ডাকাতে আড়াইহাজার, ভূমিদস্যূতায় রূপগঞ্জ, মাদকে ভাসছে সোনারগাঁ!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

আবারো ডাকাতে আলোচনায় নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলা। নারায়ণগঞ্জের পুলিশের কঠোর অভিযানের পরেও পুলিশের তদন্ত কেন্দ্রের ২০/২৫ গজ সামনেই তিনটি স্বর্ণের দোকানে হলো দূর্ধর্ষ ডাকাতি। আড়াইহাজার পূর্ব থেকেই ডাকাত খ্যাত এলাকা। জেলার রূপগঞ্জ এলাকায় সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিদস্যূতা। সোনারগাঁয়ের অলিগলি এখন হয়ে ওঠছে মাদকের হাট বাজার। যদিও মাদকের ছড়াছড়ি কম বেশি তিনটি এলাকাতেই। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুুলিশের মুল দৃষ্টি যখন শহর কেন্দ্রীক তখন জেলার ওই তিনটি এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুব স্বাভাবিক সেটা বলা যাচ্ছেনা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলা পুুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ নিয়মিত মাদক সন্ত্রাস চাঁদাবাজ ভূমিদস্যূদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আসছেন। নিয়মিত ব্লক রেইড কিংবা বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তারও হচ্ছে ডজন ডজন আসামি অপরাধী। কিন্তু জেলার সবচেয়ে বেশি ভূমিদস্যূদের প্রভাব রূপগঞ্জে। সেখানে এ পর্যন্ত কতজন ভূমিদস্যূকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা নিয়ে বিরাট প্রশ্ন। একইভাবে জেলার ডাকাত খ্যাত এলাকা আড়াইহাজার। সেখানে কিছুদিন পূর্বে বেশকজন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হলেও উল্ল্যেখ করার মত নয় তা আবারো স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির ঘটনা প্রমাণ করেছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বেশি মাদকের ছড়াছড়ি সোনারগাঁয়ে। কিন্তু এই সোনারগাঁও থানা পুুলিশ মাদক সেবনকারী দুচার পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করতে পারলেও উপজেলার দশটি ইউনিয়ন ও একটি পৌর এলাকার প্রায় প্রতিটি এলাকায় মাদকের স্পট তৈরি হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের কঠোর দৃষ্টি থেকে ওই তিনটি থানা এলাকা রয়েছে বাহিরে। যে কারনে ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, সদর ও বন্দরে পুলিশের কঠোর অভিযান দেখা গেলেও বাকি তিনটি থানায় তেমন জোগালো ব্লক রেইড কিংবা বিশেষ অভিযানে উল্লেখ্যযোগ্য গ্রেপ্তার দেখা যায়নি।

রূপগঞ্জের স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রূপগঞ্জে একাধিক আবাসন ব্যবসায়ীরা মানুষের ফসলি জমি ভিটে মাটি দখল করে বালু ভরাট করে আসছে বছর বছর ধরে। এসব বিষয়ে একাধিকবার নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত আবেদন করেও কোন ফল হয়নি। এমনকি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গিয়েছিলেন ভুক্তভোগীরা। এর আগে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট এপিলেট ডিভিশনের আইনজীবী তৈমূর আলম খন্দকার রূপগঞ্জের অসহায় সাধারণ মানুষের জমি রক্ষার্থে নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় মানববন্ধনও করেছিলেন। ডিসি এসপির কাছেও অভিযোগ দিয়েছিলেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছেও গিয়েছিলেন। তাতেও যখন কাজ হয়নি তখন গেলেন হাইকোর্টে। হাইকোর্ট জেলা প্রশাসকের জবাব চান। কিন্তু পরবর্তীতে কি হয়েছে তা জানা না গেলেও ভুমিদস্যূতা বালু দিয়ে জমি ভরাটের কাজ ঠিকিই চালিয়ে আসছেন। এর আগেও একাধিকবার রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার মানুষ জমি দখলের অভিযোগ তুলেছিলেন। এসপি ভূমিদস্যূদের বিরুদ্ধে নিয়মিত জোড়ালো অবস্থানের কথা জানালেও রূপগঞ্জে এ পর্যন্ত কতজন ভূমিদস্যূকে গ্রেপ্তার করেছেন তা নিয়ে বিরাট প্রশ্ন।

অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বেশি ডাকাতির আনাগানো আড়াইহাজারে। সোনারগাঁও ও আড়াইহাজার বর্ডারের কাছাকাছি হওয়ায় আড়াইহাজার থেকে ডাকাত সোনারগাঁয়ে প্রবেশ করে সেখানেও ডাকাতি করে আসছিল। আড়াইহাজার এলাকাটিই ডাকাত কবলিত এলাকা। কিন্তু সেখানে এ পর্যন্ত কতজন ডাকাত গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা নিয়েও বিরাট প্রশ্ন। দুচারজন ছিচকে ডাকাত গ্রেপ্তার করা হলেও ডাকাত সর্দারদের এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। অনেক ডাকাত সর্দার রাজনীতির লেবাসেও প্রকাশ্যে ঘুরছেন। আড়াইহাজারে ডাকাতের প্রভাব আগের মতই রয়েছে সেটা প্রমাণিত হয়েছে যখন পুলিশের তদন্ত কেন্দ্র থেকে মাত্র ২০/২৫ গজ দুরে স্বর্ণের দোকানে দূর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

এদিকে জেলার সোনারগাঁও উপজেলার দশটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রতিটি এলাকায়তেই মাদকের স্পট তৈরি হয়েছে। ১৫/১৬ বছরের ছেলেদের হাতেও এখন মাদক ওঠেছে। এদের কিছু রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়। আবার কিছু মাদক ব্যবসায়ীরা দম্ভের সাথেই বলে বেড়ায় পুলিশের সাথে তাদের রয়েছে সখ্যতা। কক্সবাজার টেকনাফ হয়ে ব্রাক্ষনবাড়িয়া কুমিল্লা বর্ডার দিয়ে সোনারগাঁয়ের পিরোজপুর ইউনিয়ন দিয়ে মাদক প্রবেশ করছে সোনারগাঁয়ে। যেখানে প্রধান পয়েন্ট হিসেবে কাজ করছে মেঘনা নদীর বিভিন্ন ঘাটগুলো। পুুলিশের তল্লাষি টোল প্লাজায় থাকলেও টোল প্লাজা থেকে কতজন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ তা নিয়েও বিরাট প্রশ্ন, তখন মাদক অনাহাসে সোনারগাঁয়ে সেখান দিয়ে প্রবেশ করছে।

এ ছাড়াও বারদি ইউনিয়ন, কাচপুর ইউনিয়ন, পিরোজপুর ইউনিয়ন, সাদিপুর ইউনিয়ন ও সোনারগাঁও পৌরসভার প্রায় প্রতিটি এলাকার অলিগলিতে প্রকাশ্যেই মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক ব্যবসা করে আসছে। এর আগে সোনারগাঁও থানা পুলিশ কয়েকশত মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা প্রকাশ করলেও সেখান থেকে কতজন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে পুুলিশ সেটা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সোনারগাঁ থানায় যেসব পুলিশ কর্মকর্তা দীর্ঘদিন যাবত কর্মরত রয়েছেন তাদের সঙ্গে অনেক মাদক ব্যবসায়ীর সখ্যতাও রয়েছে বলেও অভিযোগ এলাকাবাসীর।

কারন হিসেবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সোনারগাঁয়ে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর তালিকায় ছিল গিট্টু হৃদয়। কিন্তু তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এমনকি প্রকাশ্যে দিবালোকে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলেকে কুপিয়ে লোমহর্ষক জখম করলেও হৃদয়কে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুুলিশ। পরবর্তীতে গিট্টু হৃদয় র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। কিন্তু এর আগে হৃদয় প্রকাশ্যে ঘুরলেও তাকে পুুলিশ গ্রেপ্তার করেনি। গিট্টু হৃদয়ের মত প্রায় অর্ধশত মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে সোনারগাঁয়ে যাদের নিয়ন্ত্রনে মাদক ব্যবসা। জেলার সবচেয়ে বেশি মাদক ব্যবসায়ীদের প্রভাব এখন সোনারগাঁয়ে। কিন্তু গ্রেপ্তার ততটা নয়।