দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে মহা সংকটে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির চারটি রাজনৈতিক পরিবার। এতে উত্তরসূরীদের কেউ কেউ দাড়ানোর সম্ভাবনা থাকলেও সেখানেও রয়েছে সংশয়। তবে নারায়ণগঞ্জে বিএনপিতে পারিবারিক রাজনীতিতের অবসান হতেও যাচ্ছে সেটাও অনুমেয়। তবে চারটি পরিবারই ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করছেন এবং করবেন সেটাও বুঝা যায়। তবে বিএনপির রাজনীতিতে চারটি পরিবারই রয়েছে বিশাল অবদান। কিন্তু এবারের নির্বাচনে চারটি পরিবারই হোচট খেল।
অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা। তার আপন ভাই মহানগর যুবদলের সভাপতি কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। দুই ভাই জেলার দুটি আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। প্রাথমিকভাবে ধানের শীষ প্রতীকে দুজনই মনোনয়ন পেলেও চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন পাননি দুুজনই। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে বিগত ১০টি বছরের আন্দোলন সংগ্রামে বিএনপিতে এই দুই ভাইয়ের ভুমিকা সবচেয়ে বেশি। দুজনই জেল খেটেছেন। তৈমূর আলম খন্দকার জেলা বিএনপির সভাপতি ও সেক্রেটারি পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি নারায়ণগঞ্জ-১(রূপগঞ্জ) আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এখানে মনোনয়ন পান জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান। এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনে প্রাথমিকভাবে মনোনিত হন মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। চূড়ান্তভাবে এখানে মনোনিত হন নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এসএম আকরাম। ফলে শহর কেন্দ্রীক রাজনীতিতে সামনে ঘুরে দাড়াতেও খোরশেদের জন্য কঠিন হয়ে ওঠবে। এছাড়াও তৈমূর আলম খন্দকারের বয়সের কারনেও হয়তো আগামী ৫ বছর পর নির্বাচন হলে সেখানে নির্বাচন করার মত শারীরিক সামর্থ নাও থাকতে পারে। ফলে খন্দকার পরিবারটি বিএনপির রাজনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা খেল।
অ্যাডভোকেট আবুল কালাম। তিনি বিএনপির সাবেক তিন বারের এমপি। রয়েছেন মহানগর বিএনপির সভাপতি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন আবুল কালামের পিতা হাজী জালালউদ্দীন। সেই থেকে এই পরিবারটি জালাল হাজীর পরিবার হিসেবেই চিনেন নেতাকর্মীরা। তিনি নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছিলেন। প্রাথমিক তালিকায় তিনি মনোনিত হলেও চূড়ান্তভাবে এখানে নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এসএম আকরামকে মনোনিত করা হয়। আবুল কালামের ছেলে মহানগর স্বেচ্ছসেবক দলের সভাপতি আবুল কাউসার আশা। আবুল কালাম ও আশা দুজনেই জেল খেটেছেন। আবুল কালামেরও শারীরিক পরিস্থিতি তেমন শক্তিশালী নয়। তিনি অসুস্থ্য। আগামী ৫ বছর পর তিনিও নির্বাচনে ফিট থাকবেন কিনা সন্দেহ রয়েছে। আবুল কাউসার আশাও তেমনভাবে গড়ে ওঠতে পারেননি। ফলে এই পরিবারটিও রাজনীতিতে হোচট খেল।
মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন। তিনি বিএনপির সাবেক এমপি। কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য। তিনি নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তিনি প্রাথমিকভাবেও মনোনিত হননি। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করলেও শেষ পর্যায়ে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। তার ছেলে গোলাম মুহাম্মদ কাউসারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। তার মনোনয়ন পত্র বাতিল হলে তিনি আপীলও করেননি। গিয়াসউদ্দীনের আরেক ছেলে গোলাম মুহাম্মদ সাদরিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে রয়েছেন। গিয়াস ও তার ছেলেই বিভিন্ন মামলায় আসামী হয়েছেন। একসময় মনে করা হতো এ আসনে গিয়াস উদ্দীন শক্তিশালী প্রার্থী। কিন্তু এ আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মনির হোসাইন কাসেমীকে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন দেয়া হয়। ফলে গিয়াসের পরিবারটিও বিএনপির রাজনীতিতে হোচট খেল।
প্রয়াত এএম বদরুজ্জামান খান খসরু। যার মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বিএনপি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি হয়। নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস পূবে কেন্দ্রীয় বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক খসরু মৃত্যুবরণ করেন। তিনি উপজেলা বিএনপির সভাপতি পদেও ছিলেন। তার মৃত্যুর পর নির্বাচনী মাঠে নামেন খসরুর ছেলে মাহমুদুর রহমান সুমন। খসরুর মৃত্যুর পর মাহমুদুর রহমান সুমনকে আড়াইহাজার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পদে দায়িত্ব দেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। তিনি ইতিমধ্যে মামলার শিকারও হয়েছেন। এ আসনে সুমনের চাচা বিএনপির সাবেক এমপি আতাউর রহমান খান আঙ্গুুরও মনোনয়ন পাননি। চাচা ভাতিজার মনোনয়ন লড়াইয়ের মাঝে মনোনয়ন পান কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। আঙ্গুরকে একটি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ থেকে বিএনপিতে যোগদান করিয়ে বিএনপির মনোনয়ন দেন খসরু। পরবর্তীতে খসরুর সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হলে আঙ্গুর ও খসরুর মাঝে দূরত্ব বাড়ে। ফলে আড়াইহাজারে বিএনপির রাজনৈতিক এই পরিবারটিও হোচট খেল। এখানে আজাদ এমপি হলে এই পরিবারটির অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।