দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজারে এখন আওয়ামীলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা রয়েছেন বাড়ি ছাড়া। প্রাণ বাচাঁনোর ভয়ে তারা এখন আত্মগোপনে চলে গেছেন। জানাগেছে, স্থানীয় আওয়ামীলীগের এমপির ভয়ে নির্যাতনের আতংকে এখন বাড়ি ছাড়া আওয়ামীলীগের এসব নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে যেসব নেতাকর্মী নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল পারভেজের মনোনয়নের দাবিতে কাজ করে আসছিলেন। স্থানীয় এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছে এখন ইকবাল পারভেজের লোকজন যারা আড়াইহাজার থেকে গাঁঢাকা দিয়েছেন। যার মধ্যে অন্যতম হলেন হত্যাকান্ডের শিকার পুলিশ কনেস্টবল রুবেল আহমেদ সুমনের বাবা কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি রূপ মিয়া মেম্বার ও তার পরিবারের লোকজন। তারা এলাকায় থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কারন এ এলাকায় বীরদর্পে ফিরেছেন সুমন হত্যা মামলার আসামী সাইফুল ইসলাম স্বপন যাকে এমপি বাবুর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে আড়াইহাজারবাসী দাবি করেছেন।
আড়াইহাজারের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, দুই বছর পূর্বে পুলিশ কনেস্টবল রুবেল আহমেদ সুমনকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করে এমপি বাবুর ঘনিষ্ঠজন কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম স্বপন ও তার বাহিনী। সুমন হত্যাকান্ডের মামলায় স্বপনকে আসামীও করা হয়। বেশকজন আসামী গ্রেপ্তারও হয়। নিহত সুমনের বাবা আওয়ামীলীগ নেতা রূপ মিয়া মেম্বার ও নিহতের ভাই কামাল হোসেন এখন এলাকা ছাড়া। কারন দীর্ঘদিন সাইফুল ইসলাম স্বপন আত্মগোপনে থাকলেও এখন এলাকায় ফিরেছেন। এমপি বাবু তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণও করেছেন।
এদিকে কয়েক বছর নারায়ণগঞ্জ-২(আড়াইহাজার) আসন থেকে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশা নিয়ে কাজ করে আসছিলেন ইকবাল পারভেজ। বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। ইকবাল পারভেজের পক্ষে মাঠে নেমেছিলেন সাবেক এমপি এমদাদুল হক ভুইয়া, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান বাচ্চু, আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মুজাহিদুর রহমান হেলো সরকার, আওয়ামীলীগ নেতা রূপ মিয়া মেম্বার ও ছাত্রলীগ নেতা রুবেল সরকার সহ আওয়ামীলীগের এমপির কাছ থেকে অপমানিত বঞ্চিত নির্যাতিত নেতাকর্মীরা। ইতিমধ্যে কয়েক মাস আগে রুবেল সরকারকে একটি মামলায় আসামী করা হয়েছে।
এছাড়াও নেতাকর্মীরা বলছেন, ইকবাল পারভেজের অনুগামী ৮ জন নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মামলায় পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। ফলে যেসব নেতাকর্মীরা এমপি বাবুর বিরোধীতা করে ইকবাল পারভেজের পক্ষে মাঠে নেমেছিলেন ওইসব নেতাকর্মীরা এখন বাবুর আতংকে রয়েছে। নেতাকর্মীরা বলছেন- আড়াইহাজারে এমপি বাবু আবারো এমপি নির্বাচিত হলে বাবুর বিরোধীতাকারী নেতাকর্মীরা নির্যাতনের শিকার হবেন। যার নজির ইতিমধ্যে দেখাও গেল। তারা বলেন, এমপি বাবু বিরোধী মত কখনই সহ্য করতে পারেন না। তিনি সমালোচনাও সহ্য করতে পারেননা। আবারো এখানে বাবু এমপি নির্বাচিত হলে বিএনপির চেয়ে ইকবাল পারভেজের লোকজনই বেশি নির্যাতিত হবেন। ইতিমধ্যে ইকবাল পারভেজের অনুগামী কিছু নেতাকর্মী অনেকটা বাবুর কাছে ক্ষমা চেয়ে বাবুর বলয়ে ভীড়েছেন। আবার কেউ কেউ ভয়ে আতংকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
নেতাকর্মীরাও আরও জানিয়েছেন- ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু। তিনি মাঠ পর্যায়ের আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের নানা ধরনের অপমান অসম্মান করে আসছিলেন। ওই সময় থেকেই স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার দুরত্ব সৃষ্টি হয়। কিন্তু কেউ মুখ খুলে প্রতিবাদ করার সাহস দেখায়নি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নজরুল ইসলাম বাবু বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় এমপি নির্বাচিত হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশা নিয়ে মাঠ গুছিয়েছিলেন ইকবাল পারভেজ। কিন্তু শেষতক এখানে আবারো নজরুল ইসলাম বাবুকে মনোনিত করে আওয়ামীলীগ। এ আসনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন নজরুল ইসলাম আজাদ। ইতিমধ্যে প্রায় প্রতিদিনই আজাদের নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা করে আসছে বাবুর লোকজন। প্রতিটি এলাকায় ঘরে ঘরে এমপি বাবুর লোকজন গিয়ে তালিকা হয়েছে বলে হুমকি ধমকি ভয় ভীতি দেখাচ্ছে বলেও বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেছেন। তবে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির ভয়ে নয় আওয়ামীলীগের এমপি ও ঘনিষ্ঠ লোকজনদের ভয়ে বাড়ি ছাড়া।