সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, আমরা নারায়ণগঞ্জে রাজনীতি করার জন্য আসি নাই, দল করার জন্য আসি নাই। নারায়ণগঞ্জে আমরা যে সকল সন্ত্রাসী ভূমিদস্যূ চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তার করছি তারা হয়তো কারো ভাই বা কারো লোক হতে পারে। আমরা তাদেরকে গ্রেপ্তার করছি। এতে কারো মন খারাপ হতে পারে কিন্তু আমাদের অভিযান চলবেই। আমরা সেবার মানসিকতা নিয়েই কাজ করছি। আমরা কোন গ্রুপিং কিংবা দলবাজীতে নাই।
১ সেপ্টেম্বর রবিবার দুপুরে নারায়ণগহ্জ রাইফেল ক্লাবে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুুলিশের ‘ই-ট্রাফিকিং’ সেবা চালুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিভাগীয় রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান।
এর আগের দিন ৩১ আগস্ট শনিবার বিকেলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ খানপুর ৩’শ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের সামনের মাঠে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের আয়োজিত দোয়া মাহফিল ও আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শামীম ওসমান বলেছিলেন, এখন দেখি সবাই আওয়ামীলীগ হয়ে গেছে। পুলিশ ডাক্তার সবাই এখন আওয়ামীলীগ হয়ে গেছে। যে কারনে আওয়ামীলীগের আসল ত্যাগী নেতাকর্মীরা পিছিয়ে যাচ্ছে।’ এ কারনে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মত ঘটনা এখনও ঘটতে পারে। কারন এখন দেশে ষড়যন্ত্র চলছে।
শামীম ওসমান আরও বলেছিলেন, এখন সবাইকে মুক্তিযোদ্ধা মনে করলে সমস্যা, সবাইকে আওয়ামীলীগার মনে করলে সমস্যা। অমুক্তিযোদ্ধাদের ধাক্কায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা চলে যায়। এখন চরম দুশ্চরিত্র দুর্নীতিবাজরাও দুর্নীতি মুক্ত করার কথা বলছে। সিমটম ভাল না।’
এখানে উল্লেখ্যযে, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের সঙ্গে তার সম্পর্কের টানাপোড়ন রয়েছে। ইতিমধ্যে শামীম ওসমানের অন্তত শতাধিক নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শামীম ওসমানের আপন শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটুর বিরুদ্ধেও একটি মামলায় মাদক ব্যবসায়ীর কথা উল্লেখ করে পুুলিশ। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বেশকজন কাউন্সিলরকেও মাদক ও ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তার করেছে পুুলিশ। শামীম ওসমান তাদের ছাড়াতে এসপি অফিসে গেলেও পুলিশ তার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আদালতে পাঠান। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামীলীগের পরিবারকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ফতুল্লার বাংলা ভবনে প্রতিবাদ সভাও করেছিলেন শামীম ওসমান। যেখানে এসপি হারুনের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীরা শ্লোগান দিয়েছিলেন।
এর তিন দিন পর এসপি অফিসে যান শামীম ওসমানের আরেক ভাই জাতীয়পার্টির এমপি একেএম সেলিম ওসমান। ওইদিন এক মতবিনিময় সভায় এসপি হারুন সেলিম ওসমানকে সাফ জানিয়ে দেন, কোন মাদক ব্যবসায়ী, জুয়ারী, সন্ত্রাসী, ভূমিদস্যূকে গ্রেপ্তারের পর যদি দেখা যায় লোকটি আপনাদের তাহলে কোন সমস্যা নেই। আপনারা আদালত থেকে জামিন করিয়ে নিবেন কেউ জানবে না। আমরা গ্রেপ্তার করবো অ্যাস পার ল’ আপনারা জামিন করিয়ে নিবেন।’ শামীম ওসমানের এমন বক্তব্যের শনিবার রাতেই শামীম ওসমানের একমাত্র ছেলে অয়ন ওসমানের স্ত্রীর বড় ভাই ভিকিকে গ্রেপ্তার করে পুুলিশ। একজন সিএনজি চালককে মারধরের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হলে ১ সেপ্টেম্বর রবিবার আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান ভিকি।
এদিকে রবিবারের অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জের সকল অন্যায়কে রুখে দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ-এমনটাই মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিভাগীয় রেঞ্জের জিআইজি হাবিবুর রহমান। তিনি বলেছেন, ফুটপাত দখলমুক্ত করা, ভূমিদস্যূ সহ সকল অন্যায়কে রুখে দিয়েছে এসপি হারুন। সেই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের প্রশাসনও সমান তালে কাজ করছে।
তিনি বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে অন্যায় মেনে নেয়া হবে না। যেকোন অবস্থায় যে কোন জায়গায় নারায়ণগঞ্জের চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত ডিআইজি আসাদুজ্জামান, শিল্প পুুলিশ-৪ এর পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক জসিমউদ্দীন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাই, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত জামিল, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান মাসুম, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ এর সভাপতি খালিদ হায়দার খান কাজল, নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন, নূরে আলম, সুবাশ সাহা ও জেলা পুুলিশের ডিআইও-২ সাজ্জাদ রোমন প্রমূখ।