দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী একেএম শামীম ওসমান ১৬ ডিসেম্বর রবিবার সোনারগাঁয়ের এক অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনের ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নানের কথাবার্তা ও তার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কটাক্ষ ও তিরস্কার করে বক্তব্য রেখেছেন। তবে শামীম ওসমান যে মঞ্চে ওঠে যেই মহাজোটের প্রার্থী লিয়াকত হোসেন খোকার জন্য ভোট প্রার্থনা করেছিলেন সেই এমপি খোকাও কিন্তু পাঁচ ক্লাস পাস। তবে এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা ও আজহারুল ইসলাম মান্নান দুজনেই তাদের নির্বাচনের হলফনামায় দাবি করেছেন তারা স্বশিক্ষিত অর্থাৎ খাটি বাংলায় বলা যায় তারা মূর্খ। যদিও স্বশিক্ষিতদের সাধারণ মানুষ আবার ধরে নেন তারা প্রাইমেরী স্কুলের গন্ডি পেড়িয়েছিলেন। যে কারনে তাদেরকে সাধারণ ভোটাররা তিরস্কার করে বলছেন তারা পাঁচ ক্লাস পাস।
শামীম ওসমানের ওই বক্তেব্যর সোনারগাঁয়ের নেতাকর্মীরা ফেসবুকে তোলপাড় শুরু করেন। কারন হিসেবে নেতাকর্মীরা বলছেন- শামীম ওসমান যে প্রার্থীর প্রসংশা করে মান্নানকে নিয়ে তিরস্কার করেছেন সেই প্রার্থীর কথাবার্তা প্রায় মান্নানের মতই এবং শিক্ষাগত যোগ্যতাও মান্নান ও খোকা সমানে সমান পাঁচ ক্লাস পাস। ফলে শামীম ওসমানের এমন দেড় নজরের বক্তব্য সোনারগাঁয়ের মানুষের মাঝে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে। একজন স্বশিক্ষিত প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রার্থনা করে আরেকজন স্বশিক্ষিত প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে শামীম ওসমানের এমন বক্তব্য হাস্যকর। কিন্তু এ আসনে ৮জন প্রার্থীর মধ্যে একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত বিএসএস পাস কিন্তু বাকিরা সবাই স্বশিক্ষিত।
১৬ ডিসেম্বর সোনারগাঁও মোগড়াপাড়া এলাকায় আওয়ামীলীগের বিজয় র্যালী ও আলোচনা সভার প্রধান অতিথি একেএম শামীম ওসমান তার বক্তব্যে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নানকে নিয়ে বলেছিলেন, বিএনপির অপজিশন প্রার্থী হচ্ছে মান্নান। সেও আমারে মানে। আমি তাকে দুশমন ভাবিনা। মান্নানের বুঝা উচিত এটা তো জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন না। জাতীয় সংসদে মানুষ যায় আইন পাশ করার জন্য। আইন পাস করতে হলে ওখানে বাংলা ইংরেজী অনেক লেখা থাকে, পড়তে হয়। আমরা এলএলবি পাস করেও পড়তে পারিনা। এখন আইন সভায় যাবো, আইন সভায় যাইয়া আমি যদি পড়তেই না পাড়ি তাহলে আইন সভায় যাইয়া করবটা কি? রাজনীতি কোন জায়গায় চলে যাচ্ছে। বিএনপি এতই অসহায় হয়ে গেছে, আমাদের শ্রদ্ধেয় মুরুব্বী রেজাউল করিম ভাই, উনাকে যদি বিএনপি মনোয়ন দিতো তাহলে আমি ভাবতাম ঠিক আছে। একজন যোগ্য মানুষকে মনোনয়ন দিয়েছে। যে লেখাপড়া জানে, যার পিছনে জ্ঞান বুদ্ধি আছে। আমি মান্নানকে ছোট করে দেখছিনা। জাতীয় সংসদে কথা বলতে গেলে কিছুটা যোগ্যতা লাগে। পার্লামেন্টে কথা বলতে গেলে প্রথমে তো লিখতে হবে পার্লামেন্ট। মেম্বার অব পার্লামেন্ট লিখতেও তো কষ্ট হয় অনেকের।’
তবে পরক্ষণেই আবার আজহারুল ইসলাম মান্নানকে রীতিমত হংকার দিয়ে শামীম ওসমান বলেছেন, মান্নানকে সাহেবকে নিয়ে বলতে চাই, নির্বাচন করছেন, নির্বাচন করেন কোন আপত্তি নাই। ভোট দিলে পাস করবেন। কিন্তু আমি যা শুনি সেগুলো যদি হয়, যদি মনে করেন অন্য পথ ধরবেন, তাহলে আমি বলে যাচ্ছি দশ বছর আমরা বহু অত্যাচারিত হয়েছি। বাড়ি ঘরে হামলা হয়েছে। আমাদের বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। আমার বাড়ি থেকে আরম্ভ করে আওয়ামীলীগের এমন কোন বাড়ি নাই যেখানে হামলা করা হয়নি। চন্দনশীলের পা নাই, ২০ জন মানুষ হারিয়েছি। মনে করিয়ে দিয়েন না। দশ বছর ক্ষমতায় আছি বিএনপির কোন নেতার গায়ে একটি ফুলের টোক্কাও দেই নাই। যদি মনে করেন এটা দূর্বলতা, তাহলে পরিষ্কারভাবে বলে যাই এটা আমাদের দুর্বলতা না। আমরা ক্ষমা করেছি। কিন্তু কেউ যদি এবার অন্য কোন পথ অবলম্বন করেন, যদি চিন্তা করেন জ্বালাও পোড়াও করবেন, ২৪ তারিখের মধ্যে ঘটনা ঘটানো হবে, ২৪ তারিখের আগেই দেশে কিছু ঘটনা ঘটানো হবে।
শামীম ওসমান বলেন, ওরা নির্বাচন করতে চায়না, ওরা নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কোথায় কি হয় জানিনা। নারায়ণগঞ্জে কিছু হতে দেয়া হবে না। সোনারগাঁয়ের মান্নান সাহেব আপনাকে আামি চিনি, আপনার দৌড় কতটুকু আমি জানি। আমি আপনাকে পরিস্কারভাবে বলতে চাই সাবধান, একদম সাবধান। এখানে কোন খেলা খেলবেন না। ওই জায়গা থাকবে না কিন্তু, মা কইয়া গো কইতে সুযোগ দিমুনা। পরিস্কার কইয়া দিলাম। কোন ছাড় হবে না। কারন লড়াইটাই হচ্ছে স্বাধীনতার পক্ষে বিপক্ষে লড়াই।
এসব বক্তব্যের আগে নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী একেএম শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনে গিয়ে এ আসনের মহাজোটের প্রার্থী লিয়াকত হোসেন খানের লাঙ্গল প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেছেন।
১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে রবিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় আওয়ামীলীগ কার্যালয়ের সামনে বিজয় র্যালী ও আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন শামীম ওসমান। তবে তিনি এর আগেও গত ১৪ ডিসেম্বর শামীম ওসমান তার বড় ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনের এমপি একেএম সেলিম ওসমানের পক্ষে বন্দরের সমরক্ষেত্র মাঠে গিয়ে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেন তিনি।
বিএনপি নির্বাচনে হামলার নাটক সাজাচ্ছে বলে মন্তব্য করে শামীম ওসমান বলেন, নাটক করতে করতে এক সময় যদি আমরা বুঝি আপনারা নাটক করছেন। তখন বলবো এরা এমনেও নাটক করে ওমনেও নাটক করে, তখন আমরা যদি ধরি, একবার যদি ধরা শুরু হয় বাংলাদেশে থাকা কিন্তু আপনাদের থাকা সম্ভব হবেনা। নাটক কইরেন না। জনগণের ভোটে পাস করেন আপত্তি নাই। কিন্তু কোন ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না। এই নির্বাচন খোকার নির্বাচন না, কসম করে বলছি এই নির্বাচন স্বাধীনতার পক্ষে বিপক্ষে নির্বাচন। দেশটাকে বাঁচানোর নির্বাচন। নতুবা এই দেশ আফগানিস্তান হয়ে যাবে, জঙ্গীবাদের দেশ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, বিএনপি নেতা খন্দকার মোশারফ হোসেন পাকিস্তানের আইএসআইয়ের সঙ্গে কথা বলছে। আমরা কি এখণও চুপ করে থাকবো? আমি থাকবো কিনা জানিনা। আমাকে প্রতি মুহুর্তে আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছে। ২০০১ সালের ১৬ জুন আমাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমার চোখে আমি মৃত। আমার জীবন নিয়ে চিন্তা নাই। এই লড়াই দেশ বাচাঁনোর লড়াই।
একেএম শামীম ওসমান জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন সম্পর্কে বলেন, নির্বাচনে কার বিরুদ্ধে ভোট চাইবো। আজকে যাদেরকে নিয়ে নির্বাচন করছে তারা কারা? আজকে বিএনপির সঙ্গে জামাত শিবির। আমাদের শরীরের রক্ত কি পানি হয়ে গেছে? পৃথিবীর কোন রাষ্ট্রে নাই রাজাকার নির্বাচন করছে। আমি অবাক হই বাংলাদেশে যখন তারা রাজনীতি করেন। কাদের নেতৃত্বে? এতদিন করেছে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে, এখন করছে ওই বর্ণচোরা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে। যারা রাজনীতি করে আজকে বেশ্যায় পরিনত হয়েছে। এরা পলিটিক্যাল প্রস্টিটিউট। এরা এদেশের মানুষকে লজ্জা দিচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ভোট চাইতে আমার লজ্জা লাগে।
শামীম ওসমান বলেন, সোনারগাঁয়ের খবর জানি। ৩০ তারিখে বিজয় মিছিলের প্রস্তুতি নেন ইনশাহআল্লাহ। লাঙ্গল পাস করবে। আমার নির্বাচন থুইয়া আমি এখানে আসছি কেন? আমার প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী খুইজ্জা পায়না মানুষ। দিছে কোন যোগ্য লোক, একজন দিয়েছে। আমি নির্বাচন গত ৫ বছর ধইরা করছি। চিন্তা কইরেন না আমি বলিনা যে, আমি সোনারগাঁয়ে ৮টার সময় আসবো। তবে নির্বাচনের দিন সকাল ১০টার সময় শামীম ওসমান সোনারগাঁয়ে থাববে এবং রেজাল্ট নিইে আমরা যাবো ইনশাহআল্লাহ।
এ সময় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও মহাজোটের মনোনিত প্রার্থী লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়ণগঞ্জের সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট হোসনে আরা বেগম বাবলী, আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, চন্দন শীল, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু, মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, নারায়ণগঞ্জ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট এসএম ওয়াজেদ আলী খোকন, কেন্দ্রীয় মহিলা লীগ নেত্রী ডা. সেলিনা আক্তার, নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট নূর জাহান প্রমুখ।
এতে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামের সঞ্চালনা সভাপতিত্ব করেন সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূইয়া।
এছাড়াও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সোনরগাঁও পৌর মেয়র সাদেকুর রহমান, সনমান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদ হাসান জিন্নাহ, জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হা-মীম শিকদার শিপলু, শম্ভপুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ, কাচপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ ওমর, পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম প্রমুখ। এর আগে সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে যোগদান করেন আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টির বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।