সান নারায়ণঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
রাজপথের সক্রিয় রাজনীতিতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সেক্রেটারি এটিএম কামাল। তিনি দাবি করেছেন- দীর্ঘদিন রাজনীতি করায় তার পরিবারের দিকে তিনি নজর দিতে পারেননি। তাই তিনি এখন পরিবারের প্রতি নজর দিতে চান। একই সঙ্গে তিনি আরও দাবি করেছেন- তার শারীরিক অবস্থাও আগের মত নয় যে কারাভোগ করবেন। এসব কারন ছাড়াও তিনি নানা কারনে তৃতীয় বারের মত মহানগর বিএনপির সেক্রেটারির মত দায়িত্বশীল পদে থেকে আমেরিকা চলে গেছেন। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে উদ্দেশ্য করে লিখতে গিয়ে এটিএম কামাল তার ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেন। যেখানে তিনি তার বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন।
জানাগেছে, সম্প্রতি মিডিয়াতে সংবাদ প্রকাশিত হয় এটিএম কামালকে হটানোর চেষ্টা করছেন সাখাওয়াত হোসেন খান। ওই সংবাদটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই এটিএম কামাল তার ফেসবুকে শেয়ার করেন। যেখানে সাখাওয়াত হোসেন খানও একটি মন্তব্য লিখেন। সেই মন্তব্যের প্রতিত্তুরে ২১ আগস্ট বুধবার সূদুর আমেরিকায় নির্বাসনে থেকে এটিএম তার ফেসবুকে পোস্টটি দেন।
এটিএম কামাল লিখেন, ‘সাখাওয়াত হোসেন খান ও শুভ কামনা এবং আমার পরিবারের প্রতি আপনার সহমর্মিতার জন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা ভাই। আমি কিন্তু বলিনি আপনি আমাকে হটাতে চান। এটা একটা পোর্টালের প্রতিবেদন। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি ও তার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে ড্যামেজ করে অনেক নিউজ আপনার ওয়ালে আমি দেখেছি, যা আপনি শেয়ার করেছিলেন এবং সেগুলোও আমাকে মর্মাহত করছিল। বার বার আপনাকে অনুরোধ করা সত্বেও মহানগর বিএনপির জৌষ্ঠ সহ-সভাপতি হয়ে সবার সাথে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেননি। উল্টো মহানগর বিএনপির ব্যানারে আলাদাভাবে অনুষ্ঠান করেছেন যা দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী।’
সাখাওয়াতকে উদ্দেশ্য করে এটিএম কামাল আরও লিখেন, ‘কোন কারনে যদি আপনার মনে হয় এই কমিটি স্বীয় দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ তাহলে আপনি কেন্দ্রে অভিযোগ করতে পারেন কিন্তু সংগঠনের ব্যানারকে এভাবে আলাদা করা কতটুকু নৈতিক হয়েছে ভেবে দেখবেন। আমরা কখনোই আপনাকে বাদ দিতে চাইনি, আপনি নিজেই নিজেকে আলাদা করেছেন বারবার, যা আপনার বিভক্ত কর্মকান্ডে প্রমানিত।’
‘ব্যক্তিগতভাবে আমি ও আমার পরিবার আপনার কাছে ঋনী। গত এক যুগে নয়বার গ্রেপ্তার হয়েছি, অসংখ্যবার রাজপথে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। বিভিন্ন মেয়াদে প্রায় সাড়ে তিন বছর কারাগারে ছিলাম। বিশেষ করে শেষবারে যখন প্রায় আট মাস আমি কারাবন্দী, সে সময় আমার জামিনের জন্যে আপনি বারবার চেষ্টা করেও পারছিলেন না। তখন আমার স্ত্রী আপনার চেম্বারে গিয়ে আপনার হাতে একটি খাম দিয়েছিল হাইকোর্ট থেকে বেইল করানোর জন্য, আপনি তা বিনয়ের সাথে ফেরৎ দিয়ে বলেছিলেন, কামাল ভাই আমার ভাই, তার জন্য আপনার চিন্তা করতে হবেনা, যা কিছু করতে হয় আমিই করবো, আপনি আপনার কথা রেখেছিলেন, আপনি স্ব-উদ্যোগে হাইকোর্ট থেকে আমার জামিন করিয়েছিলেন। আমি ও আমার পরিবার সব সময়ই আপনি সহ আদালতে যারা আমাকে আইনি সহযোগীতা দিয়ে দুঃসময়ে পাশে দাড়িয়েছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।’
সাখাওয়াততে কামাল লিখেন, ‘আমরাও আপনার পরিবারের শুভকামনা করি, আমৃত্যু আল্লাহর নিকট আপনাদের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করবো। ভালো থাকবেন ভাই। তবে শেষে একটি কথা বলছি, দলের স্বার্থে ভেবে দেখবেন, নেত্রী কারাগারে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্বাসিত, দলের এখন চরম দুঃসময়, এখন ঐক্যবদ্ধ্য থাকার বিকল্প নেই। আপনি কি বলবেন আমি নিজেইতো কেন্দ্রে একাধিকবার জানিয়েছি।’
এটিএম কামাল সক্রিয় রাজনীতিতে অপরাগতা প্রকাশ করে বলেন, ‘ডজন ডজন মামলায় আমি পরিবারিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত, দীর্ঘদিন কারাবাস ও বেশ কয়েকবার রাজপথে পৈশাচিক নির্যাতনে দিনের পর দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েও সম্পূর্ণ সুস্থ্য হতে পারছিনা। পুলিশী নির্যাতনের ক্ষত মাথা থেকে পা পর্যন্ত বয়ে চলছি, যন্ত্রনায় রাতে ঘুম হয়না, ভাঙ্গা শরীর নিয়ে রাজপথে বা কারাগারে থাকার যোগ্যতাও আর আগের মত নেই। যুদ্ধের ময়দানে আহত সৈনিকরাতো সবার বোঝাই হয়ে যায়। দল ও পরিবারের বোঝা হতে চাইনা। তাই চলে এসেছি। দলের স্বার্থে যদি আমাকে বাদ দিতে হয় দিন।’
এটিএম কামাল লিখেন, ‘আমাকে একবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেছিল সম্মেলনের মাধ্যমে তৃনমূল কর্মীরা। মহানগরের সাধারণ সম্পাদক করেছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আজ পরিবেশ পরিস্থিতি আমাকে বাধ্য করছে এই সেচ্ছা নির্বাসনে। আজ এ কারনে দলের সর্বোচ্চ পর্যায় অনেক দায়িত্বশীল নেতাই প্রবাসে অবস্থান করছেন। স্থায়ীভাবে থাকতে এখানে আসিনি প্রয়োজনে এসেছি। সময় সুযোগ মত ঠিকই ফিরে আসবো। তবে দলের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছি। দলের স্বার্থে জীবনকে তুচ্ছ করেছি। পদতো সেখানে কোন মানেই রাখেনা। তবে তোষামোদ বা কারোর করুনায় কিছু চাইনা, এর চেয়ে চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়।’
এটিএম কামাল ও সাখাওয়াত হোসেন খানের ছবি সহ ওই সংবাদটি এটিএম কামাল তার ফেসবুকে শেয়ার করার সাখাওয়াত হোসেন খান সেখানে এটিএম কামালকে উদ্দেশ্য করে মন্তব্য করেন- ‘ভাই আমি সব সময় আপনার ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও রাজনৈতিক সফলতা কামনাই করি। ভবিষ্যতেও করব ইনশাল্লাহ। ভাই আমি আপনাকে হটাতে যাব কেন? আমিতো মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদ চাইনি, আমি কেন্দ্র অথবা নারায়ণগঞ্জে কারো নিকট ইচ্ছাও পোষণ করিনি। উপরন্ত মহনগর বিএনপির ২৩ জনের আংশিক কমিটিতে আমাকে ১নং সহ-সভাপতি কেন্দ্র থেকে দেওয়া হলেও আপনি ও সভাপতি মিলে কেন্দ্রে যে মহানগর পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিয়েছেন সেখানে তো আমার নামই বাদ দিয়ে জমা দিয়েছেন। তাহলে আমি কিভাবে কাকে হটাতে গেলাম?’