবায়ক করে ৮ সদস্যের একটি আহবায়ক কমিটির লিখিত প্রস্তাবনা নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ বরাবর প্রেরণ করা হয়।
নতুন এ কমিটিতে সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া, পিরোজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম ছাড়াও রয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু, জেলা আওয়ামীলীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এস এম জাহাঙ্গীর, মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবু, সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বাবু ওমর, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার ফেন্সী ও সামসুদ্দিন খান আবু।