সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের হোসিয়ারী শিল্পে শিশু শ্রম বন্ধ এবং এ শিল্পের কারখানাগুলোকে নারায়ণগঞ্জ শহরের অলিগলি থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে বৃহৎ আকারে রূপ দেওয়া এবং পণ্য রপ্তানি করার ব্যাপারে প্রয়োজন ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতা ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান।
একই সঙ্গে তিনি নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীদের কোন প্রকার হয়রানি না করার জন্য নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। সমস্যা থাকলে তা সমাধানে সিটি কর্পোরেশনকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার আহবান রেখেছেন তিনি। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে তিনি সব ধরণের সহযোগীতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।
৩ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রুটের ফতুল্লার সস্তাপুর এলাকায় অবস্থিত নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল পার্কে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির উদ্যোগে ৯টি জাতীয় ভিত্তিক ও ৩৫টি জেলা ভিত্তিক ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নীট গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বিকেএমইএ পরিচালনা পর্ষদ(২০১৯-২০২১) নির্বাচনে টানা পঞ্চম বারের মত সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় এমপি সেলিম ওসমান ও পর্ষদের নেতৃবৃন্দদের উক্ত সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি সেলিম ওসমান বলেন, আমি যেটা পারিনি আপনারা সেটা পেরেছেন। আপনারা আমাকে এতো ভালবাসেন এর থেকে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে। আমাদের নারায়ণগঞ্জ বাণিজ্যিক নগরী হিসেবে সারাদেশে পরিচিত। দেশের মোট বৈদেশিক আয়ের ৩৫ শতাংশ এই নারায়ণগঞ্জের নীট শিল্প থেকে হয়ে থাকে। আগের হোসিয়ারীগুলো এই বিকেএমইএ এর মাধ্যমে বৃহৎ আকার নিয়ে নীটওয়্যারে পরিণত হয়েছে। একটা সময় আমাদের নীটওয়্যার কারখানা গুলোতে শিশু শ্রমিক দেখা যেত। কিন্তু বিকেএমইএ এর মাধ্যমে এটা শূন্যের কোটায় নামিয়ে এনেছি। কিন্তু হোসিয়ারী গুলোতে এখনো শিশু শ্রমিক উল্লেখ যোগ্য হারে রয়ে গেছে। এটা ঠিক করতে হবে। শিশু শ্রম বন্ধ করতে হবে। তাদের লেখাপড়ায় মনোযোগী করতে হবে। তাদেরকে একটা উজ্জল ভবিষ্যতের পথ তৈরি করে দিতে হবে। আমি ভবিষ্যত প্রজন্মকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করি।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক আমরা যখন নারায়ণগঞ্জে বিকেএমইএ এর নিজস্ব ভবন বানাতে যাচ্ছি তখন সিটি কর্পোরেশন একটি মামলা করে দেওয়া হলো রাজউকের বিরুদ্ধে সামনের অল্প কিছু জায়গা নিয়ে। আমরা বিকেএমইএ থেকে ৩ কোটি ইনভেস্ট করে বসে আছি। আমাদের টাকা ব্যাংকে পড়ে আছে ভবনের কাজ করতে পারছি। ইচ্ছে করলে ওই ৪ শতাংশ জমি বাদ দিয়ে মামলা করা যেতো। এতে করে ভবনের কাজটি করা যেত। বিকেএমইএ দেশের অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখার কাজ করে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিকে বাধাগ্রস্থ করা হয়েছে বলে আমি মনে করি।
এমপি বলেন, নারায়ণগঞ্চ শহরের উকিলপাড়া আর নয়ামাটিতে হোসিয়ারী কারখানা গুলো রয়েছে। হোসিয়ারী শিল্পের জন্য বিসিকে জাগায় দেওয়া হলেও সেটা এখন নীটওয়্যারে পরিণত হয়েছে। শহরের অলিগলি গুলো থেকে হোসিয়ারী গুলোকে বেরিয়ে আসতে হবে। এ ব্যাপারে অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। দরকার পড়লে আমরা নীটপল্লীর মত প্রধানমন্ত্রীর কাছে হোসিয়ারী পল্লীর জন্য জায়গা চাইবো। তাহলে দেখা যাবে একটা সময় শহরে যানজট বলে কিছু থাকবে না।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগের বরাদ দিয়ে তিনি বলেন, অনেকে অভিযোগ করেন ব্যবসা করতে গেলে যে ট্রেড লাইন্সেন প্রয়োজন হয় সেটার পরিমান দুই থেকে তিন গুন করা হয়েছে। বাড়ি ওয়ালার ট্যাক্স ক্লিয়ার না থাকলে ট্রেড লাইসেন্স রিনিউ করে দেওয়া হয় না। এমন নানা ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
সিটি কর্পোরেশনকে বলেন, আমি সিটি কর্পোরেশনের কাছে অনুরোধ রাখবো এসব সমস্যা দূর করেন। সমস্যা থাকলে ব্যবসায়ীদের সাথে বসে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করেন। প্রয়োজনে আমরা সব ধরনের সহযোগীতা করবো। খামাখা আমার ব্যবসায়ীদের হয়রানী করবেন না। আমরা ব্যবসায়ীরা সাদা পতাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে হরতাল বাতিল করেছি। প্রয়োজন আবারো লাল পতাকা নিয়ে রাস্তায় নামবো। তবে হ্যা আমাদের ব্যবসায়ীর কারনে মাঝে মাঝে সমস্যার সৃষ্টি হয়। রাস্তার পাশে গাড়ি রেখে মালামাল লোড আনলোড করা হয়, রাস্তা পাশে বাস পার্কি করে রাখা হয়। কিন্তু আমরা তো নিরুপায়। এসবের জন্য আমাদের নিদিষ্ট জায়গা করে দেন। নিতাইগঞ্জ ট্রাক স্ট্যান্ড ও নারায়ণগঞ্জ বাস স্ট্যান্ডের ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আমাকে দায়িত্ব দিয়ে ছিলেন। আমি সবাইকে সাথে নিয়ে সেই দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করার চেষ্টা করেছি। দীর্ঘ দিন সব কিছু শৃঙ্খলার মধ্যেই থেকেছে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন কথা রাখেনি, সেখানে পর্যাপ্ত আলোর সরবরাহ করা, আলাদা জায়গার ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু তা করে দেওয়া হয়নি।
তিনি আরো বলেন, সিটি কর্পোরেশনের যেমন তাঁর এলাকার ব্যবসায়ীদের সহযোগীতা করা প্রয়োজন। তেমনি প্রতিটি ব্যবসায়ীর উচিত সিটি কর্পোরেশনের কাজের সহযোগীতা করা। নয়তো দেখা যাবে শহরে চলাচলের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। আবার যারা অন্যত্র থেকে এসে নারায়ণগঞ্জে ব্যবসা পরিচালনা করছেন তাদেরও উচিত এই শহরের কথা চিন্তা করা।
খানপুর ৫০০ শয্যা হাসপাতালের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি অনেক পরিশ্রম করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কাছ থেকে নারায়ণগঞ্জবাসীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে খানপুর হাসপাতালকে ৫০০ শয্যা এবং মেডিকেল কলেজে রূপান্তরিত করতে প্রায় ৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ এনেছিলাম। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে কাজ শুরু হয়ে ছিল। আজকে একটি অনলাইন পত্রিকায় দেখলাম আমার নারায়ণগঞ্জ বাসীর হাসপাতাল ক্যাসিনো ব্যবসায়ীর ফাদে আটকে গেছে। আমি সাংবাদিক ভাইদের প্রতি অনুরোধ রাখবো আপনারা এই বিষয়টি আরো গুরুত্ব সহকারে প্রচার করেন। যাতে বিষয়টি উপর মহল পর্যন্ত পৌছায়। একজন ক্যাসিনো ব্যবসায়ীর জন্য নারায়ণগঞ্জের মানুষ বঞ্চিত হতে পারেনা। অনেক ব্যবসায়ী নেতা এখন জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন। তাই এখন অনেক অসাধু রাজনীতিবিদ ব্যবসায়ী হতে চাচ্ছেন। রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হতে চাইছেন। এতে করে তারা জুয়া, টেন্ডারবাজি, দুর্নীতি সহ সব ধরনের অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে স্যালুট জানাই উনি দুর্নীতি বিরোধী যে সাহসী অভিযান শুরু করেছেন এবং এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে আমি প্রত্যাশা রাখছি।
নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল এর সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনে সাবেক নারী সদস্য অ্যাডভোকেট হোসনে আরা বেগম বাবলী, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন, এফবিসিসিআই এর সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি মোহাম্মদ আলী, পরিচালক প্রবীর কুমার সাহা, বিকেএমইএ এর সহ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, গহর সিরাজ জামিল, অমল পোদ্দার সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা।